আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেম, বিয়ে, সংসার, এই শব্দগুলি সাধারণ গৃহস্থের জীবনে সুখের প্রতীক। কিন্তু তাঁর জীবনে এই সবই ছিল নিছক ব্যবসার কৌশল। একেকটি বিয়ে ছিল তাঁর কাছে এক একটি নতুন শিকার ধরার মতো, প্রতিটি সাজানো প্রেম ছিল আর্থিক লাভের হাতিয়ার। যাঁর কথা বলা হচ্ছে তাঁর নাম জিয়োভানি উইপিয়োটো। মার্কিন মুলুকে জন্মানো এই ইতালীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি এমন এক প্রতারণার কীর্তি গড়েছিলেন, যা শুনলে আজও বিস্ময়ে চোখ কপালে ওঠে।
প্রশাসনের দাবি, জীবনে অন্তত ১০৫ জন মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। আমেরিকার ১৮টি রাজ্য তো বটেই, এমনকী বিদেশের মাটিতেও একের পর এক বিবাহ করেছেন তিনি। কানাডা, ব্রিটেন, ইতালি, হংকং পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল তাঁর বিয়ের সাম্রাজ্য। প্রশাসন ১০৫ টি বিয়ের দাবি করলেও তদন্তে নিশ্চিত প্রমাণ মেলে মোট ৮২টি বিয়ের। কিন্তু জিয়োভানি র নিজের স্বীকারোক্তিতে সেই সংখ্যা ছিল আরও আরও চমকে দেওয়ার মতো। ১৫১ টি!
শোনা যায় জিয়োভানির আসল ব্যবসা ছিল ফ্লি মার্কেটের করবার। সেটাই তাঁর আসল আয়ের উৎস। তবে সেই ব্যবসার আড়ালে চলত প্রেম এবং বিবাহের খেলা। চোখে মুখে আত্মবিশ্বাস, কথা যেন মিছরির মতো মিষ্টি, সঙ্গে ভুয়ো পরিচয়, এই ছিল তাঁর ‘অস্ত্র’। মহিলাদের সামনে কখনও নিজেকে বিদেশি ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিতেন, কখনও ধনী জমিদার বা অভিজাত পরিবারে জন্মানো রোমান্টিক পুরুষ। পরিচয়ের পরেই আসত বিয়ের প্রস্তাব- “চলুন, বিয়ে করে ফেলি।” কোনও ক্ষেত্রে প্রথম সাক্ষাতে কাজ না হলে বেশ কিছুদিন চলত এই নাটক।
কিন্তু বিয়ের এক দুদিন পরই আসল রূপ প্রকাশ পেত। ভারতে যেমন ফুলশয্যার আয়োজন হয়। তেমনই আয়োজন করে স্ত্রীর মন ভোলাতেন তিনি। তার পর তাঁরা ঘুমিয়ে পড়লেই গহনা, নগদ টাকা, মূল্যবান সামগ্রী সব গায়েব। নববিবাহিতা স্ত্রীকে রেখে ভ্যানিশ হয়ে যেতেন জিয়োভানি। এই সব চুরির মাল পরে বিক্রি হত ফ্লি মার্কেটে। সেখানে তিনি এমন ভাব করতেন যেন কোনও পুরোনো জিনিসের স্বাভাবিক বেচাকেনা চলছে।
১৯৮১ সালের নভেম্বরে প্যাট্রিসিয়া অ্যান গার্ডিনার নামের এক মহিলা মাত্র আট দিনের পরিচয়ে বিয়ে করেন জিয়োভানিকে। যত দ্রুত প্রেম ততোধিক দ্রুত স্বপ্নভঙ্গ হয় তাঁর। ৩৬,০০০ ডলার নগদ এবং বাড়ির সব মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে উধাও হয়ে যান নববিবাহিত স্বামী। এর পর তাঁর শিকার হন শ্যারন ক্লার্ক। বিয়ের তিন সপ্তাহ পর এক হোটেলে একা, কপর্দকহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁকে। এমনকী তাঁর জুতো পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন জিয়োভানি। কিন্তু এই ঘটনাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বলে প্রমাণিত হয়। শ্যারন কিছুতেই ছাড়েননি। প্রায় ১০,০০০ মাইল ঘুরে অবশেষে ফ্লোরিডায় নিজের প্রতারক স্বামীকে খুঁজে বার করেন তিনি। সেখানেই পুলিশের হাতে তুলে দেন ‘প্রেমিক প্রতারক’-কে।
১৯৮৩ সালে আমেরিকার অ্যারিজোনায় শুরু হয় জিয়োভানির বিচার। আদালতে প্রমাণিত হয় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা প্রতারণা এবং বহুবিবাহের অধিকাংশ অভিযোগই সত্যি। প্রতারণার জন্য ২৮ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। পাশাপাশি বহুবিবাহের জন্য আরও ৬ বছর কারাবাসের নির্দেশ দেয় আদালত। এর সঙ্গে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ডলারের জরিমানাও হয় জিয়োভানির। কিন্তু সাজা ঘোষণার সময় আদালতে দাঁড়িয়েও নির্লিপ্ত ছিলেন তিনি, যেন এ সব তাঁর কাছে সাধারণ ঘটনা। সেখানেই তিনি বুক ফুলিয়ে দাবি করেন, পুলিশ যা বলছে সেই সংখ্যা ঠিক নয়। ১০২ জন নয় তিনি বরং ১৫১ জন মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন!
কিন্তু এই অহংকার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ‘বিয়ে ব্যবসা’র শেষ পরিণতি হয়েছিল কারাগারের দেওয়ালের মধ্যেই। দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন তিনি। কারাবাসের পর স্ট্রোকের শিকার হন। ভেঙে পড়ে শরীর। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ৬১ বছর বয়সে অ্যারিজোনায় কারাগারে ভিতরেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিয়েবাজ’-এর।
আরও পড়ুন: ‘স্তনদুগ্ধ আইসক্রিম’ খেতে হুড়োহুড়ি বড়দেরও! কত দাম? কোথায় পাওয়া যাবে এই স্বাদ?
আরও পড়ুন: রোগীদের উপুড় করে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে নিতেন! তারপর…? বিস্ফোরক অভিযোগ নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
সবমিলিয়ে জিয়োভানির জীবন যেন এক অদ্ভুত নাটক। প্রেমের অভিনয়, বিয়ের মঞ্চ, আর তার আড়ালে সুপরিকল্পিত প্রতারণা। শতাধিক মহিলার বিশ্বাস ভেঙে, অর্থ আর সম্পদ লুঠ করে নিজের সাম্রাজ্য গড়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ দৃশ্যতে শতাধিক স্ত্রীর স্বামী ছিল সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। লোহা আর কংক্রিটের দেয়ালের আড়ালে।
