আজকাল ওয়েবডেস্ক: "প্রতিটি ক্রিয়ার বিপরীতে সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া"—এই আপ্তবাক্যটা আমরা সবাই মুখস্থ জানি। স্কুলের পাঠ্যবই থেকে রকেট সায়েন্স পর্যন্ত নিউটনের তৃতীয় সূত্র আজও বিজ্ঞান শিক্ষার স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণা যেন সেই ভিত্তিতেই ফাটল ধরাল। গবেষকরা জানাচ্ছেন, মানব শুক্রাণু নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে ‘অমান্য’ করে তরলে সাঁতার কাটে। যেখানে লজিক বলে, শুক্রাণুর লেজ যখন ঘন তরলে চাপ দেয়, তখন তরলেরও সেই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত—ফলে শুক্রাণুর গতি কমে যাওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, শুক্রাণু তরলের বাধা ডিঙিয়ে অনায়াসেই এগিয়ে যাচ্ছে, যেন কোনও প্রতিরোধই নেই!
এই অদ্ভুত আচরণের পেছনে রয়েছে একধরনের আশ্চর্য ‘স্থিতিস্থাপকতা’, যাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন “Odd Elasticity”। শুক্রাণুর লেজ এমনভাবে দুলে যে, তারা ঢেউয়ের মতো চলাফেরা করে শক্তি অপচয় না করেই এগিয়ে যায়। ফলে তারা তৈরি করে এক বিশেষ ধরণের "non-reciprocal interaction"—যেখানে প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে প্রত্যাশিত বল তৈরি হয় না।
এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা শুনে প্রশ্ন উঠতেই পারে—তবে কি নিউটনের সূত্র ভুল? গবেষকরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, না, নিউটনের সূত্র মোটেই ভুল নয়। তবে তা প্রযোজ্য বড় স্কেলের, ভারসাম্যপূর্ণ ও ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স-নির্ভর পরিবেশে। আণবিক ও কোষীয় স্তরে এই নিয়ম ভেঙে যেতে পারে, বিশেষ করে যখন সিস্টেমটি ‘নন-ইকুইলিব্রিয়াম’ অবস্থায় থাকে। বিজ্ঞানীদের এই পর্যবেক্ষণ শুধু তাত্ত্বিক নয়, ভবিষ্যতে বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃত্রিম প্রজনন এবং মাইক্রো রোবটিক্সের গবেষণায় তা দারুণ কাজে আসতে পারে। কারণ, সেখানে তরল পরিবেশে ছোট যন্ত্র বা কোষকে সহজে চালানো এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
তাই বলা যায়, নিউটনকে বাতিল নয়, বরং আপাতত বিরতির ঘরে পাঠানো হচ্ছে কোষীয় রাজত্বে। আর মানবদেহের ভেতরেই লুকিয়ে রয়েছে এমন সব বিস্ময়, যা আজও বিজ্ঞানকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
