আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তান বিশ্বকে দু’টি জিনিস মনে করিয়ে দিতে পছন্দ করে প্রথম, তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার এবং দ্বিতীয়, তার ইসলামি পরিচয়। ভেঙে পড়ায় অর্থনীতি নিয়ে দেশের নাগরিকদের দেওয়ার কিছুই নেই ‘কার্যত’ শাসক ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের। সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি নিজেকে ইসলামি স্বার্থের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন। ইসলামাবাদ এখন ‘ইসলামিক ন্যাটো’ গঠনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। যদিও তারা নিজেকে উম্মাহর স্বঘোষিত নেতা হিসেবে অথবা মুসলিমদের বিশ্ব সম্প্রদায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ইসলামাবাদের কাছে এই স্ব-ঘোষণা আপাতদৃষ্টিতে দ্বৈত উদ্দেশ্য সাধন করবে। একমাত্র ইসলামি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে নিজেকে নেতা হিসেবে উপস্থাপন করা এবং একই সঙ্গে আরব-ইসলামী গোষ্ঠীর একটি অপরিহার্য সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে সাহায্য সংগ্রহ করা।

সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বলা হয়েছে যে, যে কোনও দেশের উপর আক্রমণকে উভয় দেশের উপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। প্রয়োজনে সৌদি আরব প্রতিরক্ষায় পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারেরও অনুমতি পাবে।

আরও পড়ুন: লুকিয়ে লুকিয়ে বাংলাদেশে আসছে কেন মার্কিন সেনা, কী পরকল্পনা করছে ইউনূস সরকার?

এই সপ্তাহের শুরুতে দোহা শীর্ষ সম্মেলনে পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সুর চড়িয়ে বলেছিলেন, ইসলামিক দেশগুলির উপর আক্রমণ এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা মুখ বুঝে সহ্য করা উচিৎ নয়। একই সঙ্গে তুরস্ক, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরব সহ সম্ভাব্য সদস্যদের নিয়ে একটি ‘ইসলামিক ন্যাটো’ গঠনের পক্ষেও সওয়াল তুলেছেন। ঠিক একদিন পরেই বুধবার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, পাকিস্তানের জিও নিউজের সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছেন।

‘সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলি স্বীকৃতি দেওয়ার’ কথা বলে আসিফের নিশানায় কেবল ইজরায়েলই নয় শত্রু ভারতও রয়েছে। যদি এই গোষ্ঠীটি তৈরি করা হয়, তাহলে একজনের উপর আক্রমণকে সকল সদস্যের উপর আক্রমণ বলে গ্রাহ্য করা হবে।  এটি ভারতবিরোধী কার্যকলাপের জন্য ইসলামাবাদকে আরও একটি বহুপাক্ষিক মঞ্চ প্রদান করতে পারে। তবে, আপাতদৃষ্টিতে অন্যান্য কারণও জড়িত বলে মনে হচ্ছে।

এই উদ্দেশ্যের মূলে রয়েছে অর্থ অথবা অর্থের অভাব। পাকিস্তান আজ দেউলিয়া। আইএমএফ, চীন, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ঋণের উপর নির্ভর করে চলছে। এমনকি সেই অর্থ দিয়ে যুদ্ধও করছে। তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমশ কমছে, মুদ্রাস্ফীতি মধ্যবিত্তকে গিলে খাচ্ছে এবং ​​চীন যেসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে তা বাদ দিলে শিল্পের দশা শোচনীয়।

পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বিষয়টিকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। এই কারণেই পাকিস্তান নিজেকে উম্মাহর স্বাভাবিক নেতা হিসেবে তুলে ধরছে। পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার প্রায়শই ইসলামাবাদকে অন্যান্য মুসমিল রাষ্ট্র থেকে আলাদা করেছে। এর মাধ্যমে পাকিস্তান আরব দেশগুলির সুনজরে আসতে চাইছে যাতে তারা মৃত অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ পেতে পারে। 

এই উদ্যোগের প্রধান স্থপতি নিশ্চিতভাবেই ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে শেহবাজ শরিফকে বিশ্ব নেতারা স্পষ্টতই উপেক্ষা করেছিলেন। প্রায় এক সপ্তাহ পরে, কাতারের আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের সময়, মুনিরের প্রতিটি নির্দেশ শরিফ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন।

তাঁর প্রকাশ্য ধর্মীয় সুরের মাধ্যমে, মুনির জেনারেল জিয়া-উল-হকের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছেন। পর্দার আড়াল থেকে একটি ইসলামিক ব্লককে সমর্থন করার তাঁর প্রচেষ্টার একটি ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। সর্বোপরি, তিনিই প্রথম সামরিক ব্যক্তি যিনি যুদ্ধে হারের পরেও নিজের পদোন্নতি করেছিলেন। মুসলিম স্বার্থের রক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা কেবল পাকিস্তানের মধ্যেই নয়, বরং আরব-ইসলামি দেশগুলিতেও তাঁর মর্যাদাকে আরও শক্তিশালী করে, একই সঙ্গে বৈধতাও জোগায়।

উচ্চাকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও পাকিস্তানের একটি সুসংহত ইসলামি ব্লক গঠনের ক্ষমতাও নেই। মুসলিম বিশ্ব নিজেই পশ্চিম এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি কেন্দ্রগুলির দ্বারা বিভক্ত। সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইয়ে এবং তুরস্ক উপসাগরীয় রাজতন্ত্রের সঙ্গে। তারপরে দ্বিপাক্ষিক বিরোধ রয়েছে। যার সঙ্গে পশ্চিমি দেশের সঙ্গে সক্ষতার বিষয়ও রয়েছে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, পাকিস্তানের মতো অর্থনীতি এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের কারণে ইসলামাবাদ এই ধরনের প্রকল্প একটি অলীকস্বপ্ন। পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়া যথেষ্ট নয়। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি আসন্ন ভয় রয়েই গিয়েছে যে দেশটির অস্ত্রগুলি একদিন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে চলে যেতে পারে।