বিভাস ভট্টাচার্য 

আরও বাড়বে বজ্রপাতের সংখ্যা। দিনের সঙ্গে বছর যত গড়াবে ততই বৃদ্ধি পাবে এর সংখ্যা। জানাচ্ছেন পরিবেশ বিজ্ঞানী ডঃ সুলেখা চট্টোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে তিনি আমেরিকায় ক্যালিফোর্নিয়া এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সিতে সিনিয়র এঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, 'পরিবেশ সংক্রান্ত একটি রিপোর্টে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলের গবেষকরা গত ২০১৪ সালে পৃথিবীতে বজ্রপাত নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন। সেই রিপোর্টে তাঁরা উল্লেখ করেন পৃথিবীতে প্রতি ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বজ্রপাতের সংখ্যা ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ফলে দিন গড়ানোর সঙ্গে পরিবেশের তাপমাত্রা যত বৃদ্ধি পাবে ততই বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।'

তাঁর কথায়, এইভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে আগামী ২১০০ সালে এটা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। গত কয়েকদিন আগে এরাজ্যে বাজ পড়ে একসঙ্গে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। ডঃ সুলেখা চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, উন্নত দেশগুলিতেও বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর কথায়, ২০০৫ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত শুধু আমেরিকাতেই বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটেছে ৪০০ জনের। তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় আগামীদিনে বজ্রপাতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাবে।

আরও পড়ুন: ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য আগস্ট মাস স্বর্গ, অফিস কামাই না করেই থাকছে লম্বা ট্রিপের সুযোগ, জেনে নিন ছুটির তালিকা

এর কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, প্রতিনিয়ত দূষণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে। যার জন্য পৃথিবীর আবহাওয়াও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। যে কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে নিম্নচাপ এবং বজ্রপাতের সংখ্যা। তাঁর কথায়, একদিকে যেমন গাছের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে সেইসঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে জলাশয়গুলি রক্ষা করার। বিদ্যুৎ তৈরিতে নজর দিতে হবে 'সোলার এনার্জি' এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে। কারণ কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন মানেই পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি এবং সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশে তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। পরিবহনের ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে পেট্রোল বা ডিজেলের পরিবর্তে বিদ্যুতের ব্যবহারের দিকে। যদি আবহাওয়ার তাপমাত্রা না কমানো যায় তবে কিন্তু তৈরি হবে আরও মেঘ এবং সেখান থেকে অবশ্যম্ভাবীভাবে হবে বজ্রপাত। যার জেরে হতে পারে প্রাণহানির ঘটনা। 

অথচ মৃত্যু ঠেকাতে হচ্ছে সরকারি স্তরে কত প্রচার। কত অ্যাপ, টাওয়ার এবং সেইসঙ্গে বিবিধ সেমিনার।‌ এবিষয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র জানা জানান, কোনোভাবেই বজ্রপাত আটকানো সম্ভব নয়‌। তাঁর কথায়, আগে মূলত বর্ষাকালে বজ্রপাত হত। এখন সারা বছরেই বৃষ্টি‌। যখনই বৃষ্টি হয় তখনই বাজ পড়ে। নির্বিচারে বৃক্ষছেদন হয়েছে। লাগামছাড়া দূষণ ও উষ্ণায়ন এর জন্য দায়ী। মানুষকে রক্ষা করতে সরকারি স্তরে চেষ্টা চলছে। গ্রাম স্তরে পঞ্চায়েত পর্যায়ে 'দামিনী অ্যাপ' নিয়ে নিবিড় প্রচারে সুফল মিলতে পারে। এখন গ্রামেও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়েছে। সেটা কাজে লাগাতে হবে। বৃক্ষপ্রেমী বট মুন্সী (সুফি আলম মুন্সী) জানান, অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে যারা বিভিন্নরকম গাছ লাগান। তবে তালগাছ নিয়ে সচেতনতা কম। তালগাছ যথেষ্ট উঁচু হয়। বজ্রপাতে মানুষের প্রাণহানি রুখতে তালগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। 

সম্প্রতি একটি বজ্রপাতের ঘটনায় একদিনে বর্ধমানে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন। ভবিষ্যতে এই প্রাকৃতিক কারণে মৃত্যু আটকাতে কী চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে তা জানতে চেয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'নানাভাবে প্রচার বাড়ানো হবে। সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ জানানো হবে আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস মেনে চলুন। সাবধান হলে এই ঘটনা আটকানো যাবে। সেইসঙ্গে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা আটকাতে তালগাছের মতো বৃক্ষ বেশি করে লাগাতে হবে।' প্রশ্ন উঠেছে, হবে তো বটে, কিন্তু কে হওয়াবে?