কলা কমবেশি সকলের বাড়িতেই থাকে। এর স্বাদ, সহজলভ্যতা এবং শক্তি বাড়ানোর ক্ষমতার জন্য এটি অনেকেরই প্রিয়। তবে আমরা যেটা প্রায়শই অবহেলা করি, তা লো এর খোসা। সাধারণত খাওয়ার পর খোসা ফেলে দেওয়া হয়, কিন্তু আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ এবং আধুনিক গবেষকরা এখন বলছেন—কলা খোসার ভেতরেই লুকিয়ে আছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ এবং ওষধি বৈশিষ্ট্য।
চিকিৎসকরা জানান, কলার খোসা আসলে খাওয়ার যোগ্য এবং এতে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, আয়ুর্বেদ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী, সঠিকভাবে গ্রহণ করলে কলার খোসা শরীরের নানা উপকারে আসতে পারে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কলার খোসায় রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ম্যাগনেসিয়াম। এগুলো হজমশক্তি বাড়াতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে সাহায্য করে। খোসার ভিতরে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি-র্যাডিকেলের হাত থেকে বাঁচায়। আবার এর দ্রবণীয় ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে বাড়তে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।
পুষ্টিবিদদের মতে, কলার খোসা কোলেস্টেরল কমাতেও কার্যকর, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমাণে খেলে হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ওজন নিয়ন্ত্রণেও কলার খোসার ভূমিকা আছে। উচ্চ ফাইবারের কারণে এটি সহজেই পেট ভরে দেয়, অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে এবং একই সঙ্গে বিপাকক্রিয়া সক্রিয় করে ফ্যাট পোড়াতে সাহায্য করে।
শুধু তাই নয়, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, কলার খোসার প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ত্বকের যত্নেও উপকারী। খোসা সরাসরি ত্বকে ঘষলে ব্রণ এবং দাগ কমাতে পারে। মাথার ত্বকে খোসার পেস্ট লাগালে খুশকি হ্রাস এবং চুল পড়া রোধ করতেও সহায়ক হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কাঁচা কলার খোসা সরাসরি খাওয়া উচিত নয়। এটি ভালভাবে ধুয়ে সেদ্ধ বা ভাপিয়ে তারপর স্মুদি, চা বা রান্না করা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। দক্ষিণ ভারতের কিছু অঞ্চলে কলা ‘খোসার চাটনি’ও তৈরি হয়। খোসার হালকা তিতকুটে স্বাদ দূর করতে অনেকেই এতে লেবু, দই বা মশলা যোগ করেন।
কলার খোসা শুধুই আবর্জনা নয়, বরং এক অমূল্য ভাণ্ডার, যেটি শরীরকে ভিতর থেকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি বাইরেও সৌন্দর্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। আধুনিক বিজ্ঞান থেকে আয়ুর্বেদ—সব ক্ষেত্রেই এর গুণাগুণের স্বীকৃতি পাওয়া গেছে। তাই খোসাকে ফেলে না দিয়ে, সঠিক উপায়ে খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত করলে এটি হতে পারে সহজলভ্য এবং প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যসঙ্গী।
