ভারতের বিচারব্যবস্থায় আসছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। আদালতে জমে থাকা কোটি কোটি মামলার চাপ কমাতে এবং দ্রুত রায় দেওয়ার জন্য এবার ‘রোবো বিচারক’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রণালয়। ছোটখাটো অপরাধ, ভূমি বিরোধ এবং রুটিন মামলায় এই এআই-চালিত ব্যবস্থা বিচারকদের সহায়তা করবে। তবে রায় দেওয়ার চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকবে মানব বিচারকের হাতেই। এর ফলে একদিকে যেমন দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়া সহজ হবে, অন্যদিকে জমে থাকা মামলার পাহাড়ও অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কেন এই উদ্যোগ

ভারতে বর্তমানে প্রায় পাঁচ কোটিরও বেশি মামলা ঝুলে রয়েছে। এসব মামলার বড় অংশই ছোটখাটো ফৌজদারি অপরাধ, ভূমি বিরোধ, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ বা আর্থিক পাওনা-পাওনি সংক্রান্ত। দীর্ঘসূত্রিতা, মামলার চাপ এবং বিচারকের সংখ্যা কম থাকার কারণে সাধারণ মানুষকে বছরের পর বছর ধরে ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষায় করতে হয়। এই প্রেক্ষাপটেই প্রযুক্তির সাহায্যে আদালতের কার্যক্রম দ্রুত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ চিনিই একমাত্র শত্রু নয়, আপনার রোজের খাবারেই লুকিয়ে দাঁতের ক্ষয়ের আসল দোষী! গবেষণায় উঠে এল চমকে দেওয়া তথ্য

কীভাবে কাজ করবে এই রোবো বিচারক

এআই সফটওয়্যার মামলার কাগজপত্র, প্রমাণ, পূর্ববর্তী রায় ও আইন বিশ্লেষণ করবে। ছোট ও রুটিন মামলায় প্রাথমিক রায়ের খসড়া তৈরি করবে। বিচারক সেই রায় যাচাই করে অনুমোদন দেবেন। ফলে রায় প্রদানের গতি বাড়বে এবং বিচারকদের উপর চাপ কমবে।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে এস্তোনিয়া ছোটখাটো আর্থিক মামলা নিষ্পত্তির জন্য রোবো বিচারক চালু করে।চীনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে লক্ষাধিক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে। এবার ভারতও সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করছে।

ইতিমধ্যে ভারতে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও সেশন আদালতের বিচারকদের জন্য এআই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বই সহ কয়েকটি আদালতে পরীক্ষামূলকভাবে এই ব্যবস্থা চালু করে মামলার কার্যক্রম দ্রুত করার ইতিবাচক ফল মিলেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, কিছু আদালতে মামলার ১৫-২০% অমীমাংসা কমেছে এবং মামলার নিষ্পত্তি ৩০% দ্রুত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ঘন ঘন বুক জ্বালা মানেই গ্যাস্ট্রিক নয়, নিঃশব্দে মারণ রোগে শেষ হতে পারে শরীর! কখন সতর্ক হবেন?

তবে এই ব্যবস্থার সঙ্গে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। এআই সবসময় সঠিক তথ্য দিতে পারে না, কখনও ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর ডেটাও আসতে পারে।বিচার ব্যবস্থায় মানবিক সংবেদনশীলতা, নৈতিকতা এবং যুক্তি অপরিহার্য যা যন্ত্র দিয়ে সম্ভব নয়। তাই ভারতীয় আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এআই কখনওই মানুষের বিচারকের বিকল্প হবে না, বরং সহায়ক যন্ত্র হিসেবেই থাকবে।