গত কয়েক দশকে হু হু করে বেড়েছে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা। এক সময় মনে করা হত ডায়াবেটিস বয়স্কদের রোগ। কিন্তু বর্তমানে ৩০ পেরতে না পেরতেই ভোগাচ্ছে ব্লাড সুগার। এই রোগটি তখনই হানা দেয় যখন আমাদের শরীর কম ইনসুলিন তৈরি করতে শুরু করে অথবা সেই ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মাফিক ওষুধের সঙ্গে আরও কয়েকটি খাবারের উপর ভরসা রাখতে পারেন। নিয়মিত সেই সব খাবার খেলেই ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
* মেথিঃ মেথির বীজে ফাইবার এবং অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান থাকে। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এক চা চামচ মেথির বীজ সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই জল পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। মেথিতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার গ্লুকোজ শোষণের গতি কমিয়ে দেয়।
* দারচিনিঃ দারচিনিতে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে কার্যকর। দারচিনির একটি ছোট টুকরো জলে ফুটিয়ে খেলে গ্লুকোজ বিপাক উন্নত হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরও পড়ুনঃ কড়া ডায়েট-এক্সারসাইজ নয়, চ্যাটজিপিটির কামালেই ছয় মাসে ২৭ কেজি কমল ওজন! কীভাবে হল এই অসাধ্য সাধন?
* আমলকিঃ আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং পলিফেনল থাকে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সকালে টাটকা আমলকি বা আমলকির রস খেলে গ্লুকোজ বিপাক ভাল হয়। আমলকির রসের চেয়ে গোটা আমলকি খেলে শরীরে বেশি ফাইবার যাবে।
* হলুদঃ হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন উপাদান ইনসুলিন ‘রেজিস্ট্যান্স’ কমাতে সহায়তা করে। এটি প্রদাহ কমায় ও রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।সকালে হালকা গরম জলে এক চিমটে হলুদ মিশিয়ে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। হলুদের কারকিউমিন যৌগ গোলমরিচের সঙ্গে খেলে স্বাস্থ্যগুণ আরও বেড়ে যায়। এটি প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করতে পারে।
* তুলসীঃ তুলসি বরাবরই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এক সুবিশাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি নিরাময়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তুলসির জুড়ি মেলা ভার। সঙ্গে ডায়াবেটিস রক্তে শর্করা অর্থাৎ গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম জলে কয়েকটি তুলসি পাতা দিন। দুই থেকে তিন মিনিট সেই জল ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। এই তুলসি চা খেলে ডায়াবেটিসে উপকার পাবেন।

* অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরার মধ্যে লেকটিন, ম্যাননান্স ও অ্যানথ্রাকুইনোনের মতো বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ রয়েছে। এসব উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। মূলত, এগুলো অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে এবং শারীরিক প্রদাহ কমায়।
* নিমপাতাঃ নিমপাতায় রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েডস, ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক। এই সংবেদনশীলতাই ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণে মূল চাবিকাঠি। রোজ সকালে খালি পেটে কয়েকটি নিমপাতা চিবিয়ে খেলে কিংবা নিমপাতার রস খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেকটাই স্থিতিশীল থাকে।
