আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুই দশক আগে দেখতে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সাপ বার্বাডোজ থ্রেডস্নেকের ফের হদিশ পেলেন বিজ্ঞানীরা। আজ থেকে ২০ বছর আগে শেষবার দেখা গিয়েছিল এই বিরল প্রজাতির সাপটিকে। পূর্ণ বয়সে ১০ সেন্টিমিটারের বেশি লম্বা হয় না সাপটি। নুডলসের মতো সরু এই সাপটি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। মার্চ মাসে বার্বাডোসের পরিবেশ মন্ত্রক এবং সংরক্ষণ অলাভজনক সংস্থা রি:ওয়াইল্ডের নেতৃত্বে একটি অভিযানে বাস্তুসংস্থান সমীক্ষার সময় মধ্য বার্বাডোসের একটি পাথরের নীচে এই সরীসৃপটিকে উদ্ধার করা হয়।
বার্বাডোস থ্রেডস্নেক একসময় বিশ্বব্যাপী ‘বিজ্ঞানের কাছে হারিয়ে যাওয়া’ ৪,৮০০ প্রজাতির মধ্যে তালিকাভুক্ত ছিল। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সাপটিকে আর দেখা যায়নি।
রি:ওয়াইল্ডের ক্যারিবিয়ান প্রোগ্রাম অফিসার জাস্টিন স্প্রিংগার বলেন, গাছের শিকড়ে জড়িয়ে থাকা একটি পাথর উল্টে দেওয়ার সময় তিনি তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে মজা করছিলেন, ঠিক তখনই তিনি চিৎকার করে বললেন, "আমি একটি থ্রেডস্নেকের গন্ধ পাচ্ছি।" তিনি বলেন, "যখন তুমি নতুন জিনিস খুঁজতে এত অভ্যস্ত হও এবং তুমি সেগুলি দেখতে না পাও, কিন্তু যখন তুমি আসলে সেটা খুঁজে পাও তখন তুমি হতবাক হয়ে যাও।"

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রকল্প কর্মকর্তা কনর ব্লেডস, যিনি জাস্টিন স্প্রিংগারের সঙ্গে সাপ এবং অন্যান্য বিরল বার্বাডোসীয় সরীসৃপ অনুসন্ধানে এক বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছিলেন, এই আবিষ্কারটি তার জন্য রোমাঞ্চকর। তিনি বলেন, "থ্রেডস্নেকের সংখ্যা খুব বেশি নয়, আমি তাদের সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার ক্ষমতা নিয়ে চিন্তিত, বিশেষ করে যদি তাদের আবাসস্থল হুমকির মুখে পড়েছে।“
আরও পড়ুন: ম্যানহোলের ঢাকনা গোলাকার কেন? এগুলি চৌকো হলে কি খুব অসুবিধা হতে পারে?
১৮৮৯ সালে প্রথম রেকর্ড করা বার্বাডোস থ্রেডস্নেক যৌন প্রজনন করতে পারে বলে জানা গিয়েছে। স্ত্রী সাপ একবারে মাত্র একটি ডিম পাড়ে। সাপটি যৌন মিলন ছাড়াই প্রজননে সক্ষম। সরীসৃপ জগতে এটি বিরল ঘটনা যেখানে কিছু প্রজাতি মিলন ছাড়াই প্রজনন করতে পারে। পাঁচ শতাব্দীরও বেশি সময় আগে উপনিবেশ স্থাপনের পর থেকে কৃষি উন্নয়নের কারণে বার্বাডোজ তার ৯৮ শতাংশ স্থানীয় বনাঞ্চল হারিয়েছে। সংরক্ষণবাদীরা আশঙ্কা করছেন যে আবাসস্থলের ক্ষতি এবং আক্রমণাত্মক প্রজাতি আবারও থ্রেডস্নেককে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
জাস্টিন স্প্রিংগার বলেন, “সাপের পুনরাবিষ্কার আমাদের সকলের কাছে বার্বাডোজের বনাঞ্চলকে বিশিষ্ট করে তুলেছে এবং তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন। শুধু সাপের জন্যই নয়, অন্যান্য প্রজাতির জন্যও। উদ্ভিদ, প্রাণী এবং আমাদের ঐতিহ্যের জন্যও।”
এটি লেপ্টোটিফলোপিডি পরিবারভুক্ত এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের বার্বাডোজে দ্বীপে এটি দেখতে পাওয়া যায়। পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী ব্লেয়ার হেজেস এটি আবিষ্কার করেন। হেজেস তার স্ত্রী, কার্লা অ্যান হেস-এর নাম অনুসারে সাপটির বৈজ্ঞানিক নামের শেষের অংশ নামাঙ্কিত করেন। হেসের স্ত্রী পেশায় একজন সর্পবিদ এবং তিনিও এই অভিযান দলের একজন সদস্য ছিলেন। সূত্র হিসেবে এই প্রজাতির নমুনা ইতোমধ্যেই লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে ও ক্যালিফোর্নিয়ার একটি জাদুঘরে পাঠানো হয়েছিলো কিন্তু তারা এটিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়। এই পরিবারের আরও একটি প্রজাতি পাওয়ায় ক্যারিবিয়ারই দ্বীপ মার্তিনিতে।[২]
