আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওসমান হাদির মৃত্যুর পর থেকে বাংলাদেশে অস্থিরতা অব্যাহত। জারি সংখ্যাললধুদের উপরও নির্যাতনও। এবার জ্বালিয়ে দেওয়া হল হিন্দু মালিকানাধীন একটি বাড়ি। ঘটনাটি গত শনিবার (২৭শে ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পিরোজপুরের ডুমরিতলা গ্রামে ঘটেছে। অভিযোগ, গ্রামের সাহা পরিবারের বাড়িটিকে নিশানা করে দুবৃত্তরা। ওই বাড়ির বেশ কয়েরকটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘরের মধ্যে থানা জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। 

এক্স-পোস্টে বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, 'পিরোজপুরের ডুমরিতলা গ্রামে সাহা পরিবারের বাড়ির পাঁচটি ঘর হিন্দুবিদ্বেষী জিহাদিরা পুড়িয়ে দিয়েছে। ভোররাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে ছিল, তখন তারা বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।'

তসলিমা আরও লিখেছেন, 'চট্টগ্রামের রাউজানেও জিহাদিরা একইভাবে ভোরবেলা হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দিয়েছিল। দেশের বাকি সব হিন্দুর বাড়িও কি এভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হবে? তারা হিন্দুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে চায়; একারণেই মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তারা আগুন দেয়। ইউনূস কি শুধু বাঁশি বাজাচ্ছেন?' 

গত সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাছে একটি হিন্দু মালিকানাধীন বাড়িতে দুবৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা জানান, ভোররাতে আগুনের তাপে তাদের ঘুম ভেঙে যায়, কিন্তু দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া থাকায় তাঁরা প্রথমে ভেতরে আটকা পড়েন।

দুই পরিবারের আট সদস্য টিনের চাল ও বাঁশের বেড়া কেটে পালাতে সক্ষম হলেও তাদের গৃহস্থালীর জিনিসপত্র পুড়ে যায় এবং পোষা প্রাণীগুলো মারা যায়। এই ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছে, অভিযান চালিয়ে পাঁচজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকি অভিযুক্তদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

বাড়িতে আগুন দেওয়ার সঙ্গেই হাতে লেখা পোস্টারে হিন্দুদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল দুবৃত্তরা। বাংলায় লেখা ওই হুমকি পোস্টারে হিন্দুদের বিরুদ্ধে 'ইসলাম ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে' কাজ করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, এ ধরণের কার্যকলাপ চলতে থাকলে অমুসলিমদের বাড়িঘর, সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান 'রেহাই পাবে না।'

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাউজানের তিনটি স্থানে পাঁচ দিনের মধ্যে সাতটি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে এবং এই ধরনের "জঘন্য অপরাধের" অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামাজিক নজরদারি জোরদার করতে পুলিশ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছে।

গত ১২ ডিসেম্বর ভারতের তীব্র সমালোচক ছাত্রনেতা ওসমান হাদিকে অজ্ঞাত পরিচয় বন্দুকধারীরা মাথায় গুলি করলে বাংলাদেশজুড়ে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। তাঁকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই তিনি মারা যান।

এরপর হাজার হাজার সমর্থক ঢাকার রাস্তায় নেমে আসে এবং ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর মতো সংবাদমাধ্যম কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। ময়মনসিংহে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে উন্মত্ত জনতা কারখানার কর্মী হিন্দু সম্প্রদায়ের দীপু চন্দ্র দাসকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয়। এই নৃশংসতায় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়।

এরপর বুধবার তোলাবাজির অভিযোগে অমৃত মণ্ডল নামে আরেক হিন্দু ব্যক্তিকে জনতা পিটিয়ে হত্যা করে। মঙ্গলবার ইউনূসের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, "অভিযোগ, গুজব বা বিশ্বাসের ভিন্নতা কোনোভাবেই হিংসার অজুহাত হতে পারে না এবং কোনও ব্যক্তিরই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার নেই।"

নিউইয়র্ক টাইমস ২০২৫ সালের আগস্ট মাসের এক প্রতিবেদনে বলেছে, জুলাই অভ্যুত্থান নামে পরিচিত ছাত্রনেতৃত্বাধীন হিংস্র আন্দোলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি একটি "রাজনৈতিক শূন্যতা" তৈরি করেছে, যার ফলে সামাজিক ক্ষেত্রে উগ্র ডানপন্থী শক্তির উত্থান ঘটেছে।