আজকাল ওয়েবডেস্ক: আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি লিওনেল মেসিকে কলকাতায় প্রথমবার আনার ভগীরথ তিনি-ই। সেই তিনিই আবার ছিয়াশির বিশ্ববন্দিত মহানায়ক দিয়েগো মারাদোনাকে এনেছিলেন কলকাতায়। তিনি ভাস্বর গোস্বামী। 

চোদ্দো বছর আগে শহর কলকাতার গান ছিল, ''এই শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু।'' 

আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে মেসির অভিষেক ম্যাচ ছিল এই কলকাতাতেই। 

কাট টু ২০২৫। 

এই মেসি এখন বিশ্বজয়ী। এখনও তিনি অবশ্য নীল-সাদা জার্সিধারীদের ক্যাপ্টেন। আর কয়েক মাস পরেই তিনি বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন। 

এহেন মেসিকে নিয়ে শনিবার শহর কলকাতা উত্তাল হল। ভাঙচুর করা হল যুবভারতী। এবার মেসিকে এই শহরে এনেছিলেন শতদ্রু দত্ত। 

দুই সময়ের দুই মেসি। আয়োজকও ভিন্ন ভিন্ন। দুই সফরে দুই ছবি দেখল কলকাতা। 

ভাস্বর গোস্বামী নব্বই মিনিটের পূর্ণাঙ্গ একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচের আয়োজন করেছিলেন যুবভারতীতে। আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছিল ভেনিজুয়েলা। 

ধাপে ধাপে আর্জেন্টিনার তারকারা কলকাতায় পা রেখেছিলেন। শেষ ধাপে এসেছিলেন মেসি-ম্যাসচেরানো। বার্সেলোনার ম্যাচ খেলে দুই তারকা কলকাতায় এসেছিলেন মধ্যরাতে। 

বহু য়ুদ্ধের সাক্ষী থাকা যুবভারতীতে টানটান এক ম্যাচের আয়োজন করেছিলেন ভাস্বর। তৃপ্তির ঢেঁকুর
তুলতে তুলতে সেদিন স্টেডিয়াম ছাড়েন দর্শকরা। মেসির কর্নার থেকে হেডে সেদিন গোল করেছিলেন ওতামেন্দি। আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে হারিয়েছিল ভেনিজুয়েলাকে। 

এবার মেসি খেলার জন্য আসেননি। দর্শকদের দিকে হাত দেখাবেন, হাসবেন, চুম্বন ছুড়বেন, এই ছিল তাঁর সূচিতে। মাত্র পনেরো মিনিট আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি মাঠে থাকলেন। ওই পনেরো মিনিটে দেখা গেল, মেসিকে বগলদাবা করে ঘুরছেন আয়োজক শতদ্রু। 

এলএম ১০-এর চারপাশে মানুষ আর মানুষ। গ্যালারি থেকে মেসিকে দেখতে পাননি সমর্থকরা। এতে দর্শকদের ক্ষোভ বেড়ে গেল বহুগুণে। মোটা টাকা খরচ করে যাঁরা টিকিট কাটলেন, তাঁদের প্রতি কি যথেষ্ট দায়বদ্ধ ছিলেন আয়োজক শতদ্রু? মেসি চলে যাওয়ার পরে যুবভারতী দখলে চলে যায় উন্মত্ত দর্শকদের। 

উত্তাল যুবভারতীর ছবি দেখল গোটা দেশ। থুড়ি, গোটা বিশ্ব। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে অশান্ত কলকাতার কথা লেখা হল। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যমেও তুলে ধরা হল মেসি-ম্যাসাকারের বিবরণ। আয়োজক শতদ্রু দত্তকে গ্রেপ্তার করা হল বিমানবন্দর থেকে। 

চোদ্দো বছর আগে এমন বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠেনি যুবভারতী। মেসিরা এই শহরে পাঁচ দিন ছিলেন। নিয়ম করে অনুশীলন করেছেন। স্টেডিয়াম সংলগ্ন হোটেল ছিল তাঁদের ঠিকানা। কিন্তু আজকের মতো এমন হতশ্রী ছবি দেখেনি কলকাতা। 

আয়োজক শতদ্রু কীভাবে এত বড় ভুল করে বসলেন? তিনি এনেছিলেন কাতার বিশ্বকাপের সফল আর্জেন্টাইন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে। কিন্তু এমি আর মেসি এক জিনিস নন। এখানেই ভুল হয়ে গেল। 

বিশ্বের সবথেকে বড় সেলিব্রিটিকে খোলা মাঠে পেয়ে অসংখ্য মানুষ ছবি তোলার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বেন এ তো স্বাভাবিক। মেসির চারপাশে মৌমাছির ঝাঁকের মতো এত মানুষ ঢুকলেন কীভাবে? অসংখ্য প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে শনিবারের মেসি-সফর। 

শুধু কি মেসি?ছিয়াশির বিশ্বজয়ী মহানায়ক দিয়েগো মারাদোনাও কলকাতায় এসেছিলেন ভাস্বরের হাত ধরে। তখন মারাদোনা আর্জেন্টিনার কোচ হয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে মারোদানা গুরু আর শিষ্য মেসি। 

মেসি-মারাদোনা-দুই কিংবদন্তিকে নিয়ে শহর ছিল আবেগমথিত। ভিড়ের ঢল নেমেছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ছিল ভাস্বরের হাতে। এক মুহূর্তের জন্যও পরিস্থিতি হাতের বাইরে যায়নি। 

দুই সময়। দুই আয়োজক। চোদ্দো বছরের ব্যবধানে মেসি তাঁর চেনা যুবভারতীকে দেখলেন দু'ভাবে।