আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্রের মহিলাদের জন্য চালু হওয়া ‘লেড়কি বহিন যোজনা’ প্রকল্পে ধরা পড়ল বড়সড় দুর্নীতি। এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের জন্য হলেও, এক অডিট রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ১৪,২৯৮ জন পুরুষ অনলাইনে নিজেকে মহিলা হিসাবে নথিভুক্ত করে এই প্রকল্প থেকে মোট ২১.৪৪ কোটি টাকার সুবিধা আদায় করেছেন। এই প্রকল্পের আওতায় যাদের আয় বছরে ২.৫ লক্ষ টাকার কম এমন পরিবারের ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মহিলাদের প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই বিজেপি-নেতৃত্বাধীন সরকার এই প্রকল্প শুরু করেছিল ভোট টানার কৌশল হিসেবে।

মহারাষ্ট্রের নারী ও শিশু উন্নয়ন দপ্তরের এক অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র পুরুষরা নয়, আরও অনেকেই আছেন যারা হয়তো এলিজেবল নন কিন্তু এই প্রকল্প থেকে ভুয়োভাবে সুবিধা পেয়েছেন, যার ফলে রাজ্য সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৬৪০ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী, একই পরিবার থেকে সর্বাধিক দু’জন মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। কিন্তু জানা যাচ্ছে, এই নিয়ম ভেঙে ৭.৯৭ লক্ষ মহিলা পরিবারের তৃতীয় সদস্য হিসেবে নাম নথিভুক্ত করেন। এতে রাজ্য সরকারের ক্ষতি হয়েছে ১১৯৬ কোটি টাকা। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ২.৮৭ লক্ষ মহিলা এই প্রকল্পের আওতায় টাকা পেয়েছেন। যেখানে প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী ৬৫ বছর বয়স সীমা রয়েছে এই টাকা পাওয়ার জন্য। এই নিয়ম ভাঙায় ক্ষতি হয়েছে ৪৩১.৭ কোটি টাকা।

১.৬২ লক্ষ মহিলা, যাদের পরিবারে চার চাকার গাড়ি রয়েছে, তারাও প্রকল্প থেকে টাকা পেয়েছেন, যদিও এমন পরিবার এই প্রকল্পে অযোগ্য। রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার জানিয়েছেন, ‘এই প্রকল্প শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য। পুরুষরা কীভাবে উপকৃত হলেন তা তদন্ত করে টাকা পুনরুদ্ধার করা হবে। তারা সহযোগিতা না করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। এদিকে এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে জানিয়েছেন, ‘এই জালিয়াতির পিছনে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। কে ফর্ম পূরণ করতে সাহায্য করেছে? কোন কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্বে ছিল?’ ইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ প্রকল্পে পর্যালোচনার নির্দেশ দেন।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী অদিতি টাটকারে সংশোধনী উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেন। ফেব্রুয়ারিতে ৫ লক্ষ ভুয়ো প্রাপকের নাম বাতিল করা হয়। অদিতি টাটকারে জানান, ‘তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তর জানিয়েছে, ২৬.৩৪ লক্ষ আবেদনকারী প্রকৃতপক্ষে অযোগ্য হয়েও এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছিলেন। কেউ একাধিক প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছিলেন, কেউ একই পরিবারে তিন বা ততোধিক সদস্য, আবার কেউ পুরুষ হয়েও মহিলা পরিচয়ে আবেদন করেছিলেন। জুন ২০২৫ থেকে এসব ক্ষেত্রে টাকা দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে। তবে ২.২৫ কোটি প্রকৃত উপভোক্তাকে জুন মাসের অর্থসাহায্য পাঠানো হয়েছে’। তবে এই জালিয়াতির ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠছে সরকার পরিচালিত ডিজিটাল প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও নজরদারির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।