আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডাইনোসরের দাঁত সাধারণত তাদের কামড়ের জন্য পরিচিত হলেও নতুন গবেষণা বলছে, এই দাঁতের মধ্যেই সংরক্ষিত ছিল অতিপ্রাচীন বাতাসের রাসায়নিক ছাপ। সেই রেকর্ড বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের যুগের কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা এবং উদ্ভিদের উৎপাদনক্ষমতা এমন এক নিখুঁতভাবে পুনর্গঠন করেছেন। এটি এক সময় কল্পনাও করা যেত না।


এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন ড. ডিংসু ফেং ও তাঁর সহকর্মীরা, যাঁরা জার্মানির গ্যটিংন বিশ্ববিদ্যালয়, জোহানেস গুটেনবার্গ ইউনিভার্সিটি মাইন্‌জ, এবং রুহর ইউনিভার্সিটি বোহুম-এর সঙ্গে যুক্ত। ডাইনোসরের দাঁতের বাইরের আবরণ, শক্ত দাঁতের এনামেল, হাড়ের চেয়েও শক্ত এবং এটি অধিকাংশ রাসায়নিক পরিবর্তন প্রতিরোধ করে।

আরও পড়ুন: মানুষের ডিএনএ-তে রয়েছে ভাইরাস, মাথায় হাত গবেষকদের


এই এনামেলের ভিতরে সংরক্ষিত থাকে অক্সিজেন পরমাণুর মিশ্রণ যা প্রাণীটি শ্বাস নেওয়া এবং জল পান করার সময় শরীরে প্রবেশ করে। এতে তখনকার বায়ুমণ্ডলের একটি নিখুঁত স্ন্যাপশট মুদ্রিত হয়ে যায়। ড. ফেং তিনি এবং তাঁর সহ-গবেষকরা একটি ল্যাবরেটরি পদ্ধতি ব্যবহার করে দাঁতের এনামেলে থাকা তিন প্রাকৃতিক অক্সিজেন আইসোটোপকে পার্টস পার মিলিয়ন নির্ভুলতায় আলাদা করতে সক্ষম হন।


তাঁরা যা পরিমাপ করেছেন, তাকে বলা হয় ট্রিপল অক্সিজেন আইসোটোপ সিগন্যাল। এই সিগন্যালে একটি বিরল আইসোটোপের সামান্য আধিক্য দেখা যায় যা বৃদ্ধি পায় যখন কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বাড়ে এবং কমে যায় যখন গাছপালার সামগ্রিক উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে যায়।


প্রাণীর শরীরের জল এই সংকেত গ্রহণ করে এবং দাঁতের এনামেল এটি পাথরের ওপর লেখা লেখার মতো সংরক্ষণ করে। আগে এই ধারণা সাইনোজোইক স্তন্যপায়ী প্রাণীর দাঁতে পরীক্ষা করা হয়েছিল কিন্তু ডাইনোসরের ক্ষেত্রে এই প্রথম এটি প্রয়োগ করা হল। দাঁতের এনামেলে তিন ধরনের অক্সিজেন আইসোটোপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা শ্বাস নেওয়া ও জল পান করার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করা অক্সিজেনের অনুপাতও নির্ধারণ করতে পারি। এই কারণে এনামেল, হাড় নয় নমুনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।


ফলাফল অনুযায়ী, লেট জুরাসিক যুগে আকাশে CO₂-এর পরিমাণ ছিল প্রায় ১২০০ ppm, যা শিল্পপূর্ব যুগের মান ২৮০ ppm এর চারগুণ। লেট ক্রেটেশিয়াস যুগে, এই মাত্রা কমে হয় ৭৫০ ppm, যা এখনকার চেয়েও তিনগুণ বেশি।


কিছু Tyrannosaurus rex এবং Kaatedocus siberi প্রজাতির দাঁতের আইসোটোপ প্যাটার্ন অন্যদের থেকে একেবারে আলাদা ছিল। এই ব্যতিক্রমগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, কিছু স্বল্পস্থায়ী CO₂ বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছিল, যা সম্ভবত আগ্নেয়গিরির গ্যাস নির্গমনের সঙ্গে সম্পর্কিত।


জলবায়ু মডেল ব্যবহার করে গবেষক দল হিসাব করেছেন, লেট ক্রেটেশিয়াস যুগে গাছপালার উৎপাদনক্ষমতা আধুনিক সময়ের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। বেশি CO₂ মানে বেশি ফটোসিনথেসিস ছিল।  ফলে বনাঞ্চল ও প্ল্যাঙ্কটন আরও বেশি অক্সিজেন উৎপন্ন করত এবং বাতাস থেকে কার্বন টেনে নিত। এই উচ্চ উৎপাদন একই সঙ্গে দ্রুত কার্বন চক্র নির্দেশ করে। গাছপালার দ্রুত বৃদ্ধি বাতাস থেকে CO₂ শোষণ করে। তবে দ্রুত পচন ও আগ্নেয়গিরির কারণে আবার তা ফিরে আসে। ফলে একটি গতিশীল গ্রীনহাউস পরিবেশ সৃষ্টি করে। এমন গ্যাস বৃদ্ধির ঘটনা হঠাৎ উষ্ণতা বৃদ্ধি, মৌসুমি বৃষ্টির পরিবর্তন এবং মহাসাগরের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। কিছু গবেষক মনে করেন, এই ঘটনাগুলোই পরবর্তী বৃহৎ প্রাণ বিনাশের পূর্বাভাস ছিল।


ডেকান আগ্নেয়গিরির গ্যাস নির্গমন নিয়ে মডেলিং গবেষণা দেখায় এমনকি মাঝারি পরিমাণ কার্বন নির্গমনও বিশ্বের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বাড়াতে পারে। এই নতুন দাঁতের ডেটা সেই পূর্বাভাসগুলোর একটি নিশ্চিতকরণ মাত্র। এনামেল রেকর্ডকে সামুদ্রিক তথ্যসূত্রের সঙ্গে মিলিয়ে এখন বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করতে পারবেন কীভাবে বাতাস, সমুদ্র এবং প্রাণজগৎ আগ্নেয়গিরির ধাক্কায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।