আজকাল ওয়েবডেস্ক: নেপালের জেনারেশন জেড তরুণদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া অভূতপূর্ব গণআন্দোলন শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকারকে পতনের মুখে ঠেলে দিয়েছে। টানা বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও তীব্র রাজনৈতিক চাপের পর ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তবে এই আন্দোলন কেবলমাত্র সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশেই থেমে নেই; বরং এর সাথে যুক্ত তরুণ প্রজন্ম একগুচ্ছ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের দাবি সামনে এনেছে।


আন্দোলনকারীরা ঘোষণা করেছেন, যেসব মানুষ এই বিক্ষোভ চলাকালে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের সবাইকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। তাঁদের পরিবারকে সরকারি সম্মান, স্বীকৃতি এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। একইসাথে সংগঠকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বেকারত্ব মোকাবিলা, অভিবাসন হ্রাস এবং সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার।


প্রতিবাদীরা তাদের বিবৃতিতে বলেছেন, “এই আন্দোলন কোনও ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের জন্য নয়। এটি গোটা প্রজন্মের জন্য, দেশের ভবিষ্যতের জন্য। শান্তি অবশ্যই প্রয়োজন। তবে সেটি কেবলমাত্র নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তির ওপরেই সম্ভব।”

আরও পড়ুন: মোদির চালে কুপোকাত ট্রাম্প, এবার কী করতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট


মূল দাবি সমূহ
১. অবিলম্বে বর্তমান প্রতিনিধিসভা বিলুপ্ত করতে হবে, কারণ জনগণের আস্থা সেটি হারিয়েছে।
২. নাগরিক, বিশেষজ্ঞ ও তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সংবিধান সংশোধন বা সম্পূর্ণ নতুনভাবে রচনা করতে হবে।
৩. অন্তর্বর্তীকালীন সময় শেষে স্বাধীন, সুষ্ঠু ও প্রত্যক্ষ জনঅংশগ্রহণের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে।
৪. সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নির্বাহী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৫. গত তিন দশকে রাজনীতিবিদদের লুট করা সম্পদের তদন্ত করতে হবে এবং অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ত করা হবে।
৬. পাঁচটি মৌলিক প্রতিষ্ঠান— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ খাতে কাঠামোগত সংস্কার ও পুনর্গঠন করতে হবে।


মঙ্গলবার তীব্র সহিংস বিক্ষোভের পর বুধবার সকাল থেকেই সেনা সদস্যরা কাঠমান্ডু এবং অন্যান্য শহরে নেমে পড়ে। তারা কারফিউ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। রাত থেকেই সেনাবাহিনী সারাদেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং রাজধানী কাঠমান্ডু ছাড়াও ললিতপুর ও ভক্তপুরে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে। সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, কিছু অসাধু গোষ্ঠী এই আন্দোলনের সুযোগ নিচ্ছে এবং সাধারণ নাগরিক ও সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি করছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়।


প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগ করেন যখন কয়েকশত বিক্ষোভকারী তার দপ্তরে প্রবেশ করে। তারা অন্তত ২২ জন নিহতের দায় স্বীকার ও জবাবদিহি দাবি করছিল। নিহতদের সবাই ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরোপিত স্বল্পস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও দীর্ঘদিনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী তরুণ।
নেপালে এই তরুণ-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন দেশটির রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টি করেছে। নতুন প্রজন্ম স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে  তারা আর দুর্নীতি, অকার্যকর নেতৃত্ব ও সামাজিক অবিচার মেনে নেবে না। পরিবর্তন এখন তাদের অপরিহার্য দাবি।