সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: আইএসএলের নিরিখে মোহনবাগানের সবচেয়ে সফল মরশুমের মধ্যে গতবছর অন্যতম। জুয়ান ফেরান্দোর ডুরান্ড জয়ের পর আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের হাত ধরে আসে আইএসএল লিগ শিল্ড। যদিও ঘরের মাঠে মুম্বই সিটির কাছে হারায় ট্রেবল অধরা থাকে। এবার সেই সাফল্য ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যেই আইএসএলের দামামা বেজে গিয়েছে। বুধবার কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত হয় মিডিয়া ডে। আইএসএলের ১৩ দলের মধ্যে সাতটি দলের কোচ এবং ফুটবলাররা হাজির ছিলেন। ঘরের মাঠে নর্থ ইস্টের কাছে অপ্রত্যাশিত হারে ডুরান্ড কাপ হাতছাড়া হয়েছে। এবার নতুন করে শুরু করতে তৈরি হোসে মোলিনা। তবে কাজটা মোটেই সহজ নয়। প্রতি মুহূর্তে তুলনা টানা হবে গতবারের সাফল্যের সঙ্গে। হাবাসের সঙ্গে। তবে সেইসব মাথায় রাখছেন না স্প্যানিয়ার্ড। অতীত ঝেড়ে ফেলে আগামীতেই ফোকাস মোহনবাগান কোচের। দাবি, তাঁর ওপর কোনও বাড়তি চাপ নেই। মোলিনা বলেন, 'চাপ আমার কাছে কোনও সমস্যাই না। তিন বছর আইএসএলে আছি। গতবছর মোহনবাগান দারুণ সাফল্য পেয়েছে। আরও একটা ভাল মরশুমের জন্য তৈরি হচ্ছি। এবার দলে কয়েকটা পরিবর্তন হয়েছে। আগের বছর সাফল্য পেয়েছে মানেই যে এবারও পাবে, তেমন ধরে নেওয়া যায় না। আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে। পুরো ৯০ মিনিট ভাল খেলতে হবে। আমি অতীতের সাফল্য নিয়ে ভাবছি না। ভবিষ্যত নিয়ে ভাবছি। সাফল্য পেতে যা করার করব। আপাতত লক্ষ্য মুম্বই ম্যাচ।' 

এবার আইএসএলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে মহমেডান স্পোর্টিং‌।‌‌ বেড়েছে আরও একটি দল। কোন দলকে মোলিনা সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ মনে করছেন? কোনও নির্দিষ্ট দলকে অবশ্য বাছতে পারেননি বাগান কোচ। মোলিনা বলেন, 'আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলব, আইএসএলের কোনও ম্যাচ জেতা সহজ নয়। তাই কোনও নির্দিষ্ট দলকে বাছা যাবে না। আমরা খেতাবের জন্য লড়ব। নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।' প্রায় এক মাস হতে চলল প্র্যাকটিস শুরু করেছে বাগান। তবে এখনও যে দল পুরোপুরি তৈরি নয়, সেটা আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন মোলিনা। এবার আইএসএলের পাশাপাশি খেলতে হবে এএফসিতে। মুম্বই সিটি ম্যাচের তিনদিন পরই ঘরের মাঠে এএফসির ম্যাচ। দুই প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারসাম্য রাখা কতটা কঠিন? মোলিনা বলেন, 'দুটো ভিন্ন প্রতিযোগিতা। আলাদা পরিকল্পনা। কলকাতায় খেলা হোক, বা বাইরে, আমাদের সেরাটা দিতে হবে। ম্যাচ প্রতি এগোতে চাই। আপাতত মুম্বই ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তারপর পরেরটা নিয়ে ভাবব।' 

প্রতিবছর বদলাচ্ছে কোচ। গত দেড় বছরে তিনজন। জুয়ান ফেরান্দো, আন্তোনিও হাবাসের পর এবার হোসে মোলিনা। বারবার কোচ বদলে স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে মানিয়ে নিতে কতটা সমস্যা হয় প্লেয়ারদের? দিমিত্রি বলেন, 'আমার মনে হয় না এটা দলের ওপর প্রভাব ফেলে। ফুটবলে এমন হয়। অতীতেও হয়েছে। সবাই ভাল কোচ। আমাদের নিজের সেরাটা দিতে হবে।' সবুজ মেরুন জনতার নয়নের মণি হয়েছে উঠেছেন পেত্রাতোস। কঠিন সময় একাধিকবার বাগানের পরিত্রাতা হয়েছেন। গোল করেছেন আইএসএল ফাইনালে, ডুরান্ড ফাইনালে। নতুন মরশুমে কি কোনও ব্যক্তিগত টার্গেট সেট করেছেন? দিমিত্রি বলেন, 'প্রত্যেক মরশুমে আমি নিজের টার্গেট সেট করি না। প্রত্যেক ম্যাচে নিজের সেরাটা দিতে চাই। একইসঙ্গে খেলাটা উপভোগ করতে চাই।'

চোট সারিয়ে কবে সবুজ মেরুন জার্সিতে জেমি ম্যাকলারেনের অভিষেক হবে জানেন না খোদ মোলিনা। তবে দেশওয়ালি ভাইয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে বাগানে ফুল ফোটাতে উদগ্রীব কামিন্স। তিনি বলেন, 'জেমি ম্যাকলারেন দারুণ প্লেয়ার। ওর গোলের রেকর্ডই সেটা বলে দেয়। এবার ওর সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলতে তৈরি। আমাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হবে। প্রথম একাদশ বাছতে কোচ সমস্যায় পড়বে। আমাদের লক্ষ্য হবে প্রত্যেক ম্যাচ জেতার চেষ্টা করা।' ম্যাকলারেন, কামিন্স, পেত্রাতোসদের ভিড়ে প্রথম একাদশে সুযোগ হবে না সুহেল ভাটের। তবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দলে জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করবেন তরুণ স্ট্রাইকার। সুযোগ পেলে, তার সদ্ব্যবহার করতে চান। জানালেন, তারকা বিদেশিদের পাশে পাওয়া তাঁর জন্য বড় প্রেরণা। তাঁদের থেকে অনেক কিছু শিখছেন সুহেল। অন্যদিকে চোটের জন্য আগের মরশুমে ছিটকে গেলেও এবার দলে ফিরছেন আশিক কুরুনিয়ন। আবার নতুন করে নিজের জাত চেনাতে তৈরি বাগানের প্রতিভাবান উইঙ্গার।