আজকাল ওয়েবডেস্ক: কখনও কখনও বাস্তবের কিছু ঘটনা কল্পনাকেও হার মানায়। এ যেন তেমনই এক ঘটনা। কোরিয়ান যুদ্ধের সময় এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন ফার্দিনান্ড ডিমারা নামের এক ব্যক্তি। তাঁর কাহিনি শুনলে আজও বিস্ময়ে চোখ কপালে ওঠে বহু মানুষের। কারণ, কোনও রকম চিকিৎসাগত ডিগ্রি ছাড়াই তিনি সার্জেন সেজে নৌসেনার জাহাজে গুরুতর আহত সেনাদের সফল অস্ত্রোপচার করেছিলেন!
ঘটনাটি ঘটে ১৯৫০-এর দশকে, কোরিয়ান যুদ্ধের সময়। কানাডার নৌসেনা জাহাজ এইচএমসিএস কায়ুগা-তে সার্জেন হিসেবে নিযুক্ত হন চিকিৎসক জোসেফ সায়ার। কিন্তু তাঁর আসল পরিচয় ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তিনিই সেই ফার্দিনান্ড ডিমারা। প্রতারক হলেও অবিশ্বাস্য সব গুণের অধিকারী ছিলেন তিনি।
প্রাথমিক ভাবে কোনও সমস্যা না হলেও, যুদ্ধ ঘোষণা হতেই ফাঁপরে পড়েন ডিমারা। চিকিৎসা বিদ্যায় কোনও রকম প্রশিক্ষণ ছিল না তাঁর। এই অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গুলিবিদ্ধ বেশ কয়েকজন সেনাকে নিয়ে আসা হয় জাহাজে। সময়ের তাগিদে ডিমারার পরিচয় নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তোলার সুযোগই পাননি। পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত সংকটজনক। কিন্তু তখন ডিমারা যা করলেন তিনি, তা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
কিছুক্ষণের জন্য একটি ঘরে নিজেকে তালাবন্ধ করে ফেলেন ডিমারা। সঙ্গে ছিল একটি সার্জিক্যাল টেক্সটবুক। যা কার্যত সার্জারির নোটবই ছাড়া কিছুই নয়। দ্রুত পাতা উলটে ডিমারা পড়ে ফেললেন অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুরু করলেন অস্ত্রোপচার গুলির ক্ষত পরিষ্কার করা, বুলেট বার করা, এমনকি বুকের সার্জারিও! বিস্ময়কর ব্যাপার হল সেই জাহাজে মোট ১৬ জনের অস্ত্রোপচার করেন তিনি, আর প্রতিটি অপারেশনই সফল হয়। প্রাণে বেঁচে যান সকলেই। সম্ভবত তাঁর ধীর স্থির চিত্ত, আত্মবিশ্বাস এবং অবিশ্বাস্য রকমের স্মৃতিশক্তিই তাঁকে সফল করে তোলে।
কিন্তু এই ঘটনা ছিল হিম শৈলের চূড়া মাত্র। প্রতারনা ডিমারার কাছে ছিল নেশার মতো। সেনা থেকে ফিরে ফার্দিনান্ড ডিমারা তাঁর জীবনে আরও বহুবার ছদ্মবেশ নেন। কী সাজেননি তিনি? কারাগারের ওয়ার্ডেন, মনোবিজ্ঞানী, গির্জার সন্ন্যাসী, স্কুলশিক্ষক, এমনকি একবার এক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, ডিমারার লক্ষ্য কখনওই অর্থ বা সম্পদ ছিল না। মানুষকে ঠকিয়ে টাকা পয়সা হাতানোর মতলব তাঁর ছিল না। বরং তিনি চেয়েছিলেন শ্রদ্ধা ও প্রশংসা। মানুষ যেন তাঁকে দেখে মুগ্ধ হয়, সম্মান করে, এই ছিল তাঁর আসল উদ্দেশ্য।
তাঁর রোমাঞ্চকর জীবন কাহিনি পরবর্তীকালে হলিউডের পর্দাতেও উঠে আসে। ১৯৬১ সালে তৈরি হয় দ্য গ্রেট ইমপোস্টার নামে এক জনপ্রিয় ছবি। ছবিতে ডিমারার ভূমিকায় অভিনয় করেন টনি কার্টিস। আজও ফার্দিনান্ড ডিমারা ইতিহাসে পরিচিত এক অনন্য চরিত্র হিসেবে। একদিকে অসাধারণ মেধা ও সাহসিকতার প্রতীক, অন্যদিকে প্রতারণার নিখুঁত উদাহরণ।
