আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুম্বাইকে প্রায় 'স্বপ্নের শহর'ই বলা হয়। সম্প্রতি এখানেই এক র্যাপিডো রাইডার বিরাজ শ্রীবাস্তবের গল্প এ কথার মূলে শক্তিশালী এক প্রমাণ। এক সময়ের নামকরা চিত্রপরিচালক এবং প্রশিক্ষিত সংগীতশিল্পী বিরাজ বর্তমানে জীবিকার জন্য র্যাপিডো বাইক চালাচ্ছেন। তাঁর জীবনের এই বিশেষ কাহিনি সামনে এসেছে। তাঁর এই কাহিনি প্রকাশ্যে আসে কনটেন্ট ক্রিয়েটর রত্নম কালরা মুম্বাই শহরে যখন একটি র্যাপিডো রাইড বুক করেন। এই যাত্রা তাঁর কাছে একটি সাধারণ যাত্রা হিসেবে শুরু হলেও কিছুসময় পর তা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়।
সূত্রে জানা গিয়েছে, রাইড চলাকালীন বিরাজ রত্নমের ক্যামেরা দেখে জানতে চান তিনি কি একজন ব্লগার? কালরা জানান, তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। তখন বিরাজ জানান, তিনিও একসময় তাই'ই ছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি তাঁর কাহিনি বলতে শুর করে। 'আমি মুম্বাইয়ে পাঁচ বছর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। এখন পারিবারিক অবস্থা ভালো নয় বলে এই কাজটি পার্ট-টাইম করছি। আমি ড্রামস, কঙ্গা, বঙো, ইউকুলেলে বাজাতে পারি, গাইতেও পারি। কিছুদিন ঠুমরিও শিখেছি। জীবন অনেক দিকে টানে। কিন্তু আমি আমার মৃতুর আগে অবশ্যই আমার স্বপ্ন পূরণ করব। পরিচালকের চেয়ারে বসে বলব ‘রোল ক্যামেরা, অ্যাকশন।’' বলেন বিরাজ।
এরপর তিনি আরও বলেন, 'আমি জীবনে সেই সব কিছু করেছি যা সাধারণত ধনী বাবার সন্তানরা করে থাকে। কিন্তু অনেক সময় জীবনের পরিকল্পনার সঙ্গে সব কিছু মেলে না। আমি যেই জায়গায় পৌঁছাতে চাই, সেটা যেন আমাকে ঢুকতেই দিচ্ছে না। কিন্তু আমি একগুঁয়ে। আমি হাল ছাড়ছি না। আমি সেখানে পৌঁছাবই। আমি দুনিয়া দেখেছি। আমার একাধিক পাসপোর্ট আছে। কিন্তু কে জানে, কখন কোথায় ভাগ্য নিয়ে যাবে আমাকে।'
সম্প্রতি এই বিশেষ যাত্রা নিয়ে ইনস্টাগ্রামে রত্নম কালরা লেখেন, 'আমি র্যাপিডো বুক করেছিলাম। এরপর যাকে পেলাম, সে সত্যিই একজন বিশেষ মানুষ ছিল। সে আমার অ্যাকশন ক্যাম দেখে জানতে চাইল আমি কি ব্লগার। আমি বললাম, আমি একজন ফিল্মমেকার। সে বলল, সেও একসময় তাই ছিল। আমি অবাক হয়ে রইলাম। ওঁর এটি প্রথম র্যাপিডো রাইড ছিল। পার্ট-টাইম হিসেবে এটা শুরু করেছে কিছু বাড়তি রোজগারের জন্য। কিন্তু ওঁ অসাধারণ, একগুঁয়ে, দৃঢ়চেতা এবং খুবই প্রতিভাবান একজন।'
বিরাজের এই হৃদয়স্পর্শী গল্প ভাইরাল হওয়ার পর র্যাপিডো তাদের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মন্তব্য করে, 'কি দারুণ একটি গল্প। আমাদের সঙ্গে এই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, রত্নম। দুই গল্পকারকে একসঙ্গে আনতে পেরে আমরা আনন্দিত। আপনাদের দুজনেরই সৃজনশীল যাত্রার জন্য শুভকামনা।'
এই পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একজন মন্তব্য করেন, 'সফলতার জন্য যে জেদ থাকে, সেটাই পার্থক্য গড়ে দেয়।' আরেকজন লেখেন, 'কখনও কখনও মনে হয় শিল্প নিজে তার সব মূল্য বহন করে না। শিল্পীই সেই অর্থ এনে দেয়। অনেকে কাজের চেয়ে কারা সেটা করেছে, সেটা দেখেই বেশি মুগ্ধ হয়।”
'এই মানুষটি একদিন সফল হবেই, ওর প্রতিভা আছে, এবং আছে এক গভীর ইচ্ছা আছে', লিখেছেন একজন। আরেকটি মন্তব্যে বলা হয়েছে, 'বুঝতে পারছি না, তিনি কষ্টে আছেন না উপভোগ করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর জীবনটা পুরোদমে বাঁচছেন, স্বপ্ন নিয়ে। এটুকুই দেখার।' আরও এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করে লেখেন, 'পুরুষেরা কাজ করে, কাঁদে, কিন্তু হারে না।'
বিরাজ শ্রীবাস্তব জানান, তিনি একসময় জনপ্রিয় টিভি শো 'কুবুল হ্যায়'-এর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। সূত্রে জানা গিয়েছে এই শোতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সুরভি জ্যোতি ও করণ সিং গ্রোভার।
