ভারতজুড়ে একসময় আলোড়ন তুলেছিল রাজা রঘুবংশী হত্যা কাণ্ড। নিজের নববিবাহিতা স্ত্রী এবং তার প্রেমিকের হাতে হানিমুনে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন হন ইন্দোরের ব্যবসায়ী রাজা। সেই রহস্য-রোমাঞ্চে মোড়া ভয়াবহ কাণ্ড এখন উঠে আসছে বড়পর্দায়।যেখানে একদিকে আমির খানকে ঘিরে গুজব ছড়ালেও, শেষমেশ জানা গেল, এই চরম বিতর্কিতরিয়েল-ক্রাইম থ্রিলার নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন পরিচালক এস.পি. নম্বওয়াত। ছবির নাম—‘হানিমুন ইন শিলং’।

“জনগণকে বার্তা দিতেই ছবি”—পরিচালক নম্বওয়াতের ঘোষণা। সম্প্রতি দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরিচালক এস.পি. নম্বওয়াত নিশ্চিত করেন,“চিত্রনাট্য তৈরি। ছবিটি সমাজের কাছে একটি সতর্কবার্তা—এমন বিশ্বাসঘাতকতা যেন আর কখনও না ঘটে।”ছবির ৮০ শতাংশ শুটিং হবে ইন্দোরে, বাকি ২০ শতাংশ শুটিং হবে মেঘালয়ের পূর্ব খাসি হিলস জেলার সেই এলাকা যেখানে রাজা রঘুবংশীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল।


কী এই ‘মেঘালয় মার্ডার কেস’? এই ঘটনাটি উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা, যেখানে সন্দেহের তালিকায় উঠে আসে এক সাধারণ মধ্যবিত্ত দম্পতির নাম।রাজা ও সোনম রঘুবংশী, ইন্দোর থেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন মেঘালয়ে। এরপর ঘটে যায় এমন এক হত্যাকাণ্ড, যা পুলিশ, সংবাদমাধ্যম এবং সমাজ—তিন জায়গায়ই ব্যাপক আলোড়ন ফেলে।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদি ছবি বা সিরিজ তৈরি হয়, তাহলে বলাই যায়—এটা হবে বলিউডের পরবর্তী থ্রিলার সেনসেশন।

গত ২৩ মে মেঘালয় থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন রাজা এবং সোনম। ১০ দিন পরে ২ জুন চেরাপুঞ্জির জলপ্রপাতের ধার থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। এরও অনেক পরে উত্তরপ্রদেশের গাজ়িপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় সোনমকে। মেঘালয় পুলিশ জানিয়েছিল, সোনম আত্মসমর্পণ করেছেন। রাজার খুনে তিনিই মূল অভিযুক্ত। এ ছাড়া, তাঁর প্রেমিক রাজ এবং কয়েক জন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, খুনের কাজে সহায়তার জন্য রাজ তাঁদের টাকাও দিয়েছিলেন। তবে তাঁরা ভাড়াটে খুনি নন। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, বিয়ের আগে থেকেই প্রেমিকের সঙ্গে মিলে রাজাকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন সোনম। ইচ্ছা করেই মধুচন্দ্রিমায় যান মেঘালয়ে।

এরপর চলতি মাসে  সেই ঘটনাতেই নতুন তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ। মিলেছে দ্বিতীয় একটি মঙ্গলসূত্র। যা থেকে তদন্তকারীদের অনুমান, সোনম আরও এক বার বিয়ে করে থাকতে পারেন। রাজার দাদা বিপিনও সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। জানিয়েছেন, রাজার মৃত্যুর পরেই হয়তো প্রেমিক রাজ কুশওয়াহাকে বিয়ে করেছিলেন সোনম। দ্বিতীয় মঙ্গলসূত্রটি সেই বিয়েরই প্রমাণ। তবে মঙ্গলসূত্রটি আদৌ সোনমের কি না, কোথা থেকে কোন অবস্থায় তা পাওয়া গিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট করেনি পুলিশ।

“চুপ থাকলে সত্যিটা চাপা পড়ে যাবে”— তাই বড়পর্দায় এই ঘটনাকে তুলে ধরার ব্যাপারে পাওয়া গিয়েছে পরিবারের সম্মতি।  রাজার দাদা সচিন রঘুবংশী সংবাদমাধ্যমে জানান, “আমরা সম্মতি দিয়েছি এই ছবির জন্য। কারণ আমরা চাই, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর আসল সত্যিটা সামনে আসুক। কে ঠিক ছিল আর কে ভুল—সেটা দেশ জানুক।” পরিবারের এই অবস্থান যথেষ্ট স্পষ্ট করে দেয়, ছবিটি নিছক একটি ‘থ্রিলার’ নয়, বরং একটি দায়বদ্ধ স্মারকচিত্র।

অভিনেতাদের নাম গোপন, কিন্তু উত্তেজনা তুঙ্গে। পরিচালক জানিয়েছেন, ছবির কাস্টিং প্রায় চূড়ান্ত, তবে অভিনেতাদের নাম এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। এমনটা মনে করা হচ্ছে, প্রোজেক্টটি জাতীয় স্তরের আগ্রহ জাগাবে, কারণ এটি একটি বাস্তব জীবনের ট্র্যাজিক লাভ স্টোরি, যা রূপ নেয় চক্রান্তে ও হত্যায়।

 ২০১৮-র ‘কবাডি’ ছবিখ্যাত নম্বওয়াত ফিরছেন আরও ভয়াবহ বাস্তব নিয়ে। পরিচালক নম্বওয়াত এর আগে ২০১৮-তে ‘কবাডি’ বানিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। এবার তিনি ফিরছেন একেবারে আন্তরিক কিন্তু রোমহর্ষক বাস্তব কাহিনি নিয়ে। ছবির শুটিং শুরুর কথা শোনা যাচ্ছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই।

এক নজরে এই মোটা বিতর্কিত বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে ছবির তথ্যসমূহের দিকে চোখ ফেরানো যাক:
 
ছবির নাম: হানিমুন ইন শিলং
পরিচালক: এস.পি. নম্বওয়াত 
মূল কাহিনি: রাজা রঘুবংশী হত্যা মামলা
শুটিং লোকেশন: ইন্দোর (৮০%), মেঘালয় (২০%)