তমালিকা বসু, লন্ডন
পালাবদলের ইঙ্গিত আগে থেকেই ছিল। সময় এগোতেই স্পষ্ট হয়েছে লেবারের জয়, কনজারভেটিভের পরাজয়। কনজারভেটিভ পার্টিকে সরিয়ে লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসাই ছিল মূলত এবারের ব্রিটেনের হাউস অফ কমনসের নির্বাচনের লক্ষ্য। সমীক্ষা বলছে, লেবারকে ক্ষমতায় আনা নয়, এবারের নির্বাচনে সাধারণ মানুষের মূল লক্ষ্য ছিল কনজারভেটিভ পার্টিকে ক্ষমতা থেকে সরানো। আর এই কট্টর মনোভাবই লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় আনতে ওষুধের মত কাজ করেছে। নির্বাচনে পর্যুদস্ত হওয়ার পিছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কনজারভেটিভ দলের নেতাদের একের পর এক ব্যর্থতা, একের পর এক প্রমাণিত অভিযোগ। ব্রিটেন নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৬৬%। তার মধ্যে কের স্টার্মারের দল ৪১১ আসন পেলেও তাদের প্রাপ্য ভোট ৩৬.৩%। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯৭ সালের টনি ব্লেয়ারের লেবার পার্টি সরকার এর থেকে বেশি ভোট পেয়েছিল। এবারে মোট ৯০ লক্ষ ভোট পেয়ে ৪১১টি আসন পেয়েছে লেবার পার্টি। কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে প্রায় ২২% ভোট। ১৮৩৫ সালের নির্বাচনে দলটি প্রথম এই পরিমাণ ভোট পেয়েছিল। ১০০ বছরের তফাতে প্রথম কনজারভেটিভ পার্টি এত কম ভোট পেল। ফলাফলে দেখা গিয়েছে, কনজারভেটিভ পার্টির বহু হেভিওয়েট নেতা নিজ নিজ আসন থেকে হেরে গেছেন। তালিকায় রয়েছেন লিজ ট্রাস্ট, পেনি মর্ডানের মত ব্যক্তিত্বরা। তবে ঋষি সুনাক রিচমন্ড অ্যান্ড নর্থঅ্যালার্টন আসনে জিতেছেন ১২০০০ ভোটে।
ব্রিটেনের মধ্যে লেবার পার্টি যেসব জায়গায় শক্তিশালী সেগুলো মূলত ব্রেক্সিটের কারণে। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট নীতির সময় ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার সমর্থনে ছিলেন এই নেতারা। সেই সমস্ত আসনে ভাল ফল করেছে লেবার পার্টি। অন্যদিকে, উল্টো ফল হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টির ক্ষেত্রে। কনজারভেটিভ দলের হেভিওয়েট জায়গাগুলিতে ব্রেক্সিটের সময় নেতারা চেয়েছিলেন ব্রিটেন বেরিয়ে যাক ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে। সেই ভোটটা এবার পড়েছে পুরোটাই লেবার দলের পক্ষে। কনজারভেটিভ পার্টি যে ২৫০ আসন খুইয়েছে তার মূল কারণটাই হল ব্রেক্সিট। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ আট বছর পর বুঝতে পারছেন ব্রেক্সিট করে কোনো লাভ হয়নি। ইউরোপে ফিরে যেতে পারলেই বরং ভাল হবে। একই কথা বলছে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও। নির্বাচনের ফল বলছে ব্রিটেনের মানুষ অতি ডান, অতি বাম নয় বরং একটা 'মডারেট সেন্টার অ্যাপ্রোচ' নিচ্ছে।
তবে নির্বাচনের ফল বিচার করলে দেখা যাবে লেবার পার্টির প্রাপ্য ভোটের শতাংশ অনেকটাই কম। লেবার পার্টির প্রাপ্য ভোট কম কেন তা বিচার করতে গেলে প্রশ্ন উঠবে কের স্টার্মারের নিয়ে। একদিকে যেমন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবলভাবে কম, পাশাপাশি মুসলিম ভোট অনেকটাই কম পড়েছে লেবার দলে। জানা যাচ্ছে, গাজা ইস্যুতে কের স্টার্মারের কোনো কঠোর মনোভাব না দেখানোর জন্য অনেকটাই কমে গিয়েছে মুসলিম ভোটের পরিমাণ। সামগ্রিক ভাবে ২০১৯ সালের থেকে ৪.২% বেশি ভোট পেয়েছে লেবার পার্টি। পাশাপাশি, সংসদে এবার উঠে এসেছে একটা তৃতীয় শক্তি লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। নব্বই দশকের শেষে তৈরি হওয়া এই দলটি ৭১টি আসন পেয়েছে নির্বাচনে। দলটির মূল লক্ষ্য ব্রেক্সিটে ফিরে গিয়ে বাকি ইউরোপের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক তৈরি করা। লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা এড ড্যাভি কিংস্টন সার্ভিটন আসন থেকে ২৫০০০ ভোটে জিতেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন গ্রীন পার্টির বাঙালি নেতা দেবজ্যোতি দাস। অন্যদিকে, রিফর্ম ইউকে দলের নেতা নাইজেল ফারাজ আট বারের চেষ্টায় প্রথমবার জয়ী হয়ে ব্রিটেনের সংসদে পা রাখতে চলেছেন। গ্রীন পার্টি এবং লিবারেল পার্টির লক্ষ্য ব্রিটেনকে আরও পরিবেশ বান্ধব করে তোলা। পরিবেশকে সুস্থ রাখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ফের চাঙ্গা করে তোলা।
সকাল ১০টা পর্যন্ত ফল বেরোনোর পর দেখা যায় কনজারভেটিভ পার্টির ফল এতটাই শোচনীয় যে ন্যুনতম ৩০টা আসনে কনজারভেটিভ দলের প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে। নিজেদের ইস্তেহারে মূলত পাঁচটি নীতি কার্যকর করা বার্তা দিয়েছিল লেবার পার্টি। এর মধ্যে রয়েছে কর্পোরেশন ট্যাক্স ২৫% এর মধ্যে রাখা, বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কারখানা খুলে দেওয়ার জন্য আর্থিক ছাড় দেওয়া, এনার্জি ক্ষেত্রে সাড়ে ৬লক্ষ চাকরি, ১৫ লক্ষ নতুন বাড়ি, অভিবাসী নীতিতে সংস্কার আনা। এদিন ফলাফল ঘোষণার পর দশ ডাউনিং স্ট্রিটে নিজের বাড়ির বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ঋষি সুনাক। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নেন দেশবাসীর কাছে। বলেন, ‘আমি আমার কনজারভেটিভ পার্টির বন্ধুদের থেকেও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সবাই মিলে হাতে হাত লাগিয়ে একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলাম। দুই প্রজন্ম আগে আমার ঠাকুরদা ব্রিটেনে এসেছিলেন। সেখান থেকে আজ আমি এই জায়গায়। এটা ব্রিটেন বলেই সম্ভব। এই দেশ বিশ্বের সেরা দেশ। আমি এই দেশকে সেবা করার সুযোগ পেয়েছি’। নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কের স্টার্মারের প্রশংসাও করেন তিনি। ব্রিটেনের ইতিহাসে যাঁরা সবথেকে কম মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সেই তালিকায় ঋষি সুনাক রয়েছেন চতুর্থ স্থানে। ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জানান, রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে নিজের ইস্তফা জমা দেবেন তিনি। কনজারভেটিভ পার্টির দলনেতার পদ থেকেও পদত্যাগ করবেন বলেও জানিয়েছেন সুনাক। তবে এখনই নয়।
পালাবদলের ইঙ্গিত আগে থেকেই ছিল। সময় এগোতেই স্পষ্ট হয়েছে লেবারের জয়, কনজারভেটিভের পরাজয়। কনজারভেটিভ পার্টিকে সরিয়ে লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসাই ছিল মূলত এবারের ব্রিটেনের হাউস অফ কমনসের নির্বাচনের লক্ষ্য। সমীক্ষা বলছে, লেবারকে ক্ষমতায় আনা নয়, এবারের নির্বাচনে সাধারণ মানুষের মূল লক্ষ্য ছিল কনজারভেটিভ পার্টিকে ক্ষমতা থেকে সরানো। আর এই কট্টর মনোভাবই লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় আনতে ওষুধের মত কাজ করেছে। নির্বাচনে পর্যুদস্ত হওয়ার পিছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কনজারভেটিভ দলের নেতাদের একের পর এক ব্যর্থতা, একের পর এক প্রমাণিত অভিযোগ। ব্রিটেন নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৬৬%। তার মধ্যে কের স্টার্মারের দল ৪১১ আসন পেলেও তাদের প্রাপ্য ভোট ৩৬.৩%। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯৭ সালের টনি ব্লেয়ারের লেবার পার্টি সরকার এর থেকে বেশি ভোট পেয়েছিল। এবারে মোট ৯০ লক্ষ ভোট পেয়ে ৪১১টি আসন পেয়েছে লেবার পার্টি। কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে প্রায় ২২% ভোট। ১৮৩৫ সালের নির্বাচনে দলটি প্রথম এই পরিমাণ ভোট পেয়েছিল। ১০০ বছরের তফাতে প্রথম কনজারভেটিভ পার্টি এত কম ভোট পেল। ফলাফলে দেখা গিয়েছে, কনজারভেটিভ পার্টির বহু হেভিওয়েট নেতা নিজ নিজ আসন থেকে হেরে গেছেন। তালিকায় রয়েছেন লিজ ট্রাস্ট, পেনি মর্ডানের মত ব্যক্তিত্বরা। তবে ঋষি সুনাক রিচমন্ড অ্যান্ড নর্থঅ্যালার্টন আসনে জিতেছেন ১২০০০ ভোটে।
ব্রিটেনের মধ্যে লেবার পার্টি যেসব জায়গায় শক্তিশালী সেগুলো মূলত ব্রেক্সিটের কারণে। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট নীতির সময় ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার সমর্থনে ছিলেন এই নেতারা। সেই সমস্ত আসনে ভাল ফল করেছে লেবার পার্টি। অন্যদিকে, উল্টো ফল হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টির ক্ষেত্রে। কনজারভেটিভ দলের হেভিওয়েট জায়গাগুলিতে ব্রেক্সিটের সময় নেতারা চেয়েছিলেন ব্রিটেন বেরিয়ে যাক ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে। সেই ভোটটা এবার পড়েছে পুরোটাই লেবার দলের পক্ষে। কনজারভেটিভ পার্টি যে ২৫০ আসন খুইয়েছে তার মূল কারণটাই হল ব্রেক্সিট। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ আট বছর পর বুঝতে পারছেন ব্রেক্সিট করে কোনো লাভ হয়নি। ইউরোপে ফিরে যেতে পারলেই বরং ভাল হবে। একই কথা বলছে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও। নির্বাচনের ফল বলছে ব্রিটেনের মানুষ অতি ডান, অতি বাম নয় বরং একটা 'মডারেট সেন্টার অ্যাপ্রোচ' নিচ্ছে।
তবে নির্বাচনের ফল বিচার করলে দেখা যাবে লেবার পার্টির প্রাপ্য ভোটের শতাংশ অনেকটাই কম। লেবার পার্টির প্রাপ্য ভোট কম কেন তা বিচার করতে গেলে প্রশ্ন উঠবে কের স্টার্মারের নিয়ে। একদিকে যেমন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবলভাবে কম, পাশাপাশি মুসলিম ভোট অনেকটাই কম পড়েছে লেবার দলে। জানা যাচ্ছে, গাজা ইস্যুতে কের স্টার্মারের কোনো কঠোর মনোভাব না দেখানোর জন্য অনেকটাই কমে গিয়েছে মুসলিম ভোটের পরিমাণ। সামগ্রিক ভাবে ২০১৯ সালের থেকে ৪.২% বেশি ভোট পেয়েছে লেবার পার্টি। পাশাপাশি, সংসদে এবার উঠে এসেছে একটা তৃতীয় শক্তি লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। নব্বই দশকের শেষে তৈরি হওয়া এই দলটি ৭১টি আসন পেয়েছে নির্বাচনে। দলটির মূল লক্ষ্য ব্রেক্সিটে ফিরে গিয়ে বাকি ইউরোপের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক তৈরি করা। লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা এড ড্যাভি কিংস্টন সার্ভিটন আসন থেকে ২৫০০০ ভোটে জিতেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন গ্রীন পার্টির বাঙালি নেতা দেবজ্যোতি দাস। অন্যদিকে, রিফর্ম ইউকে দলের নেতা নাইজেল ফারাজ আট বারের চেষ্টায় প্রথমবার জয়ী হয়ে ব্রিটেনের সংসদে পা রাখতে চলেছেন। গ্রীন পার্টি এবং লিবারেল পার্টির লক্ষ্য ব্রিটেনকে আরও পরিবেশ বান্ধব করে তোলা। পরিবেশকে সুস্থ রাখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ফের চাঙ্গা করে তোলা।
সকাল ১০টা পর্যন্ত ফল বেরোনোর পর দেখা যায় কনজারভেটিভ পার্টির ফল এতটাই শোচনীয় যে ন্যুনতম ৩০টা আসনে কনজারভেটিভ দলের প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে। নিজেদের ইস্তেহারে মূলত পাঁচটি নীতি কার্যকর করা বার্তা দিয়েছিল লেবার পার্টি। এর মধ্যে রয়েছে কর্পোরেশন ট্যাক্স ২৫% এর মধ্যে রাখা, বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কারখানা খুলে দেওয়ার জন্য আর্থিক ছাড় দেওয়া, এনার্জি ক্ষেত্রে সাড়ে ৬লক্ষ চাকরি, ১৫ লক্ষ নতুন বাড়ি, অভিবাসী নীতিতে সংস্কার আনা। এদিন ফলাফল ঘোষণার পর দশ ডাউনিং স্ট্রিটে নিজের বাড়ির বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ঋষি সুনাক। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নেন দেশবাসীর কাছে। বলেন, ‘আমি আমার কনজারভেটিভ পার্টির বন্ধুদের থেকেও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সবাই মিলে হাতে হাত লাগিয়ে একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলাম। দুই প্রজন্ম আগে আমার ঠাকুরদা ব্রিটেনে এসেছিলেন। সেখান থেকে আজ আমি এই জায়গায়। এটা ব্রিটেন বলেই সম্ভব। এই দেশ বিশ্বের সেরা দেশ। আমি এই দেশকে সেবা করার সুযোগ পেয়েছি’। নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কের স্টার্মারের প্রশংসাও করেন তিনি। ব্রিটেনের ইতিহাসে যাঁরা সবথেকে কম মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সেই তালিকায় ঋষি সুনাক রয়েছেন চতুর্থ স্থানে। ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জানান, রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে নিজের ইস্তফা জমা দেবেন তিনি। কনজারভেটিভ পার্টির দলনেতার পদ থেকেও পদত্যাগ করবেন বলেও জানিয়েছেন সুনাক। তবে এখনই নয়।
