আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটি তরুণ নক্ষত্র যেটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪৪০ আলোকবর্ষ দূরে বৃশ্চিক নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত, তার চারপাশে ধূলিকণা ও গ্যাসের এক বিশাল ঘূর্ণিবর্ত দেখা গেছে। এই কণামেঘের ভেতরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমন সর্পিল নকশা আবিষ্কার করেছেন, যা অধিকাংশ তত্ত্ব অনুযায়ী কোনো এক নবগঠিত গ্রহের মহাকর্ষীয় আকর্ষণেই তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি-এর ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া নতুন চিত্রে, সেই সর্পিল নকশার গোড়াতেই একটি উজ্জ্বল ও ক্ষুদ্র বস্তু দেখা গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি একটি নবীন গ্রহ, যা এখনো তার চারপাশের গ্যাস ও ধূলি টেনে নিয়ে নিজের ভর বৃদ্ধি করছে।
বহু গবেষক বছরের পর বছর ধরে এমন এক দৃশ্যের খোঁজ করেছেন, কিন্তু সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারণ, একটি গঠিত গ্রহ তার নক্ষত্রের তুলনায় অনেক ছোট ও ম্লান, আর চারপাশের ধূলিকণার পর্দা সেটিকে আরও আড়াল করে রাখে। তবে এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যেন সেই পর্দা সরিয়ে ফেলতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের খেলা শুরু, প্রথম ধাক্কা এল ক্রিপ্টোকারেন্সিতে
ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরেন্স-এর প্রধান গবেষক ফ্রান্সেস্কো মাইও বলেন, “আমরা পৃথিবীর জন্ম প্রক্রিয়া কখনোই দেখতে পারব না, কিন্তু এই নক্ষত্রের চারপাশে আমরা হয়তো একটি নতুন গ্রহের জন্ম প্রক্রিয়া সরাসরি প্রত্যক্ষ করছি।”
গবেষক দলটি ERIS নামের সর্বাধুনিক ইনফ্রারেড ইমেজার ও স্পেকট্রোগ্রাফ ব্যবহার করে HD 135344B-এর অভ্যন্তরীণ ডিস্কে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ চালায়। তারা দেখতে পান, সন্দেহভাজন গ্রহটি নক্ষত্র থেকে প্রায় ২.৮ বিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থান করছে—যা সূর্য থেকে নেপচুনের দূরত্বের সমান।
এর আগে ২০১৮ সালে SPHERE যন্ত্রের তোলা ছবিতে এই নক্ষত্রের চারপাশে সর্পিল নকশাগুলো প্রথম দেখা গিয়েছিল। জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অনুযায়ী, এই সর্পিল রেখার গোড়াতেই থাকা উচিত ছিল একটি অদৃশ্য গ্রহের, যা তুষার-পরিষ্কার যন্ত্রের মতো চারপাশের ধূলিকণাকে ঠেলে সরিয়ে রেখে সর্পিল কাঠামো তৈরি করে। এবার ERIS সেই স্থানে একটি উজ্জ্বল বিন্দু শনাক্ত করেছে, যা সম্ভবত সেই লুকানো প্রোটোপ্ল্যানেটেরই আলোকরশ্মি।
মাইও, যিনি বর্তমানে ইতালির আর্কেত্রি অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল অবজারভেটরি-তে কর্মরত, বলেন, “এই পর্যবেক্ষণটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ, আগের অনেক গবেষণার বিপরীতে এবার আমরা সরাসরি সেই প্রোটোপ্ল্যানেটের নিজস্ব আলো শনাক্ত করতে পেরেছি, যা এখনো ধূলির ভেতর গভীরে লুকিয়ে আছে।”
এটি বিজ্ঞানীদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে তুলেছে যে, HD 135344B-এর চারপাশে সত্যিই একটি নতুন গ্রহ গঠিত হচ্ছে—একটি পৃথিবীর মতো জগৎ, যা এখনও তার জন্মের প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে।
একই ERIS যন্ত্র ব্যবহার করে গবেষকরা আরেকটি তারকাকেও পর্যবেক্ষণ করেছেন। ২০১৪ সালে এই তারকাটি হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, যা বিজ্ঞানীদের অবাক করেছিল। এমন তারকাগুলোকেই বলা হয় FU Orionis objects—যাদের উজ্জ্বলতা আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়, কারণ বিপুল পরিমাণ গ্যাস হঠাৎ নক্ষত্রের ওপর পড়ে শক্তি মুক্ত করে।
আগের SPHERE ও ALMA পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, V960 Mon-এর চারপাশের ডিস্কে একাধিক সর্পিল গঠন ও ঘন গ্যাসীয় অঞ্চল রয়েছে, যা মহাকর্ষীয় অস্থিতিশীলতার ফল। এই প্রক্রিয়ায় ডিস্কের কোনো অংশ নিজের ওজনে ভেঙে পড়তে পারে, যার ফলে গঠিত হয় ব্রাউন ডোয়ার্ফ বা বৃহৎ গ্যাসীয় গ্রহ—যেমন জুপিটার বা স্যাটার্ন। এই নতুন পর্যবেক্ষণ প্রমাণ করছে, আমরা কেবল মহাকাশে নতুন গ্রহের জন্মই দেখছি না—আমরা আসলে সৃষ্টি প্রক্রিয়ার এক জীবন্ত মুহূর্তের সাক্ষী হচ্ছি।
