আজকাল ওয়েবডেস্ক: কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন যা জানায়—পুরুষদের জীবদ্দশার দৈর্ঘ্য এবং তাদের বীর্যের মানের মধ্যে সুস্পষ্ট যোগসূত্র থাকতে পারে। প্রায় ৮০,০০০ পুরুষের বীর্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, যাঁদের মোট চলনশীল শুক্রাণুর সংখ্যা প্রতি নির্গমনে ১২০ মিলিয়নের বেশি, তাঁদের গড় আয়ু প্রায় ৮০.৩ বছর। অন্যদিকে যাঁদের শুক্রাণু সংখ্যা ৫ মিলিয়নের কম, তাঁদের গড় আয়ু মাত্র ৭৭.৬ বছর।

এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মহামারীবিদ ড. লার্কে প্রিসকর্ন এবং অ্যান্ড্রোলজিস্ট ড. নিলস ইয়োর্গেনসেন। তাঁদের মতে, “যত উন্নত বীর্যের গুণমান, তত দীর্ঘায়ু পুরুষরা উপভোগ করেন।” ১৯৬৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে, যেসব পুরুষ সন্তান জন্মদানে সমস্যার কারণে চিকিৎসা নিয়েছিলেন, তাঁদের বীর্য নমুনা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা নানা পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেন। এরপর সেই তথ্য ডেনমার্কের জাতীয় স্বাস্থ্য নিবন্ধনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয় কোন কোন পুরুষ কতদিন বেঁচেছিলেন।

আরও পড়ুন: বিরিয়ানির লোভ দেখিয়ে শুষে নেওয়া হত বীর্য! শিকার হতেন ভিখারী ও মাতাল, ভয়াবহ কাণ্ড সেকেন্দরাবাদে


গবেষণায় দেখা যায়, শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে নয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের মতো জীবনযাত্রার ধরণ দিয়েও এই দীর্ঘায়ুর ফারাক ব্যাখ্যা করা যায় না। গবেষকদের মতে, সম্ভবত মাতৃগর্ভে বিকাশকালীন সময়েই কোনও শারীরবৃত্তীয় অনিয়ম এর কারণ হতে পারে, যা পরবর্তীতে বীর্য মান ও পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।

অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজনন জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক জন অ্যাটকেন বলেন, “যদি শুক্রাণুই হয় পুরুষ স্বাস্থ্যের 'ক্যানারি ইন দ্য কোয়ালমাইন', তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এর কারণ কী?” তাঁর মতে, যৌন ক্রোমোজোমে জিনগত ত্রুটি, প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা, হৃদরোগ, দূষণ বা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর পেছনে দায়ী হতে পারে।

ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান পেসি বলেন, “এই গবেষণা আরও একবার প্রমাণ করে দিল, পুরুষদের বীর্য মান যত খারাপ, অসুস্থতা এবং অকালমৃত্যুর ঝুঁকি তত বেশি।” তবে তিনি এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা একথাও বলেন, “যাঁদের শুক্রাণুর মান খারাপ, তাঁদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং তাঁরা যেন স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগান।” গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি Human Reproduction নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এখন গবেষকেরা চেষ্টা করছেন, কোন কোন নির্দিষ্ট রোগ বেশি দেখা যায় নিম্নমানের বীর্য থাকা পুরুষদের মধ্যে—তা চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে আগাম স্বাস্থ্যপরামর্শ দেওয়ার উপায় বের করার।

বীর্যের গুণমান ও পরিমাণ একজন পুরুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর গুরুত্বপূর্ণ সূচক হতে পারে—এই ধারণা এখন গবেষণায় প্রমাণিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক ডেনিশ গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষের বীর্যে সাঁতারু শুক্রাণুর পরিমাণ বেশি, তারা গড়পড়তা ভাবে অন্যদের তুলনায় ২-৩ বছর বেশি বাঁচেন। এতে বোঝা যায়, শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের জন্য নয়, বরং পুরুষের হৃদযন্ত্র, হরমোন ব্যবস্থা, ও প্রতিরোধ ক্ষমতার সার্বিক স্বাস্থ্য প্রতিফলিত হয় বীর্যের মানে। দুশ্চিন্তা, অপর্যাপ্ত ঘুম, ধূমপান, মদ্যপান, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও দূষণ বীর্যের গুণমান কমিয়ে দেয়। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা কেবল প্রজনন নয়, দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার জন্যও জরুরি।