আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন প্রশাসনের ভিসা ফি নিয়ে নয়া ঘোষণার পর, নিজেদের এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিল মাইক্রোসফট, জেপি মরগ্যান এবং অ্যামাজন। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, একাধিক আইটি সংস্থা মার্কিন মুলুকে তাদের কর্মীদের বিশেষ চিঠি পাঠিয়েছে। অ্যামাজনের তরফে কর্মীদের এক অভ্যন্তরীণ চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, সমস্ত এইচ-১বি এবং এইচ-৪ ভিসাধারী কর্মীদের ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার (ইস্টার্ন টাইম) মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে হবে। সেদিনই কার্যকর হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ। উল্লেখ্য, এইচ-৪ ভিসাধারীরা হচ্ছেন এইচ-১বি ভিসাধারী ব্যক্তিদের স্বামী/স্ত্রী এবং অবিবাহিত সন্তানরা। অন্যদিকে, মাইক্রোসফট তাদের কর্মীদের ই-মেল পাঠিয়ে তাতে জানিয়েছে, এইচ-১বি  ভিসাধারীরা যেন ‘অদূর ভবিষ্যৎ’ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই থাকেন।

একই সঙ্গে, এইচ-৪ ভিসাধারীদেরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, রবিবার সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই সমস্ত এইচ-১বি এবং এইচ-৪ ভিসাধারী কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে হবে। জেপি মরগ্যানের কর্মীদের পাঠানো এক ই-মেইলে বলা হয়েছে, ‘যারা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রেই থাকুন এবং সরকার নতুন ভ্রমণ নির্দেশিকা না দেওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন।’ ই-মেইলটি পাঠিয়েছে ওগলট্রি ডিকিনস, যারা মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাঙ্কটির জন্য ভিসা আবেদন সংক্রান্ত কাজ করে। উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী সংস্থা হিসেবে উঠে এল টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (TCS)। ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে অ্যামাজনের পরেই রয়েছে এই ভারতীয় আইটি জায়ান্ট।

মার্কিন নাগরিকত্ব ও ইমিগ্রেশন পরিষেবার তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অ্যামাজনের কর্মরত ১০,০৪৪ জনের জন্য এইচ-১বি ভিসা অনুমোদিত হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা টিসিএস পেয়েছে ৫,৫০৫ ভিসা। শীর্ষ সুবিধাভোগীদের মধ্যে আরও রয়েছে মাইক্রোসফট (৫১৮৯), মেটা (৫১২৩), অ্যাপল (৪২০২), গুগল (৪১৮১), ডেলয়েট (২৩৫৩), ইনফোসিস (২০০৪), উইপ্রো (১৫২৩) এবং টেক মাহিন্দ্রা আমেরিকাস (৯৫১)। এমন পরিস্থিতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন একটি বড় ঘোষণা করেছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ভারতীয় আইটি ও পেশাদার কর্মীদের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। নতুন নিয়মে প্রতি এইচ-১বি ভিসার জন্য বার্ষিক ১ লক্ষ মার্কিন ডলার ফি ধার্য করা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, এর মাধ্যমে ভিসা প্রোগ্রামের ‘অপব্যবহার’ রোধ করা হবে।

গত জুলাই মাসে জানানো হয়েছিল যে, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত ৬৫,০০০ নিয়মিত এইচ-১বি ভিসা ও ২০,০০০ ‘মাস্টার্স ক্যাপ’ কোটা পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি প্রোক্লেমেশনে স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকরী এই নির্দেশ অনুসারে, যে কোনও এইচ-১বি ভিসার আবেদনের সঙ্গে বা পরিপূরক হিসেবে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার ফি না থাকলে সেই কর্মীদের প্রবেশ সীমিত করা হবে। এটি কার্যকর থাকবে ১২ মাস, যদি না মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রোক্লেমেশনে আরও বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ক্ষেত্রে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গিয়েছে।  ১.২ মিলিয়ন থেকে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২.৫ মিলিয়নে।

অথচ একই সময়ে STEM চাকরির সামগ্রিক বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪৪.৫ শতাংশ। কম্পিউটার ও গণিত বিষয়ক পেশায় বিদেশি কর্মীর অংশীদারিত্ব ২০০০ সালে ১৭.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে দাঁড়িয়েছে ২৬.১ শতাংশে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এর প্রধান কারণ হল এইচ-১বি ভিসার অপব্যবহার। প্রোক্লেমেশনে আরও অভিযোগ করা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি ব্যাপকভাবে এইচ-১বি ব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে, যার ফলে মার্কিন কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০০৩ অর্থবছরে যেখানে আইটি কর্মীরা এইচ-১বি ভিসার ৩২ শতাংশ ব্যবহার করত, সেখানে গত পাঁচ অর্থবছরে সেই গড় দাঁড়িয়েছে ৬৫ শতাংশেরও বেশি। পাশাপাশি, এইচ-১বি ভিসার অন্যতম বৃহৎ ব্যবহারকারী সংস্থাগুলি ধারাবাহিকভাবে আইটি আউটসোর্সিং কোম্পানি হয়ে উঠেছে।