আজকাল ওয়েবডেস্ক: অনলাইনে ‘সাসপেক্ট রেজিস্ট্রি’ সিস্টেম চালুর দশ মাস পর, কেন্দ্রীয় সরকার ১৩ লাখ প্রতারণামূলক লেনদেন আটকে দিয়ে ৫,১১১.৮০ কোটি টাকা বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে। ন্যাশনাল সাইবারক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল (NCRP)–এর ভিত্তিতে তৈরি এবং ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (I4C) কর্তৃক উন্নত এই রেজিস্ট্রিতে আর্থিক প্রতারণা ও বিভিন্ন সাইবার অপরাধে জড়িত প্রায় ১৪ লক্ষ সাইবার অপরাধীর তথ্য রয়েছে, যা সব ব্যাংকের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।


গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই রেজিস্ট্রি চালু করেন। এটি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যবহার করতে পারে। এখন পর্যন্ত ৩,৫৪,৮৮৪টি প্রতারণামূলক লেনদেন গ্রহণকারী অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে, ১১,১০,৫৬৬টি ইউনিক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা হয়েছে, এবং গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের ১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতারণামূলক লেনদেন আটকে দিয়ে মোট ৫,১১১.৮০ কোটি টাকা বাঁচানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিশ্বকে অবাক করল জাপান, চাপে পড়ল ট্রাম্পের দেশ


একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ১৪.১৩ লক্ষ মানুষের তথ্য সিস্টেমে আপলোড করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে প্রায় ১৩.০৬ লক্ষ সন্দেহভাজন পরিচয়পত্রের তথ্য ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।” বর্তমানে ৬১টি ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই সাসপেক্ট রেজিস্ট্রি সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—৩৫টি ভারতীয় প্রাইভেট সেক্টর ব্যাংক, ১২টি জাতীয়কৃত ব্যাংক, ৬টি আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক, ৬টি ওয়ালেট/মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠান এবং ১টি বিদেশি প্রাইভেট সেক্টর ব্যাংক।


একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “এই সিস্টেমের মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে তাদের গ্রাহকদের তথ্য যাচাই করতে পারে, যেকোনও ধরনের আর্থিক সেবা দেওয়ার আগে। সাসপেক্ট রেজিস্ট্রির সাহায্যে এখন ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করতে পারছে।”


চলতি বছরের হিসেব একবার দেখে নেওয়া যাক। জানুয়ারি ২০২৫: ১,৮৩৭ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি: ১,৫৭৩ কোটি টাকা। মার্চ: ১,৬৮৩ কোটি টাকা। এপ্রিল: ১,৩১৪ কোটি টাকা। মে: ১,৬৪৪ কোটি টাকা। জুন: ১,৫৮৪ কোটি টাকা। জুলাই: ১,৮২৯ কোটি টাকা। 


বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, প্রতারণার ৮০%–এর বেশি ঘটনা আর্থিক প্রতারণার ক্যাটাগরিতে পড়ে। এক কর্মকর্তা জানান, এই সময়ের মধ্যে কিছু অর্থ ভুক্তভোগীদের ফেরতও দেওয়া হয়েছে। যেমন—
জানুয়ারি ২০২৫: ১৫.০৩ কোটি টাকা
ফেব্রুয়ারি: ৯.৪৮ কোটি টাকা
মার্চ: ৯.৮৭ কোটি টাকা
এপ্রিল: ১৫.৭৫ কোটি টাকা
মে: ১৪.৬০ কোটি টাকা
জুন: ১৮.৪৫ কোটি টাকা
জুলাই: ১১.৭৩ কোটি টাকা


যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে ভারতে সাইবার অপরাধের সংখ্যা অনেকটা কমতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেদিক থেকে দেখতে হলে এবার থেকে যদি অপরাধীরা নিজেদের কাজ করতে চায় তাহলে তারাও আরেকবার ভাববে। যদি এর সামনে তারা চলে আসে তাহলে তাদের ধরা খুব একটা অসুবিধা হবে না। সেখানে বাড়তি কোনও কষ্ট করতে হবে না। সেখান থেকে দেখতে হলে সাইবার অপরাধীরা নিজেদের মতো করে আর কাজ করতে পারবে না। সেখানে তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলা অনেকটা সহজ হবে।