নিজস্ব সংবাদদাতা: যেন এক নিখুঁত চিত্রনাট্যের রহস্যময় জাল—যেখানে প্রতিটি চরিত্র একেকটা ধাঁধার অংশ, আর প্রত্যেকেই সন্দেহের ছায়ায় ঢাকা। বাইরে থেকে আলাদা মনে হলেও, প্রত্যেকেই ধীরে ধীরে গল্পের কেন্দ্রে উঠে আসে, খুলতে থাকে রহস্যের একের পর এক স্তর। কখনও তারা নির্দোষ, তো পরমুহূর্তেই সন্দেহজনক। গল্প যত এগোয়, ততই বদলায় আলোর রঙ, প্রতিফলনের মতো চরিত্রের রূপ।

এই ছবির প্রতিটি চরিত্র যেন সাজানো গেম বোর্ডের চালে রাখা একেকটা চালাক ঘুঁটি—কেউই পুরোপুরি ভালো না, আবার কেউ নিখাদ খলনায়কও নয়। প্রত্যেকের অতীত, আকাঙ্ক্ষা, আর ভেতরের টানাপোড়েন জড়িয়ে রয়েছে মূল কাহিনির সঙ্গে। আর এই চরিত্রদের পরিচয় যত গভীর হয়, ততই বাড়ে উত্তেজনা।

এবার এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক এই রহস্য গল্পের কেন্দ্রের চরিত্রগুলো—

একেন বাবু: আনির্বাণ চক্রবর্তী আবার ফিরেছেন একেন বাবুর চরিত্রে — সেই চেনা হাসিখুশি গোয়েন্দা, যাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর দুর্দান্ত পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা গল্পের চালচিত্র পালটে দিতে পারে মুহূর্তে। বেড়াতে এসে তিনি আবার পড়ে গেলেন গা ছমছমে এক কেসে। বেনারসের গলি, ঘাট আর ধোঁয়ার মাঝে একেন বাবুর সামনে একে একে খুলতে থাকে মৃত্যুর ছায়া আর রহস্যের দলিল।

 

 

বাপি: সুহোত্র মুখোপাধ্যায়ের বাপি — একেন বাবুর পুরনো সঙ্গী, যার ঠান্ডা মাথা আর যুক্তির জোর অনেক সময়ে একেন বাবুকে পথ দেখায়। কিন্তু বেনারসের কুয়াশা যখন ঘনিয়ে আসে, তখন কি বাপি পারবেন নিজের অবস্থান ধরে রাখতে? নাকি তিনিও হারিয়ে যাবেন রহস্যের ধোঁয়াশায়?

 

প্রমথ: সোমক ঘোষের প্রমথ — একেন বাবুর আরেক বিশ্বস্ত সাথী। বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি হাজির হন বেনারসে। কিন্তু বেড়ানোর ছলে তিনি যে এক ভয়ংকর খেলার মধ্যে ঢুকে পড়েছেন, তা বুঝতে সময় লাগে না। এবার প্রমথ কি পারবেন ভয় আর ধোঁয়াশার ভেতর নিজেকে প্রমাণ করতে?

 

বেলাল মল্লিক: শাশ্বত  চট্টোপাধ্যায়ের বেলাল মল্লিক—এক চরিত্র, অনেক মুখ!  কখনও পুলিশ, কখনও পাঞ্জাবি, আবার কখনও বৈষ্ণব সন্ন্যাসী। এত রূপ কেন? সবটা কি অভিনয়, নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র?

 

দামিনী: ঈশা সাহার দামিনী — বয়সে বড় স্বামীর ঘরণী, সুন্দরী, ধীর, কিন্তু রহস্যে মোড়া। তাঁর চোখের ভাষা কি সত্যিই সরল? না কি তিনিও খেলছেন দ্বিমুখী খেলা? তিনি কি সত্যের ধারক, না রহস্যের অন্যতম মুখ?

 

সুবিমল: গৌরব চক্রবর্তীর সুবিমল — বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী স্কলার। বুদ্ধিমান, শান্ত, শিক্ষিত—কিন্তু এই শহরে কেউই অত সোজা নয়। একেন বাবুর প্রশ্নের মুখে সুবিমলের মুখোশ কি খসে পড়বে?

 

সুখদেব : বিশ্বনাথ বসুর সুখদেব — বেনারসের বিখ্যাত প্রাচীন গয়নার দোকানের মালিক। নম্র, বিদ্বান, আর আপাত নিরীহ। কিন্তু একেন বাবুর সন্দেহ বলে, এই দোকানের পেছনে কিছু গোপন খোঁজ লুকিয়ে আছে। কী সেটা?

 

বীরেশ্বর: দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের বীরেশ্বর — দামিনীর স্বামী, সুবিমলের কাকা, ক্যান্সারে আক্রান্ত, অ্যান্টিকের ভক্ত। কিন্তু স্মৃতিতে মাঝে মাঝে ধোঁয়াশা নামে। সেই ভুলে যাওয়া স্মৃতির মধ্যে কি লুকিয়ে আছে কোনো ভয়ঙ্কর সত্য?

 

সমীরণ: ঋষভ বসুর সমীরণ — বীরেশ্বরের চার্টাড  অ্যাকাউন্টেন্ট, কিন্তু রং-তুলির হাতেও সমান দক্ষ। তাঁর পেইন্টিং শপ 'চিত্রঘর' যেন শুধু রঙের গল্প নয়, লুকিয়ে থাকা রহস্যের ক্যানভাসও বটে। একেন বাবু কি বের করতে পারবেন সেই লুকানো ইঙ্গিত?

 

রাধিকা: স্বীকৃতি মজুমদারের রাধিকা — সুখদেবের দোকানের নম্র সেলসগার্ল। মিষ্টি স্বভাব, কিন্তু কোথায় যেন একটা ফাঁক রয়ে যায় তাঁর বয়ানে। একেন বাবুর নজর এড়ায় না তা। সে কি আসলেই নিরীহ? নাকি একেবারে অন্য খেলোয়াড়?

 

তবে শেষ কথা হল,দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা কেবল এক গোয়েন্দা কাহিনি নয়—এটা এক রহস্যের গোলকধাঁধা, যেখানে প্রতিটি মোড় এক নতুন ছায়া ফেলে। বেনারসের গলি আর ঘাটের মধ্যে, প্রাচীনতার আবরণে, একের পর এক খুলে যায় গোপন দরজা। আর সেই দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকেন একেন বাবু — চিরচেনা, কিন্তু এবার অনেক বেশি তীক্ষ্ণ।