আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড়। আসন্ন পিম্পরি–চিঞ্চওয়াড় মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (PCMC) নির্বাচনে একসঙ্গে লড়ার ঘোষণা করল অজিত পওয়ার নেতৃত্বাধীন এনসিপি এবং শরদ পওয়ার নেতৃত্বাধীন এনসিপি (এসপি)। এই ঘোষণার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে কার্যত আবার এক ছাতার নিচে এল পওয়ার পরিবার।

রবিবার পিম্পরি–চিঞ্চওয়াড়ে এক নির্বাচনী জনসভায় মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার বলেন, “পরিবার আবার একসঙ্গে হয়েছে। পুরসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার সময় দুই পক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে একত্রে লড়াই করার। অনেক প্রশ্ন উঠছে এই সিদ্ধান্তের ফলাফল নিয়ে, কিন্তু কখনও কখনও মহারাষ্ট্রের উন্নয়নের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়।”

তিনি আরও জানান, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে। অজিত পওয়ারের বক্তব্যে বিশেষ তাৎপর্য ছিল প্রতীক নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ঘড়ি’ (এনসিপি) এবং ‘তুতারি’ (এনসিপি–এসপি) এবার একসঙ্গে বাজবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রতীকী ভাষাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে অন্তত পুরসভা স্তরে দুই এনসিপির বিভাজন আপাতত মিটে গেল।

প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রের ২৯টি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নির্বাচন আগামী ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে পিম্পরি–চিঞ্চওয়াড় ও পুনে- দুটি শিল্প ও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নগর সংস্থা। ভোট গণনা হবে ১৬ জানুয়ারি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ৩০ ডিসেম্বর।

এদিকে পুনে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়েও দুই এনসিপি শিবিরের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে এখানেই রাজনীতির সমীকরণ আরও জটিল। সূত্রের খবর, গত এক সপ্তাহ ধরে অজিত পাওয়ার শিবিরের সঙ্গে শরদ পাওয়ার শিবিরের যে আলোচনা চলছিল, তা শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে। অভিযোগ, অজিত পওয়ার কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি এবং শরদ পওয়ার নেতৃত্বাধীন এনসিপি (এসপি)-র তোলা গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলিতেও সম্মতি দেননি।

এই প্রেক্ষাপটে শনিবার শরদ পওয়ার নেতৃত্বাধীন এনসিপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুনে পুরভোটের জন্য আবার মহাবিকাশ আঘাডি (এমভিএ)-র সঙ্গে আলোচনায় ফিরবে। উল্লেখ্য, এনসিপি–এসপি, কংগ্রেস ও শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) জোটই এমভিএ। এর আগে এনসিপি–এসপি যদি অজিত পাওয়ার শিবিরের সঙ্গে হাত মেলায়, সেই সম্ভাবনায় পুনে এমভিএ-র অন্দরে তীব্র টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। এমনকি কংগ্রেস ও শিবসেনা (ইউবিটি) যৌথভাবে নির্বাচনে লড়ার কথাও ভাবতে শুরু করেছিল।

এখন এনসিপি–এসপি পুনরায় এমভিএ-তে সক্রিয় হওয়ায় তিন দলের মধ্যে সমন্বয় বৈঠক আবার শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, পিম্পরি–চিঞ্চওয়াড়ে পওয়ার পরিবারের ঐক্য এবং পুনেতে এমভিএ-র পুনর্গঠন- এই দুই প্রবণতা একসঙ্গে মহারাষ্ট্রের নগর রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে চলেছে।

সব মিলিয়ে, আসন্ন পুরসভা নির্বাচন শুধু স্থানীয় প্রশাসনের প্রশ্ন নয়, বরং রাজ্যের বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তি-সমীকরণ নির্ধারণের ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। পওয়ার পরিবারের এই ‘পুনর্মিলন’ শেষ পর্যন্ত কতটা স্থায়ী হয় এবং তার প্রভাব পুনে ও পিম্পরি–চিঞ্চওয়াড়ের ভোটবাক্সে কীভাবে পড়ে, সেদিকেই এখন তাকিয়ে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহল।