যে দিন তিনি রাজি হয়েছেন সে দিন থেকে জানতেন, পদে পদে তুলনা হবে। প্রতি মুহূর্তে তাঁর ভিতরেও দ্বন্দ্ব জন্ম নেবে, তিনি পারছেন তো? তারপরেও মিঠুন চক্রবর্তী ‘কাবুলিওয়ালা’য় ‘রহমত’ চরিত্রে অভিনয় করা সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গল্প চিরন্তন। জন্মলগ্ন থেকে প্রাসঙ্গিক। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক কখনও পুরনো হয়? বাস্তবে মিঠুনেরও মেয়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে তাই ক্যামেরার সামনে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। ফলাফল? ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে তুলনা শুনতে শুনতেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন, একুশ শতকের ‘রহমত’ এক এবং একমাত্র মিঠুন চক্রবর্তী।

সুমনের সঙ্গে মিঠুনের প্রথম যুগলবন্দি ‘নোবেল চোর’ ছবিতে। তখন থেকেই পরিচালক ‘মহাগুরু’র ধার এবং ভার জানেন। তাই ১৯৫৭-য় তপন সিংহের "কাবুলিওয়ালা" তৈরির ৬৬ বছর পরে আধুনিক রূপান্তরের কথা মাথায় আসতেই পরিচালক আবারও বেছে নিয়েছেন অভিনেতাকে। সুমনের বুঝি রবি ঠাকুরের প্রতিও প্রবল দুর্বলতা। ‘নোবেল চোর’ কিংবা ‘কাদম্বরী’র মতো ছবি সেদিকেই ইঙ্গিত করে! এবং বুদ্ধিমানের মতো ছবির পটভূমিকার খুব একটা বদল না ঘটিয়ে একুশ শতকে নতুন ভাবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এক বালিকার সঙ্গে সুদূর আফগানিস্তান থেকে আসা কাবুলিওয়ালার সখ্যতা। বালিকার মধ্যে নিজের মেয়ে আমিনাকে খুঁজে পাওয়া। পিতৃপ্রেমের এই অনুভূতিকে ঘিরে সমস্যার মেঘ ঘনিয়ে ওঠা— কিছুই বাদ দেননি তিনি। মিঠুনও পরম যত্নে সেই সব অনুভূতি বহন করেছেন প্রতিটি দৃশ্যে। নিজের মতো করে। কখনও তিনি কন্যাপ্রতিম মেয়েকে দেখার জন্য উদ্বেল। কখনও সন্তানের বিরহে ব্যথাতুর পিতা। তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিনয় করেছে ছোট্ট অনুমেঘা কাহালি। যে এর আগে ধারাবাহিক ‘মিঠাই’য়ে চুটিয়ে অভিনয় করেছে। 



এছাড়াও, ছোট্ট মিনির মা-বাবা হিসেবে দেখা যাবে আবীর চট্টোপাধ্যায়, সোহিনী সরকারকে। তপন সিংহের ছবিতে এই দুই ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল রাধামোহন ভট্টাচার্য, মঞ্জু দে-কে। ঋণগ্রস্ত চরিত্রে নৃপতি ভট্টাচার্যের জায়গা কাঞ্চন মল্লিক। প্রত্যেকে নিজের ভূমিকায় যথাযথ। ২২ ডিসেম্বর বড়দিনের আগে মুক্তি পাচ্ছে জ্যোতি দেশপান্ডে, শ্রীকান্ত মোহতা এবং মহেন্দ্র সোনির ‘কাবুলিওয়ালা’। বিপরীতে দেব অধিকারীর ‘প্রধান’। টলিউড বলছে, এ এক অদ্ভুত সমাপতন! ২০২২-এ মিঠুন-দেবের অভিনয় ‘প্রজাপতি’কে ব্লকবাস্টার ছবিতে পরিণত করেছিল। এবছর তাঁরাই যুযুধান, দুটো ভিন্ন অনুভূতির ছবি নিয়ে!