আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো লাদাখের তসো কার উপত্যকায় চালু করল এক ব্যতিক্রমী মিশন। মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘HOPE’, (Himalayan Outpost for Planetary Exploration)। জানা গিয়েছে, ১ আগস্ট থেকে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত এই মিশন চলবে। ভবিষ্যতের চন্দ্র অভিযান ও মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতির দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপের অংশ ইসরোর এই মিশন। এই মিশনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে পৃথিবীর এমন এক অঞ্চল যার সঙ্গে অনেকাংশে মিল রয়েছে মঙ্গল গ্রহের। উচ্চ উচ্চতার ঠান্ডা মরুভূমি, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪,৫৩০ মিটার ওপরে অবস্থিত, প্রবল ঠান্ডা, কম বায়ুচাপ, অতিবেগুনি রশ্মির তীব্রতা এবং লবণাক্ত পারমাফ্রস্ট রয়েছে এই অঞ্চলে।
এই ধরনের পরিস্থিতি চাঁদ বা মঙ্গলের মতো গ্রহের পরিবেশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যা মহাকাশচারীদের অভিযানের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আদর্শ। ইসরোর এই HOPE মিশনের একাধিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই মিশনে রয়েছে দুটি যুক্ত মডিউল বিশিষ্ট আবাসন ব্যবস্থা। একটি ৮ মিটার প্রশস্ত আবাস যা মূলত ক্রু-দের জন্য এবং একটি ৫ মিটার ইউটিলিটি ইউনিট। রয়েছে হাইড্রোপনিক ফার্মিং, রান্নাঘর, স্যানিটারি সুবিধা, ও সেরকাডিয়ান আলোর সংযোজন যা স্বনির্ভর বাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জানা গিয়েছে, এই ১০ দিনের মিশনে দু’জন ক্রু সদস্য আবাসনের ভিতর থাকবেন, যেখানে তাদের শারীরিক, মানসিক ও কগনিটিভ প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হবে। ইসরোর এই বিশেষ গবেষণায় অংশ নিচ্ছে দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলি।
আরও পড়ুন: প্রতিবার স্বাধীনতা দিবসে কেন লালকেল্লাতেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়? জানুন আসল কারণ
এর মধ্যে রয়েছে, আইআইটি বম্বে, আইআইটি হায়দরাবাদ, আইআইএসটি ত্রিবান্দ্রম, আরজিসিবি ত্রিবান্দ্রম এবং ইনস্টিটিউট অফ এরোস্পেস মেডিসিন। ইসরো সূত্রে খবর, এই সংস্থাগুলির গবেষকরা বিভিন্ন গবেষণায় যুক্ত হয়েছেন। যেমন ক্রু হেলথ মনিটরিং, গ্রহপৃষ্ঠ অপারেশন, জীবাণু সংগ্রহ এবং উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তি। এই HOPE মিশনের মূল উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর মহড়া এবং যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা। এই প্রকল্পের নেতৃত্বে রয়েছে ইসরোর হিউম্যান স্পেস ফ্লাইট সেন্টার। এর মূল উদ্দেশ্য ২০৪০ সালের মধ্যে ভারতীয় চন্দ্রাভিযান এবং ভবিষ্যতের মঙ্গল অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করা। মহাকাশের পরিবেশের অনুকরণে গড়ে তোলা ইসরোর এই মিশন ভারতের মহাকাশ অভিযানে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।
এর মধ্য দিয়ে টিকে থাকা, প্রযুক্তি যাচাই ও অভিযানের পরিকল্পনা করা হবে সম্পূর্ণ ঘরোয়া উদ্যোগে। ইসরোর এই HOPE মিশন ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে ভারতের অগ্রণী ভূমিকাকে আরও মজবুত করে তুলবে বলেই মত বিশেষজ্ঞ মহলের। অন্যদিকে, চিনের বিজ্ঞানীরা এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যা চন্দ্র-মাটি থেকে জল আহরণ করে তা অক্সিজেন এবং জ্বালানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থে রূপান্তর করতে সক্ষম। এর ফলে পৃথিবী থেকে চাঁদে জীবনধারণে প্রয়োজনীয় সম্পদ পাঠানোর প্রয়োজন অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এই গবেষণাটি ১৬ জুলাই ‘জুল’ (Joule) নামক সেল প্রেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে দেখানো হয় কীভাবে চাঁদের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে মহাকাশচারীদের জন্য “ক্ষুদ্র জীবন-সমর্থন ব্যবস্থা” তৈরি করা যেতে পারে।
