কৃশানু মজুমদার: গোল করার পরে হাত দুটো পাখির ডানার মতো ছড়িয়ে দিতেন তিনি। তাঁর হেড মনে করিয়ে দিত শিশির ঘোষের কথা।
লাজুক স্বভাবের তারকা ফুটবলার তিন প্রধানে দাপিয়ে খেলেছেন একসময়ে। এখন মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কর্তা। যাঁকে নিয়ে এত কথা, তিনি দীপেন্দু বিশ্বাস। গ্যালারি তাঁর জন্য ফুটত, বহু ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছিল তাঁর গোলেই। দীপেন্দু মানে একবুক আবেগ, নস্ট্যালজিয়া।
সেই দীপেন্দু বিশ্বাসকে নিয়ে ছবি 'দীপু'। ছবির পরিচালক শ্রী প্রীতম। ছোট দীপুর চরিত্রে যিনি বড় পর্দায় অভিনয় করছেন, তিনি 'ময়দান'-খ্যাত আমন মুন্সি। এ ছবি ঠিক দীপেন্দু বিশ্বাসের বায়োপিক নয়। বলা ভাল দীপেন্দুর জীবন, তাঁর লড়াই, তাঁর খেলা অনেককেই অনুপ্রাণিত করে। প্রাক্তন ফুটবলারের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পান তাঁরা।
রহিম সাহেবের দলের 'অরুণ ঘোষ' এই ছবিতে ছোট দীপুর ভূমিকায়। অরুণ ঘোষ কিংবদন্তি ডিফেন্ডার। দীপেন্দু দুরন্ত বাঙালি স্ট্রাইকার। একজন প্রতিপক্ষের আক্রমণ একজনের পায়ে এসে থেমে যায়। আরেকজন বিপক্ষকে বোকা বানিয়ে গোল করেন।
দুটো ভিন্ন চরিত্র। পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে সমস্যা হবে না? প্রশ্নটা ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল আমনকে। আজকাল ডট ইন-কে তিনি বলেন, ''আমি ব্যবহারিক জীবনে একজন ফুটবলার। ফলে ডিফেন্ডার হোক বা স্ট্রাইকার, খেলাটা তো ফুটবল। আমি কিন্তু নিজে একজন অ্যাটাকিং প্লেয়ার। আমার কোনও সমস্যা নেই।''
এই ছবিতে রয়েছে প্রেম, রয়েছে মন মাতানো ফুটবল, রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই, শেষটা আবার হৃদয় কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো। দীপেন্দু বিশ্বাসের ফুটবলার জীবনের কথা প্রায় সবারই জানা। কিন্তু তাঁর জীবনের অনেক কাহিনিই অজানা। সেই সব কাহিনি রয়েছে এই ছবিতে। ফুটবল ভক্তরা নতুন করে খুঁজে পাবেন তাঁদের নায়ক দীপেন্দুকে। এক ফুটবলারের জীবন ফুটিয়ে তুলবেন আরেক ফুটবলার।
কলকাতা লিগে খেলেছেন আমন। গতবার ছিলেন নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘ ক্লাবে। নতুন বছরে নতুন পরিকল্পনা করছেন। তাঁর শয়নে, স্বপনে এবং জাগরনে এখন কেবলই দীপেন্দু বিশ্বাস। তিন প্রধানে খেলা প্রাক্তন ফুটবলার সাহায্য করছেন আমনকে। লিংক পাঠিয়ে বলছেন, ''এভাবে আমি হেড করতাম। এভাবে ভলি মারতাম। তুই এগুলো দেখিস।'' এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলছিলেন পর্দার 'দীপেন্দু বিশ্বাস'। আমন বলছেন, ''দীপুদা নিজে একজন দারুণ মেন্টর। ছবির জন্য ওঁর পরামর্শগুলো কাজে লাগবে তো ঠিকই, আমার ফুটবল জীবনেও এই পারমর্শগুলো দারুণ কাজে আসবে।''
ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় রয়েছে বর্ষা সেনগুপ্ত। প্লে ব্যাক গায়িকা বর্ষার অভিনয় জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলেছে এই ছবির মাধ্যমেই। কাহিনি, চিত্রনাট্য সংলাপ এবং সঙ্গীত পরিচালনা করবেন শ্রী প্রীতম।
গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়,তুলিকা বসু, মৌসুমী সাহা, বিশ্বনাথ বসু, সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়, দেবরঞ্জন নাগ, সৌরভ চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, তনুশ্রী সেনগুপ্ত।
ফুটবল কোচের ভূমিকায় সোহম চক্রবর্তী। ছবি প্রসঙ্গে সোহম বলেন, "এতদিনের অভিনয় জীবনে প্রথমবার এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করতে চলেছি, যেটা আমাকে ভাবাচ্ছে। নতুন কিছু স্বপ্ন দেখাচ্ছে। প্রতিমুহূর্তে মনের মধ্যে একটা রোমাঞ্চ জাগছে। এই ছবির মধ্যে মানসিক শান্তি রয়েছে। ছবি দেখে শুধু আনন্দ নয়, মনের জোর আর উৎসাহ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে বিশ্বাস।"
দীপেন্দু বলছিলেন, ''ছবির নাম দেওয়া হয়েছে দীপু। এটা বেশ লেগেছে আমার।'' কলকাতা ময়দানে এখনও তিনি ভালবাসার 'দীপু' হয়েই রয়েছেন। দ্রুতই শুরু হবে শুটিংয়ের কাজ। মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবে শুটিং হওয়ার কথা রয়েছে।
পর্দার 'দীপু' আমনের বাবা টাবুন মুন্সি নিজেও দক্ষ অভিনেতা। আমনের জ্যাঠু সন্দীপ মুন্সি কলকাতার তিন প্রধানের প্রাক্তন ফুটবলার। আমন বলছেন, ''রক্তে ফুটবল আর অভিনয় রয়েছে। ছাতার মতো আমাকে আগলে রেখেছেন আমার বাবা। আমাকে পরামর্শ দেন, ফুটবল হোক বা অভিনয়, বাবার পরামর্শ নিয়েই এগিয়ে চলেছি।''
রহিম সাহেবের সেই সোনাজয়ী এশিয়ান গেমস দলের 'অরুণ ঘোষ' থেকে পুরোদস্তুর 'দীপেন্দু' হওয়ার চেষ্টায় আমন। বলছেন, ''দেবরঞ্জন নাগের কাছে ওয়ার্কশপ করছি। অনেক কিছু শিখছি।''
আকাশ ছোঁয়ার স্পর্ধা ছিল বসিরহাটের ছেলেটার। মফস্বলে যে শৈশব ডাংগুলি, ডুব সাঁতার আর ডানপিঠে হয়ে ওঠার ট্রেডমার্ক, সেই বয়সেই একবগ্গা জেদের সওয়ারি হয়েছিল সে। দু'চোখে ভরা স্বপ্ন চিকচিক করত সেই ছেলেবেলা থেকেই। রিয়াল লাইফের দীপেন্দু স্বপ্ন ছুঁয়েছিলেন। আর রিল লাইফের ফুটবল পাগল মানুষটার উত্থান-পতন, সাফল্য-ব্যর্থতা, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই নিয়েই ছবি 'দীপু'।
