আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত ১২ জুন আহমেদাবাদের বিখ্যাত বি.জে. মেডিক্যাল কলেজের আবাসনে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৬০ যাত্রী। তবে সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার মধ্যেও জন্ম নেয় এক অবিশ্বাস্য বাঁচার গল্প—এক মায়ের অসীম সাহস ও ভালবাসার কাহিনি। জানা গিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ক্র্যাশ করার সঙ্গে সঙ্গে গোটা হোস্টেল চত্বরে নিমেষে আগুন ধরে যায়। সেই সময় হোস্টেলের বাসিন্দা মণীষা কচ্ছাডিয়া তাঁর আট মাসের ছেলে ধ্যানশকে নিজের শরীর দিয়ে আগুন থেকে আড়াল করে বাঁচান। জ্বলন্ত আগুন আর ঘন ধোঁয়ার মধ্যেও মা শুধুমাত্র তাঁর শিশুসন্তানকে বাঁচাতে লড়াই চালিয়ে যান। ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার সবচেয়ে কনিষ্ঠ জীবিত ব্যক্তি হল ছোট্ট ধ্যানশ। 

জানা গিয়েছে, মণীষার স্বামী কপিল কচ্ছাডিয়া, যিনি বি.জে. মেডিক্যাল কলেজের ইউরোলজির এম.চি.এইচ. কোর্সের ছাত্র। দুর্ঘটনার সময় কপিল হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলেন। আর তাঁর স্ত্রী এবং সন্তান ছিলেন সরকারি বাসভবনে। মণীষা জানান, ‘এক মুহূর্তের জন্য সব অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। তারপরই প্রচণ্ড উত্তাপ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন আমি আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে দৌড়াই। আগুন আর ধোঁয়ার মধ্যে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। মনে হয়েছিল, আমরা বাঁচব না’। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনায় মণীষার মুখ ও হাতের ২৫ শতাংশ পুড়ে যায় এবং ধ্যানশের মুখ, দুই হাত, বুক ও পেটে ৩৬ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার ক্ষত রয়েছে।

আরও পড়ুন: উন্মুক্ত শরীর দেখিয়ে রোজগার, 'রাশিয়ান বৌদির' সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট নিয়ে পুলিশে অভিযোগ নেটিজেনের!

তৎক্ষণাৎ তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ধ্যানশকে ভর্তি করা হয় পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে। রাখা হয় ভেন্টিলেটরের সহয়তায়। তাঁর ক্ষত সারাতে মায়ের দান করা ত্বক ব্যবহার করেন চিকিৎসকরা। মণীষা দ্বিতীয়বারের মতো ঢাল হয়ে ওঠেন তাঁর সন্তানের জন্য। ওই হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. আদিত্য দেশাই বলেন, ‘এই ঘটনা আমাদের সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। চিকিৎসক হিসেবে আমাদের টিমও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে তাদের সুস্থ করে তোলার জন্য’।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছ’জন রোগীর চিকিৎসা বিনামূল্যে করা হয়েছে। প্লাস্টিক সার্জন ডা. রুত্বিজ পারিখ বলেন, ‘শিশুটির নিজের ত্বক এবং তার মায়ের ত্বক একসঙ্গে ব্যবহার করে ক্ষত সারানো হয়েছে। শিশুর বয়স কম হওয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকি ছিল বেশি। প্রতিটি ধাপে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়েছে’। জানা গিয়েছে, মেডিক্যাল টিমে ছিলেন, ডা. স্নেহাল প্যাটেল, ডা. তুষার প্যাটেল এবং ডা. মানসী দন্দনাইক। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ছোট্ট ধ্যানশের ফুসফুসে একপাশে রক্ত জমে গিয়েছিল, ফলে তাঁকে ভেন্টিলেটর সহায়তা দিতে হয় ও একটি ড্রেনেজ টিউব লাগিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। ডা. স্নেহাল জানান, ‘যতক্ষণ না ফুসফুস সম্পূর্ণ প্রসারিত হয়, আমরা তাকে অবজারভেশনে রেখেছিলাম। ধাপে ধাপে উন্নতি হয়েছে’। পাঁচ সপ্তাহের টানা চিকিৎসার পর, মা ও ছেলে—দুজনকেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: স্তন এত ফোলা কেন? অন্তর্বাসের ভিতর উঁকি মারতেই চমকে উঠলেন নিরাপত্তারক্ষী, বিমানবন্দরের মধ্যেই যা ঘটল…