আজকাল ওয়েবডেস্ক: মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রবিবার ইস্থমাস অব তেহুয়ান্তেপেক অঞ্চলে যাত্রীবোঝাই একটি ট্রেন সেতুর উপর থেকে লাইনচ্যুত হয়ে পড়লে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরও ৯৮ জন। দুর্ঘটনাটি ঘটে ওয়াহাকা রাজ্যের নিজান্দা শহরের কাছে, যেখানে দুর্গম পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির মধ্যে দিয়ে রেললাইনটি অতিক্রম করেছে।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটি ছিল ‘ইন্টারওশানিক ট্রেন’, যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় বন্দর সালিনা ক্রুজ থেকে যাত্রা শুরু করে মেক্সিকো উপসাগরের কোয়াটজাকোয়ালকোসের দিকে যাচ্ছিল। ট্রেনটিতে মোট ২৪১ জন যাত্রী এবং ৯ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। একটি তীব্র বাঁক অতিক্রম করার সময় হঠাৎ করেই ট্রেনের একাধিক বগি প্রচণ্ডভাবে দুলে উঠে লাইনচ্যুত হয়। কয়েকটি বগি সেতুর ধারে আংশিক উল্টে গিয়ে গভীর খাদ বরাবর ঝুলে পড়ে, যা যাত্রীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
মেক্সিকোর নৌবাহিনীর সচিবালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অধিকাংশ আহত যাত্রীকে মাতিয়াস রোমেরো ও সালিনা ক্রুজের মেক্সিকান সোশ্যাল সিকিউরিটি ইনস্টিটিউট (IMSS)-এর হাসপাতালগুলিতে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া জুচিতান ও ইক্সতেপেক শহরের IMSS-ওয়েলবিয়িং স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও বেশ কয়েকজন আহতের চিকিৎসা চলছে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম পার্দো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বার্তায় দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে গভীর শোকপ্রকাশ করেন। তিনি জানান, নিহতদের পরিবার ও আহতদের পাশে দাঁড়াতে তিনি নৌবাহিনীর সচিব এবং মানবাধিকার বিষয়ক উপসচিবসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের অবিলম্বে দুর্ঘটনাস্থলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেশজুড়ে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের সমন্বয় করছে বলেও তিনি জানান। প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম ওয়াহাকা রাজ্যের গভর্নর সালোমন জারা ক্রুজ ও তাঁর প্রশাসনের সহযোগিতার কথাও স্বীকার করেন।
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া যাত্রীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যান। স্থানীয় ও ফেডারেল প্রশাসন যৌথভাবে চিকিৎসক দল, অ্যাম্বুল্যান্স ও জরুরি ত্রাণ সামগ্রী মোতায়েন করে। ওয়াহাকার গভর্নর সালোমন জারা ক্রুজ এই ঘটনায় ‘গভীর দুঃখ ও শোক’ প্রকাশ করে জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহায়তা দিতে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করছে।
এদিকে মেক্সিকোর অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে। যান্ত্রিক ত্রুটি, রেললাইনের অবস্থা কিংবা গতি নিয়ন্ত্রণে গাফিলতি সব দিকই তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
উল্লেখ্য, ইন্টারওশানিক রেল করিডরটি দুই বছর আগে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেস ওব্রাদরের আমলে উদ্বোধন করা হয়। দক্ষিণ মেক্সিকোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং যাত্রী পরিবহণকে নতুন গতি দেওয়ার লক্ষ্যে এই প্রকল্পকে একটি কৌশলগত পরিকাঠামো হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সেই ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্পের উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিল।
বর্তমানে প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য আহতদের চিকিৎসা এবং নিহতদের পরিবারকে মানসিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান। একই সঙ্গে এই দুর্ঘটনা ওয়াহাকার কঠিন ভূপ্রকৃতির মধ্যে দিয়ে চলা এই গুরুত্বপূর্ণ রেলপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির দিকটি নতুন করে সামনে এনে দিল। ভবিষ্যতে এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা এড়াতে রেল নিরাপত্তা মানদণ্ডে কোনওরকম আপস না করার দাবিও জোরালো হচ্ছে।
