আজকাল ওয়েবডেস্ক:সাইকোলজির ছাত্রী হওয়ায় ফাইনালের আগে একটা বড় চিন্তা কমে গিয়েছিল প্রতীকা রাওয়ালের। তাঁর সাইকোলজির জ্ঞানই তাঁকে ভিতর ভিতর বলে দিয়েছিল বিশ্বকাপের ফাইনালে শেফালি ভার্মা বিশেষ কিছু করবেন।
তাঁর সেই অনুমান যে সত্যি প্রমাণিত হবে সেটা আর কে জানত। তবে নিজের ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে চোটের কারণে রাওয়াল তাঁর জীবনে সবচেয়ে বড় দুটি ম্যাচ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেলতে পারেননি।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রতীকা বলেন, ‘শেফালিকে আলাদা করে প্রেরণা দেওয়ার দরকার পড়ে না। সে নিজের বিশ্বাস এবং ইনস্টিন্টিক্টের ওপর খেলে। ফাইনালের আগে ও এসে বলেছিল, ‘তুমি খেলতে পারছ না বলে খুব খারাপ লাগছে।’ আমি ওকে বলেছিলাম, ঠিক আছে, এমনটা হয়। তখনই আমার মনে হয়েছিল, ও সেই দিন কিছু বিশেষ করবে।’
উল্লেখ্য, বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচেই গোড়ালি ও হাঁটুর চোট পান প্রতীকা রাওয়াল। বিশ্বকাপে তিনি ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন। ৩০৮ রান করে সর্বাধিক রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিলেন স্মৃতি মান্ধানা (৪৩৪) ও অ্যাশলি গার্ডনারের (৩২৮) পরেই।
চোটের কারণে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়া মানসিকভাবে কঠিন হলেও সাইকোলজির ছাত্রী হিসেবে প্রতীকা জানেন কীভাবে নিজের আবেগকে সামলাতে হয়।
তিনি বলেন, ‘সাইকোলজির পড়াশোনাই আমাকে সাহায্য করেছে। মনের ভিতর কী চলছে, সেটা বোঝা সহজ হয়েছে।’ উল্লেখ্য, শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জয়ের মেডেল পাচ্ছেন প্রতীকা রাওয়াল।
বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় মহিলা দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন প্রতীকা। শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপের দল থেকে ছিটকে যাওয়ায় ফাইনালের পর পদক পাননি। যদিও তাঁর সেই আক্ষেপ মিটতে চলেছে।
আইসিসি ভারতীয় অলরাউন্ডারকে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতীকা হাতে পাবেন বিশ্বজয়ের পদক।আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্বকাপজয়ী দলের ১৫ জন ক্রিকেটার পদক পান।
হুইল চেয়ারে বসে সতীর্থদের সঙ্গে বিশ্বজয়ের সেলিব্রেশনে সামিল হলেও প্রতীকাকে গত ২ নভেম্বর রাতে সোনার পদক দেওয়া হয়নি। যদিও প্রতীকা বিশ্বকাপে চতুর্থ সর্বোচ্চ (৩০৮) রান করেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতরান করে শেষ চারে ভারতের জায়গা নিশ্চিত করেছিলেন প্রতীকা।
পদক না পাওয়ার আক্ষেপ থাকলেও কিছু করার ছিল না ওপেনিং ব্যাটারেরও। তাঁর সেই আক্ষেপ মেটাতে উদ্যোগী হন আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ স্বয়ং। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে প্রতীকা নিজেই সুখবর জানিয়েছেন।
বলেছেন, বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিনই ব্যক্তিগতভাবে জয় শাহ তাঁকে পদক দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। প্রতীকা বলেছেন, ‘জয় শাহ আমাদের দলের ম্যানেজারকে মেসেজ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, প্রতিকার জন্য আমি পদকের ব্যবস্থা করছি। এত দিন বিষয়টা বলিনি।’
প্রতীকা আরও বলেছেন, ‘আমাদের দলের এক সাপোর্ট স্টাফ তাঁর পদকের বাক্সটা আমাকে দিয়েছেন। পদকটা প্রথমবার দেখে কেঁদে ফেলেছি। আমি সাধারণত কাঁদি না। কিন্তু বিশ্বকাপের পদক দেখে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। এটা একদম অন্যরকম একটা অনুভূতি।’
বিশ্বকাপ জয়ের রাতে কী বলেছিলেন জয় শাহ? প্রতীকা বলেছেন, ‘সে দিনই জয় স্যার আমাদের বলেছিলেন, আইসিসির সদর দপ্তর থেকে তিনি একটি পদক পাঠাতে বলেছেন। সেটা আসতে কয়েক দিন সময় লাগবে। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগে দলের এক জন সাপোর্ট স্টাফ তাঁর পদকটি আমাকে পরার জন্য দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, পদকটা যেন আমি নিজের মনে করেই পরি। কারণ আইসিসি দপ্তর থেকে আমার পদকটা এখনও এসে পৌঁছোয়নি।’
