আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুম্বইয়ের এক ৮০ বছর বয়সী প্রবীণ নাগরিককে প্রায় দুই বছর ধরে এক জটিল অনলাইন প্রতারণায় প্রায় ৯ কোটি টাকা খুইয়ে বসতে হয়েছে। প্রেম, সমবেদনা ও মানসিক প্রভাব খাটিয়ে চার নারীর ছদ্মবেশে—যারা আসলে একই ব্যক্তি হতে পারেন—এই প্রবীণকে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়। পুলিশের অনুমান, এ চারটি চরিত্রের পেছনে একই প্রতারক রয়েছে।
প্রতারণার শুরু
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে, ওই প্রবীণ ব্যক্তি ফেসবুকে এক নারী—শারভি—কে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। প্রথমে রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু কয়েকদিন পর শারভির অ্যাকাউন্ট থেকেই উল্টো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে, যা তিনি গ্রহণ করেন। এরপর শুরু হয় চ্যাটিং, যা ধীরে ধীরে ফেসবুক থেকে হোয়াটসঅ্যাপে চলে যায়। শারভি জানায়, তিনি স্বামী থেকে আলাদা থাকেন এবং সন্তানদের সঙ্গে তার্দেও এলাকায় বসবাস করেন। ধীরে ধীরে তিনি ওই প্রবীণকে জানান তার সন্তানরা অসুস্থ, চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন। প্রবীণও সহানুভূতি থেকে অর্থ পাঠাতে থাকেন।
নতুন চরিত্রের আবির্ভাব
কিছুদিন পর, হোয়াটসঅ্যাপে কবিতা নামে এক নারী যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, শারভিকে চেনেন এবং প্রবীণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চান। কবিতা শুরু করেন অশ্লীল বার্তা পাঠানো এবং অর্থ দাবির নতুন ধাপ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে দিনাজ নামে এক নারীর বার্তা আসে। দিনাজ দাবি করেন, তিনি শারভির বোন এবং শারভি মারা গেছেন। মৃত্যুর আগে শারভি চান প্রবীণ তার হাসপাতালের বিল পরিশোধ করুন। দিনাজ হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশটও পাঠান, যেখানে শারভি এবং তার কথোপকথন দেখানো হয়। দিনাজ পরবর্তীতে প্রবীণকে বিয়ের প্রস্তাবও দেন এবং একাধিকবার অর্থ নেন। এরপর আসে জাসমিন—দিনাজের বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে তিনি জানান, দিনাজ তার টাকা ফেরত দিতে ইচ্ছুক কিন্তু তার জন্যও কিছু সাহায্য দরকার। প্রবীণ আবারও টাকা পাঠান।
আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর ঘটনা, মহিলার দিকে পুরুষাঙ্গ তাক করে হস্তমৈথুন যুবকের! কনটেন্ট ক্রিয়েটরের ভিডিও ভাইরাল
প্রায় সম্পূর্ণ নিঃস্ব
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত, মোট ৭৩৪টি অনলাইন লেনদেনে ৮.৭ কোটি টাকা প্রতারকদের হাতে তুলে দেন প্রবীণ। সঞ্চয়ের সব অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ায় তিনি পুত্রবধূর কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা ধার নেন, সেটিও পাঠিয়ে দেন। এরপর আরও অর্থের জন্য ছেলের কাছে ৫ লক্ষ টাকা চান।
প্রতারকের জাল ভাঙা ও পরিণতি
ছেলে সন্দেহ করে জানতে চান কেন এই টাকা লাগছে। ঘটনাবলী শোনার পর ছেলে বুঝতে পারেন, বাবা সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। হঠাৎ ধাক্কায় প্রবীণ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকরা তাকে ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করেন।
অবশেষে ২০২৫ সালের ২২ জুলাই সাইবারক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রাথমিক ধারণা, শারভি, কবিতা, দিনাজ ও জাসমিন—এই চার পরিচয়ই আসলে একজন প্রতারকের সৃষ্টি।
পুলিশের পরামর্শ: প্রবীণ নাগরিক ও পরিবারগুলোকে সতর্ক থাকা, অচেনা অনলাইন পরিচয়ের সঙ্গে অর্থ লেনদেন না করা এবং সন্দেহজনক বার্তা বা কলের ক্ষেত্রে অবিলম্বে থানায় বা সাইবার হেল্পলাইনে যোগাযোগ করা।
