আজকাল ওয়েবডেস্ক: তাঁর অধিনায়কত্বে বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। বিশেষ করে নিজের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। কিন্তু আচমকাই হিরো থেকে হারিয়ে গিয়েছেন। তিনি ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক পল কলিংউড।
ইংল্যান্ড ক্রিকেটের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে ঘিরে তৈরি হয়েছে একের পর এক বিতর্ক। ব্যক্তিগত আচরণ, যৌন কেলেঙ্কারি ও ট্যাক্স জালিয়াতির অভিযোগে তিনি এখন কার্যত ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের (ECB) পরিকল্পনার বাইরে।
এক সময় যিনি ইংল্যান্ড ক্রিকেটের নির্ভরযোগ্য মুখ ছিলেন, এখন তিনি পুরোপুরি চলে গিয়েছেন আলোচনার বাইরে, অজানার অন্ধকারে। ৪৯ বছর বয়সী কলিংউড শেষবার ইংল্যান্ডের কোচিং স্টাফ হিসেবে কাজ করেছিলেন চলতি বছরের মে মাসে।
জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে নটিংহ্যামে একমাত্র টেস্ট ম্যাচে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে সরে দাঁড়ানোর পর থেকে আর তাঁকে দেখা যায়নি। এখন জানা যাচ্ছে, আসন্ন অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজ সিরিজের কোচিং দলেও তাঁর নাম নেই।
অর্থাৎ, আগামী গ্রীষ্ম পর্যন্ত তিনি ইংল্যান্ড দলের স্টাফের তালিকার বাইরেই থাকতে হবে তাঁকে। কলিংউডের আচমকা এই হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ব্যক্তিগত আচরণ ও একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর বিরুদ্ধে বড়সড় যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। জাতীয় দলে তাঁর একসময়ের সতীর্থ গ্রেম সোয়ান এক পডকাস্টে জানান, ক্রিকেট মহলে একটি অডিও রেকর্ডিং ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখানে কলিংউডকে একাধিক মহিলার সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় থাকার কথা শোনা যায়।
সোয়ান যদিও বিষয়টি হালকা মেজাজে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি। এর আগেও কলিংউডের পার্টি করার সংস্কৃতি নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগের রাতে কেপ টাউনের এক স্ট্রিপ ক্লাবে তাঁকে দেখা যায়।
সে সময় ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন তিনি, এবং ঘটনার পর ইসিবি তাঁকে ১,০০০ পাউন্ড জরিমানা করেছিল। এমনকি ২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর বার্বাডোজে সমুদ্রের ধারে এক মহিলার সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ ছবি ভাইরাল হয়, যা নিয়েও ইসিবি-র ভিতরে অসন্তোষ ছড়িয়েছিল।
পরবর্তীকালে কলিংউড জড়িয়ে পড়েন ট্যাক্স জালিয়াতির মামলাতেও। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের রাজস্ব দপ্তর (HMRC) আদালতের নির্দেশে কলিংউডকে প্রায় ১,৯৬,০০০ পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি টাকা) কর পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে।
অভিযোগ, তিনি ‘PDC Rights’ নামে নিজের কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্পনসরশিপ অর্থ নিজের কর থেকে আড়াল করেছিলেন। এই মামলা যদিও ২০০৯ সালে বন্ধ হয়েছিল, পরে পুনরায় খোলা হয় এবং সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়।
জানা যায়, এই ট্যাক্স সমস্যার কারণেই তিনি ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মকালীন সিরিজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। ২০১০ সালে কলিংউডের নেতৃত্বেই ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে।
ক্রিকেটার হিসেবেও বহু রেকর্ড গড়েছেন কলিংউড। টেস্টে তিনি ৪,২৫৯ রান করেছেন, একদিনের ক্রিকেটে তাঁর সংগ্রহ ৫,০৯২ রান, সঙ্গে নিয়েছেন ১১১ উইকেট। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা, ব্যাটিংয়ের দৃঢ়তা এবং অসাধারণ ফিল্ডিং ইংল্যান্ডকে একাধিক ম্যাচ জিতিয়েছে।
অবসরের পর কলিংউড কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন, এবং বেন স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের যুগে দলের মধ্যে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইসিবি-র ভেতরের সূত্রে জানা গেছে, তাঁর অনিয়মিত জীবনযাপন, পেশাগত উদাসীনতা এবং বিতর্কিত আচরণই তাঁকে ধীরে ধীরে একঘরে করে তুলেছে।
চলতি বছর ২০০৫ সালের অ্যাশেজজয়ী দলের রিইউনিয়ন অনুষ্ঠানেও কলিংউডের অনুপস্থিতি ক্রিকেট মহলে নজর কাড়ে। এক সময়ের নায়ক, যিনি ইংল্যান্ডকে বিশ্বমঞ্চে প্রথমবারের মতো ট্রফি এনে দিয়েছিলেন, এখন তিনি কোচিং দল থেকে বাদ। পাশাপাশি, কর দপ্তরের মামলাতেও বিপাকে পড়েছেন তিনি।
