আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘোর বর্ষায় রাজধানী দিল্লি এবং এনসিআর জুড়ে চোখের সংক্রমিত রোগ কনজাঙ্কটিভাইটিস বা ‘আই ফ্লুয়ের’ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জানা গিয়েছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে হাসপাতালগুলোতে আউটডোর রোগীদের প্রায় ৬–৭ জনের মধ্যে একেকজনই এই সংক্রমণে আক্রান্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বছর যে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক। চোখে প্রদাহ বাড়াচ্ছে এবং সুস্থ হতে সময়ও বেশি লাগছে। এর কারণ মূলত অসামঞ্জস্যপূর্ণ বর্ষার বৃষ্টি, মাঝে মাঝে আর্দ্রতা এবং ধুলো। এই মিশ্র পরিবেশ সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ভারী বৃষ্টির পর শুকনো আবহাওয়া ও রাস্তাঘাটে ধুলো মিলে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার আরও বাড়িয়ে তুলছে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ‘প্রায় ৬ থেকে ৭ জন রোগীর মধ্যে একজন বর্তমানে কনজাঙ্কটিভাইটিসে আক্রান্ত। এই সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে পরিবার, স্কুল ও অফিসে’। এর সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে, চোখ লাল হওয়া, ক্রমাগত চোখ দিয়ে জল পড়া, হলুদ বা সবুজ আঠালো স্রাব, চোখের পাতায় ফোলা এবং জ্বালা বা চুলকানি। শ্রী বালাজি অ্যাকশন মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের চোখ বিশেষজ্ঞ কর্নেল ডা. অদিতি দুসাজ জানান, ‘প্রতিদিন ১০ জন রোগীর মধ্যে ৫–৬ জন কনজাঙ্কটিভাইটিস নিয়ে আসছেন। চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, জল পড়া, আঠালো স্রাব এবং ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা আটকে যাওয়া, এগুলোই এই রোগের সাধারণ উপসর্গ’।
আরও পড়ুন: কেনাকাটায় মিলছে বিশেষ ছাড়, স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকার রঙে সেজে উঠেছে অ্যাক্রোপলিস
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই বছর শিশুদের মধ্যে উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। নোবেল আই কেয়ারের সিনিয়র চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দিগ্বিজয় সিং বলেন, ‘স্কুলপড়ুয়া শিশুদের (৫ থেকে ১৫ বছর) মধ্যে বেশি সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে এই রোগের। অনেকের সেরে উঠতে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগছে, যেখানে গত বছর এক-দুই সপ্তাহেই সেরে উঠছিল’। শিশুদের মধ্যে চোখ লাল হওয়া, আঠালো ভাব, আলোতে সংবেদনশীলতা ও চোখের পাতা ফোলা বেশি দেখা যাচ্ছে। কনজাঙ্কটিভাইটিস বা ‘পিঙ্ক আই’ হল চোখের সাদা অংশ এবং চোখের পাতার ভেতরের ঝিল্লির প্রদাহ।
এটি সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকে। স্পার্শ হাসপাতাল, বেঙ্গালুরুর ডা. বিষ্ণু বাণ প্রাসান বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে দ্রুত সেরে ওঠা যায় এই রোগ থেকে’। তবে এই বছর সাধারণত ৫–৭ দিনে সেরে যাওয়া এই রোগ ১০–১৪ দিন পর্যন্ত সময় নিচ্ছে। সংক্রমণের পরিমাণও বেড়েছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ‘এই রোগ সরাসরি সংস্পর্শ, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ভাগাভাগি বা বাতাসের মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায়’। প্রতিরোধের উপায় হিসেবে নিয়মিত হাত ধোয়া, চোখে হাত না দেওয়া, তোয়ালে, বালিশ বা প্রসাধনী সামগ্রী ভাগাভাগি না করার পরামর্শ দেন। এছাড়া আক্রান্তদের উপসর্গ না কমা পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ সীমিত রাখতে সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা, যাতে সংক্রমণ কমানো যায়।
আরও পড়ুন: পদ্মশ্রী বুলা চৌধুরির বাড়িতে চুরি, মূল্যবান মেডেল নিয়ে পালাল চোর
