আজকাল ওয়েবডেস্ক: হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে ছেলে মেয়ে। কোথায় তারা? জানেন না বাবা-মা। শুধু কানে বাজছে শেষ দু’ কথা। সরকারের কাছে কাতর অনুনয় জানাচ্ছেন ওই জায়গায় তাঁদের পৌঁছে দিতে, যে ভাবে হোক। যাতে তাঁরা নিজেরাই খুঁজতে পারেন ছেলে-মেয়েদের।

 উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে আচমকা পরপর মেঘভাঙা বৃষ্টি। তার জেরে ভয়াবহ হড়পা বান। নিমেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে গোটা গ্রাম। বাড়ি, হোটেল, হোমস্টে, রেঁস্তোরা, দোকানপাট, আর কিছুরই নেই চিহ্ন। এই উত্তরকাশীতে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরেই মৃত্যুমিছিল বাড়ছে। বুধবার আরও বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা।

এর মাঝেই সামনে এসেছে হৃদয় বিদারক এক কাহিনি। নেপালের পরিযায়ী শ্রমিক কালী দেবী এবং তার স্বামী বিজয় সিং। কাজ শেষ করে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর হারসিল উপত্যকা ছেড়ে যখন তাঁরা যান, তখন তারা কল্পনাও করতে পারেননি যে তারাই হয়তো আসন্ন দুর্যোগের একমাত্র জীবিত ব্যক্তি হবেন। পরিস্থিতির ফেরে তাঁরা বেঁচে গিয়েছেন হয়তো, কিন্তু আদেউ জানতেন না, ওই চলে যাওয়াই হতে চলেছে তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে শেষ দেখা হওয়া।  এখন অসহায় ভাবে বসে রয়েছেন, ভাবছেন কোথায় ছেলে মেয়েরা। মনে পড়ছে, শেষ হওয়া কয়েকটি কথা। 

আরও পড়ুন: বর্ষা মানেই রোমান্টিক নয়! জুলাই পর্যন্ত ১৬০০ জনের মৃত্যু, প্রবল বৃষ্টিতে তছনছ দেশ, প্রাণহানিতে শীর্ষে কোন রাজ্য? ...

বিজয় বারবার বলছেন, ছেলের সঙ্গে হওয়া শেষ কথাকটি। কী বলেছিল ছেলে? ফোনে কথা হয়েছিল, খুব বেশি মিনিট দুয়েক। বলেছিল, ‘বাবা ড্রেনে প্রচুর জল। আমরা মনে হয় আর বাঁচব না।‘ 

বিজয় এবিং কালী ২৬ জনের একটি দলের মধ্যে ছিলেন, যাঁরা নেপাল থেকে উপত্যকায় রাস্তা ও সেতু নির্মাণের কাজে যোগ দিতে এসেছিলেন। কালী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দূরে ভাটওয়ারির উদ্দেশে রওনা হওয়া একমাত্র দম্পতি ছিলেন। একদিন পরে, বাকি ২৪ সদস্যের কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায়নি। বুধবার, দম্পতি গঙ্গাওয়াড়ি পর্যন্ত হেঁটে যান, কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেসে যাওয়ার পর তারা আর এগোতে পারেননি। সব হারিয়ে বিড়বিড় করে বলছেন, ‘আমরা যখন উপত্যকা ছেড়ে চলে আসি, তখনও আমরা ভাবিনি যে এই অঞ্চলে এমন দুর্যোগ আসবে। হড়পা বান আসবে জানলে আমরা কখনওই সন্তানদের ছেড়ে আসতাম না।‘ জানিয়েছেন, ‘সরকারের কাছে আবেদন করছি আমাদের হারসিল উপত্যকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা নিজেরাই আমাদের সন্তানদের খুঁজে বের করব।‘ শ্রমিকদের পাশাপাশি, দুর্যোগের সময় উপত্যকায় সেনাবাহিনীর একটি দলও উপস্থিত ছিল। প্রায় ১১ জন জওয়ান নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। 


মঙ্গলবার, প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, হড়পা বানে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। বুধবারেই আরও বাড়ে মৃত্যুর সংখ্যা। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছেন। এর মধ্যে সেনা বাহিনীর ১১ জন জওয়ান নিখোঁজ রয়েছেন। এ পর্যন্ত ১৩০ জনকে উদ্ধার করা গেছে। ভারী বৃষ্টি উপেক্ষা করে জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। 

উত্তরকাশীর ধারালি গ্রামে মঙ্গলবার ভোরে প্রবল মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বান বিশাল ভূমিধসের ঘটনাটি ঘটেছে। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার জেরে প্রাথমিকভাবে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই ভয়াবহ দুর্যোগে গঙ্গোত্রী ধামের সঙ্গে সমস্ত রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই অবস্থিত গঙ্গার শীতকালীন আসন মুখবা ও পবিত্র গঙ্গোত্রী ধাম। পর্যটকদের তোলা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রবাহ ধেয়ে আসছে নিচের দিকে, একের পর এক বাড়ি ও গাছপালা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হরশিল অঞ্চলের খীর গাধ নালার উপচে পড়া জলের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।