আজকাল ওয়েবডেস্ক: হাসিনা জমানা নেই, হাসিনাও নেই সেখানে। কাজের বছর ঘোরার মোড়ে দাঁড়িয়ে এখন বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার একে একে বদল করছে মুজিব-কন্যার আমলের নিয়ম। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বদলে যাবে হাসিনার আমলের ‘সম্বোধন’ নিয়ম। এতদিন বাংলাদেশে পুরুষ আধিকারিকদের সঙ্গে মহিলা আধিকারিকদেরও ‘স্যার’ বলেই সম্বোধন করা হত।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পর, প্রথমে এই ‘স্যার’ সম্বোধনের নিয়ম শুরু করেন নিজের জন্য। তখন সকল আধিকারিক তাঁকে স্যার বলেই সম্বোধন করতেন। পরিবর্তী কালে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, কেবল তাঁকেই নয়, প্রশাসনের সকল মহিলা আধিকারিক, পদাধিকারীদের স্যার বলেই সম্বোধন করা হবে। সম্মান, সম্বোধনে তিনি হয়তো ফারাক রাখতে চাননি।
তবে এই সম্বোধন সমাজের জন্য যথাযথ মনে করছেন না ইউনূস। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদ মনে করছে, এই নিয়ম সামাজিক এবং প্রতিষ্ঠানগত ভাবে যথাযথ নয়। একই নিয়ম কাম্য নয় বলেও মত কমিটির। আর সেই কারণেই বদল আসছে নিয়মে। অর্থাৎ এবার থেকে বাংলাদেশের মহিলা পদাধিকারীদের আর ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করার রীতি থাকছে না।
তাহলে কী বলে সম্বোধন করা হবে? তা ঠিক করবে কমিটি। বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ‘স্যার’-এর বদলি কোনও শব্দের। এক মাসের মধ্যে বদলি শব্দ জমা দেওয়া হবে ইউনূসের কাছে। তার পরেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জানানো হবে তা।

জুলাই আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থান, মৃত্যু, সরকারের পতন, মুজিব অবমাননা সব পেরিয়ে বছর ঘোরার পর পদ্মাপার নির্বাচনের বদলে দেখছে কেবল নিয়ম বদল। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছিল গত বছরে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এতটাই তীব্র ছিল, দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। হাসিনা-সরকারের পতনের পর সোনার বাংলাদেশ হয় সেনার বাংলাদেশ। সেনা শাসনের অব্যবহিত পরেই বাংলাদেশে তৈরি হয় অন্তবর্তী সরকার।
বাংলাদেশে অন্তবর্তী সরকার এবং তার প্রধান উপদেষ্টা পদে ইউনূস বসার পর থেকেই, নির্বাচনের দাবি তোলেন সে দেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও, কেবল সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে উল্লেখ্য, ২০২৪-এর জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুজিব-কন্যা, সেই অভিযোগ উঠে আসে। মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ছাড়াও অভিযুক্ত হন আরও দুজন। তাঁরা হলেন সে দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের প্রাক্তন আইডিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের প্রাক্তন আইডিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক বলে ঘোষণা করে আদালত।
২০২৪-এর জুলাই মাসে কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয় বাংলাদেশ। সরকারি চাকরিতে লাগু কোটা নিয়েই ক্ষোভ দেখান হাজার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যায় হাসিনার এক মন্তব্যে। বাংলাদেশের রাস্তায় কাতারে কাতারে মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়। আন্দোলন দীর্ঘদিনের। একগুচ্ছ দাবি নিয়ে উত্তাল হয় পরিস্থিতি। প্রাণ যায় বহু মানুষের। এই পরিস্থিতিতে ২০২৪-এর আগস্টে বাংলাদেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তারপর থেকে দেশের বাইরে তিনি। প্রায় একবছর ভারতেই মুজিব-কন্যা।
