আজকাল ওয়েবডেস্ক: অভয়া আন্দোলনের নামে হইচই তুললেও, বাস্তবে গুরুতর যৌন হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে ধরা পড়লেন তথাকথিত বামপন্থী চিকিৎসক অমল বোস। অক্সফোর্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় ঢুকে যাঁরা গোলমালের চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম এই চিকিৎসককেই সম্প্রতি যৌন কেলেঙ্কারির মামলায় জেলে পাঠাল ব্রিটেনের আদালত।

৫৫ বছর বয়সী অমল বোস ল্যাঙ্কাশায়ারের ব্ল্যাকপুল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ছিলেন। কিন্তু ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তিনি একাধিকবার মহিলা সহকর্মীদের যৌন হেনস্তা করেন বলে প্রমাণ মেলে। অবশেষে ২০২৩ সালে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা গড়ায়।

প্রিস্টন ক্রাউন কোর্টে শুনানিতে উঠে আসে, অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতির সময় এক নার্সকে তিনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন। অন্য এক মহিলা সহকর্মীর অভিযোগ, কলম খোঁজার অজুহাতে তিনি তাঁর পকেটে হাত ঢুকিয়ে বুকে হাত দেন এবং অশালীন মন্তব্য করেন। এভাবে অন্তত পাঁচজনকে তিনি হয়রানির শিকার করেছেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর মার্চ  লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজে বৃহস্পতিবার বক্তৃতা দিচ্ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হঠাৎ কিছু ছাত্র-ছাত্রী প্ল্যাকার্ড নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর বক্তব্যে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা ভোট-পরবর্তী হিংসা ও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তোলে।

আরও পড়ুন:  নার্সের ট্রাউজার নামানো হাঁটুর নিচে, চিকিৎসক ব্যস্ত... অপারেশন থিয়েটারে যৌনতায় লিপ্ত চিকিৎসককে ফের পুনর্বহাল!

মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু শান্তভাবে পরিস্থিতি সামলান। তিনি প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশে বলেন, “আমার রাজ্যে গিয়ে শক্তি বাড়ান, তারপর লড়াই করুন।” তাঁর জবাব শুনে সভায় উপস্থিত অতিথিরা হাততালি দেন। শেষ পর্যন্ত দর্শক ও আয়োজকদের চাপেই প্রতিবাদকারীরা হল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরপর নির্বিঘ্নে নিজের বক্তব্য শেষ করেন। এই ঘটনায় প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক ও প্রাক্তন বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মমতার কাছে ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হাসিমুখে জানান, “এতে আমার আরও এখানে আসতে ইচ্ছে করছে। মনে রাখবেন, দিদি কারও তোয়াক্কা করে না, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো হাঁটে। যদি পারো, আমাকে ধরো।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত নারী, শিশু ও প্রান্তিক মানুষের উন্নয়ন বিষয়ে বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রিত ছিলেন। তিনি নিজের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন ‘কন্যাশ্রী’ ও ‘স্বাস্থ্য সাথী’ নিয়েও কথা বলেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশের মাটিতে শান্ত ও দৃঢ়ভাবে এই পরিস্থিতি সামলে মুখ্যমন্ত্রী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছেন। বিচারক ইয়ান আনসওয়ার্থ রায়ে বলেন, অভিযুক্ত তাঁর ‘উচ্চ পদমর্যাদা’ ব্যবহার করে জুনিয়র সহকর্মীদের টার্গেট করেছিলেন, কারণ তিনি মনে করতেন—তাঁকে কেউ ধরতে পারবে না। আদালত তাঁকে অভিহিত করেছে ‘‘সাদা পোশাকের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক যৌন শিকারী’’ বলে।

যদিও তাঁর চিকিৎসাক্ষেত্রে দক্ষতা অস্বীকার করেননি বিচারক, তবুও অপরাধের গুরুত্বকে তুচ্ছ করার সুযোগ নেই বলে স্পষ্ট মন্তব্য করেন তিনি। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, রায়ে উল্লেখ করা হয়—অমলের মধ্যে কোনও প্রকৃত অনুতাপ বা অনুশোচনার ছাপ দেখা যায়নি। সবশেষে আদালত তাঁকে ৬ বছরের কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করে।