শুক্রবারের সকালের রোদ অন্য দিনের মতো ততটাও যেন ঝকঝকে ছিল না। বেলা বাড়তেই মেঘলা আকাশ। ঝিরঝিরে বৃষ্টি। প্রকৃতিও শোকাচ্ছন্ন। পরিচালক গৌতম মজুমদারের প্রয়াণে। সেই শোক ধারণ করেই মুম্বই থেকে ছুটে এসেছিলেন বিদ্যা বালন। সাদা পোশাক শান্তির, শোকেরও। সন্ধেবেলাতেও চোখে রোদচশমা। ভেজা চোখ ঢাকার জন্যই কী? বিধাননগরের এইচবি ব্লকের ২২৪ নম্বর বাড়ির সামনে ভিড়। সবাই নিজের চোখে দেখতে চান, শিষ্যা তাঁর গুরুকে শেষবিদায় জানাতে আসছেন। 

চূড়ান্ত ব্যস্ততা সরিয়ে বিদ্যা কলকাতায় আসছেন। এখবর প্রথম জানিয়েছে আজকাল ডট ইন। নায়িকার কার্যনির্বাহী সহকারী জানিয়েছিলেন, সাড়ে ৫টা নাগাদ তাঁর বিমান শহরের মাটি ছোঁবে। নির্দিষ্ট সময়ে বিমানবন্দরে দেখা মেলে তাঁর। দু’চোখে শূন্যতা। তড়িঘড়ি গাড়িতে করে তিনি যখন সদ্যপ্রয়াত পরিচালকের বাড়ি পৌঁছোন তখন সন্ধে সাড়ে সাতটা। কলকাতা দেখল, মুম্বই আজও গুণীর কদর করে। গাড়ি থেকে নেমে ধীর পায়ে এগিয়ে যান বাড়ির ভিতরে। জড়িয়ে ধরেন পরিচালক-কন্যা রাইপূর্ণা হালদারকে। বিদ্যার যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, পুজোর সময় দেখা হওয়া মানুষটি হঠাৎ করে ‘নেই’!

পরে সেই স্মৃতি নায়িকা ভাগ করে নেন উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে। বলেন, ‘‘মহালয়ায় শহরে এসেছিলাম। কালীঘাট গেলাম। শ্রীভূমিতে মন্ত্রী সুজিত বসুর পুজো উদ্বোধন করলাম। তারপর দেখা করতে এসেছিলাম গৌতমদার সঙ্গে। তখনও ভাবিনি আবার ছুটে আসতে হবে। তাঁকে শেষদেখা দেখতে।’’ আরও জানান, শেষ সাক্ষাতে প্রবীণ পরিচালক তাঁকে একটি গল্পের অর্ধ্বেক অংশ শুনিয়েছিলেন। কথা দিয়েছিলেন, পুজোর পরে মুম্বই যাবেন। বাকি গল্প শোনাবেন। আরও একবার জুটি বেঁধে ছবি তৈরির ইচ্ছেও প্রকাশ করেছিলেন। শুনে এককথায় রাজি হয়েছিলেন বিদ্যা। ঈশ্বরের নির্দেশে সেই ইচ্ছেপূরণের আগেই ছুটি নিতে হল তাঁকে। 

কাশী মিত্র ঘাটে তখন পঞ্চভূতে মিলিয়ে যাচ্ছেন ‘নির্বাণ’ পরিচালক। ভিড় থেকে নিজেকে সরিয়ে বিদ্যা নিরিবিলি খুঁজছেন। উদাস দৃষ্টি বলছে, তাঁর যে আর শোক জানানোর ভাষা নেই!