আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিউ ইয়র্ক শহরের রাস্তায় আবারও গর্জে উঠল প্যালেস্তাইনের প্রতি সংহতির স্লোগান। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে (UNGA) ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন মাত্র কয়েক ব্লক দূরেই হাজার হাজার মানুষ তাঁকে যুদ্ধাপরাধের জন্য গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে মিছিল করেন। প্রথমে টাইমস স্কোয়ারে বিভিন্ন প্রো-প্যালেস্তাইন ও যুদ্ধবিরোধী সংগঠনের নেতাদের ভাষণ শোনেন বিক্ষোভকারীরা। পরে বিশাল মিছিলটি পশ্চিমমুখে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
প্যালেস্তাইনি ইয়ুথ মুভমেন্টের সংগঠক নিদা লাফি বলেন, “নেতানিয়াহু এখন জাতিসংঘে বসে গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলছে। খালি কক্ষে সে বক্তব্য দিচ্ছে। যেখানে যাবে, সেখানেই সে খালি কক্ষ আর নীরব প্রতিবাদের মুখোমুখি হবে।” তথ্য অনুযায়ী, ৫০টিরও বেশি দেশের শতাধিক কূটনীতিক নেতানিয়াহুর ভাষণ চলাকালীন সময়ে সভা থেকে বেরিয়ে আসেন। তবুও তিনি ঘোষণা করেন, গাজায় “কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত” অভিযান চলবে।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে “পাগলামি”—এমনকি তিনি একে তুলনা করেন “৯/১১ হামলার পর নিউ ইয়র্কের এক মাইল দূরে আল-কায়েদাকে রাষ্ট্র দেওয়ার” সঙ্গে। উল্লেখ্য, বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৫৭টিই ইতিমধ্যেই প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
অভূতপূর্ব পদক্ষেপে ইজরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় নেতানিয়াহুর ভাষণ লাউডস্পিকারের মাধ্যমে সম্প্রচার করে। আরও বিস্ময়করভাবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর দাবি করেছে, ইজরায়েলি সেনারা নাকি গাজার নাগরিকদের এবং হামাসের সদস্যদের মোবাইল ফোন “দখল করে” ভাষণটি সম্প্রচার করেছে—যদিও এর কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: প্যালেস্টাইনকে একযোগে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ব্রিটেন-কানাডা-অস্ট্রেলিয়া! বিশ্ব রাজনীতিতে বড় মোড়
প্যালেস্তাইনি ইয়ুথ মুভমেন্টের নাদিয়া তান্নুস বলেন, “এখন স্পষ্ট যে প্যালেস্তাইনি জনগণের স্বার্থ আর আমেরিকান শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ একই। আমরা চাই আমাদের করের টাকা যুদ্ধাস্ত্র কেনায় নয়, বরং স্বাস্থ্য, শিক্ষা আর শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য ব্যয় হোক।” যুক্তরাষ্ট্রের অটো ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সদস্য নবরুজ বলেন, “আমাদের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা। ইউরোপের শ্রমিক সংগঠনগুলো বন্দর বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছে। আমরাও আমাদের কর্মস্থলে সংগঠিত হবো, যাতে এই গণহত্যা থামানো যায়।”
হাজারো মানুষের মিছিল যখন জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পৌঁছায়, তখন তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। কয়েকদিন আগেই তিনি জাতিসংঘে গাজায় ইজরায়েলি নৃশংসতার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণে পেত্রো বলেন, “গাজায় যা ঘটছে তা একেবারেই গণহত্যা। এর অন্য কোনো নাম নেই—এটি প্যালেস্তাইনি জনগণকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা।” তিনি মার্কিন জনগণকে আহ্বান জানান, “ট্রাম্পের নির্দেশ নয়, মানবতার নির্দেশ মেনে চলুন।”
পেত্রোর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কিংবদন্তি ব্যান্ড ‘পিঙ্ক ফ্লয়েড’-এর সংগীতশিল্পী ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী রজার ওয়াটার্স। জাতিসংঘের ভেতরে নেতানিয়াহুর একঘরে অবস্থা আর বাইরে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ—দুই চিত্রই একে অপরকে প্রতিফলিত করেছে। গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি বিশ্বজুড়ে শ্রমিক ও সাধারণ মানুষও ক্রমেই জোরদারভাবে সংহতির মঞ্চে একত্রিত হচ্ছেন।
