আজকাল ওয়েবডেস্ক: নাগপুরে ভীরা সত্যিধার স্মরণসভায় ফৈয়াজ আহমেদ ফৈজের কবিতা 'হাম দেখেঙ্গে' গাওয়াকে কেন্দ্র করে সংগঠক ও বক্তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ সহ একাধিক ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। এই ঘটনা সাংস্কৃতিক পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
১৩ মে, বিদর্ভ সাহিত্য সংঘে আয়োজিত স্মরণসভায় অভিনেতা ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ভীরা সত্যিধারের স্মৃতিচারণ করতে এসেছিলেন সমাজকর্মী উত্তম জাগিরদার। অনুষ্ঠানে মুম্বইয়ের সংস্কৃতি সংগঠন সমতা কালা মঞ্চ-এর তরুণরা গেয়েছিলেন ফৈয়াজের ‘হাম দেখেঙ্গে’। মূল অভিযুক্ত হিসেবে কারও নাম এফআইআরে না থাকলেও সংগঠক ও বক্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
নাগপুরের বাসিন্দা দত্তাত্রেয় শিরকে অভিযোগ জানান। তাঁর দাবি, “যখন ভারত পাকিস্তানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়ছে, তখন নাগপুরে বামপন্থীরা পাকিস্তানি কবি ফৈয়াজের কবিতা গাইছে।” শিরকে বিশেষ করে “তখ্ত হিলানে কি জ়রুরত হ্যায়” পংক্তিকে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন।
নতুন ভারতীয় দণ্ডবিধি (BNS)-এর ১৫২ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালে ১২৪এ ধারার (রাষ্ট্রদ্রোহ) প্রয়োগে স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তবু নতুন আইনেও এই ধারা কার্যত বজায় রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ধারা ১৯৬ (সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা ছড়ানো) ও ৩৫৩ (জনস্বার্থে অশান্তি সৃষ্টি) ধারাও প্রয়োগ করা হয়েছে।
এই মাসেই নাগপুরে আরেকটি ঘটনায় ২৬ বছর বয়সি কেরলের সাংবাদিক রেজাজ এম. শিব সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে। তাঁর বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ভীরা সত্যিধার জীবদ্দশায় পুলিশের নজরে ছিলেন। ২০১৩ সালে 'কোর্ট' ছবির শ্যুটিংয়ের সময় পুলিশ তাঁকে “নাগপুরের নকশাল” হিসেবে খুঁজে বের করেছিল। মৃত্যুর আগেও RSS-এর বিরুদ্ধে মুখ খোলায় তাঁর বাড়ি তল্লাশি চালানো হয়।
বর্তমান সরকার যে ‘আর্বান নকশাল’ তত্ত্বকে আইনি রূপ দিতে চায়, এই ঘটনাগুলো তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত।
