আজকাল ওয়েবডেস্ক: একসময়ে মোহনবাগান মাঠে তাঁকে দেখলেই স্লোগান উঠত, ''শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, ব্যারেটোই ভরসা।'' ভরসা-আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন সবুজ তোতা। পুরোদস্তুর টিমম্যান ছিলেন। মোহনবাগান ক্লাবের ঘাসে ঘাসে এখনও লেখা রয়েছে ব্যারেটো-রূপকথা। বুটজোড়া তুলে রাখার পরেও 'মিস্টার মোহনবাগান' সবার কাছে সমান প্রাসঙ্গিক। ব্যারেটো এখনও সবার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি।
তাঁকে নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে কত মিথ। তাঁকে নিয়ে রয়েছে কত গল্প। আজ ব্রাজিলীয় ম্যাজিশিয়ানের জন্মদিনে সেই সব গল্প নিয়েই চলছে চর্চা। চায়ের পেয়ালায় উঠছে তুফান। তাঁর স্যান্ডেল পরে চলে যেতেন সতীর্থরা। ব্যারেটো খুঁজে পেতেন না নিজের জুতো। একদিন ৩২ জোড়া স্যান্ডেল নিয়ে ব্যারেটো চলে এসেছিলেন ক্লাব তাঁবুতে।
গোড়ার দিকে ইংরেজি জানতেন না। তদানীন্তন বাগান কোচ সুব্রত ভট্টাচার্যের নির্দেশ বুঝতেও সমস্যায় পড়তে হত। ইংরেজি শিখতে চলে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ ইনস্টিটিউটের ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং সেন্টারের শিক্ষিকা শুভ্রা দত্তর কাছে।
শুভ্রা দেবী ফিরে যাচ্ছেন ফেলে আসা দিনে। বলছিলেন, ''আমি মোহনবাগান বাড়ির মেয়ে। মোহনবাগান বাড়ির বউও বটে। একদিন দেখি আমার বাড়িতে ছোট্ট মেয়েকে কাঁধে নিয়ে সহধর্মিনীকে সঙ্গে করে হাজির ব্যারেটো। কেউ একজন আমাকে বললেন, দ্যাখো তোমার ক্লাবের খেলোয়াড় এসেছেন। আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে ইংরেজি শিখতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, বাড়ির অনুমতি আমাকে নিতে হবে। কারণ বাড়িতে তো আমি কাউকে পড়াতাম না।''
ব্যারেটোর আবার ইনস্টিটিউটে গিয়ে ইংরেজি শেখা কঠিন ছিল। ইনস্টিটিউটে নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস হত। ব্যারেটোর পক্ষে সেই সময়ে গিয়ে ক্লাস করা ছিল সমস্যার। এদিকে শুভ্রা দেবীও ব্যারেটোকে পড়ানোর অনুমতি পেয়ে যান বাড়ি থেকে।
এগিয়ে আসছে শিক্ষক দিবস। শুভ্রা দেবীর আরও বেশি করে যেন পুরনো দিনগুলো স্মৃতিতে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলছিলেন, ''বছর খানেকের মধ্যেই ব্যারেটো শিখে নিয়েছিল অনেকটাই।''
কীভাবে ব্যারেটোকে ইংরেজি শেখাতেন? শুভ্রা দেবী বলছেন, ''একবার ওর স্ত্রী ভেরোনিকা অসুস্থ হয়ে পড়ল। পেটে ব্যথা। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছি। ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, কী খেয়েছিলেন গতকাল রাতে? এর ইংরেজি হবে, হোয়াট ডিড ইউ হ্যাভ ইয়েস্টারডে? আমি ওকে বললাম, ইয়েস্টারডে এট হোয়াট? কোথাও বেরোলে অভিধান সঙ্গে নিয়ে যেতাম দু'জনে। ধীরে ধীরে পালসটা আমি ধরে ফেলেছিলাম।''
কালক্রমে শুভ্রা দেবীই হয়ে উঠলেন ব্যারেটোদের ফ্রেন্ড, ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড। স্মৃতির পাতা উলটে তিনি বলে চলেন, ''শুরুর দিকে একটা পাউরুটি কিনতেও ব্যারেটো চলে যেত নিউ মার্কেট। রাস্তা ঘাট খুব একটা চিনত না। খুব সহজ-সরল, ভদ্র ছেলে ছিল। ঘরোয়া অনুষ্ঠানে আসত। কোনও অহং বোধ ছিল না। আমাদের পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠেছিল ব্যারেটো।'' সেই বন্ধুত্ব এখনও অটুট রয়েছে।
নিজের ফুটবল নিয়ে ব্যারেটো ছিলেন সিরিয়াস। ইংরেজি ক্লাস নিয়েও ছিলেন সমান যত্নবান। শিক্ষিকা বলছেন, ''একবার জন্মদিনে কেক নিয়ে আসা হল। কিন্তু ব্যারেটো বলল, আজ আমার ক্লাস আছে। কেক কাটা পরে হবে।'' টুকরো টুকরো গল্প দিয়ে আসল ব্যারেটোকে জানা যায়। ফুটবল না খেলে অন্য পেশায় গেলেও একইভাবে তিনি সফল হতেন হয়তো।
জন্মদিনে ছাত্রকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শুভ্রা দেবী। তিনি বলছিলেন, ''ব্যারেটো ফিরে গেয়েছে দেশে। কিন্তু ও এখনও সবার কাছে সমাদৃত। অনেকেই তো খেলে গিয়েছে এই দেশে। কিন্তু ব্যারেটোর মতো ক'জন এসেছে আর?'' আজ সব অর্থেই দিনটা স্মৃতিরোমন্থনের। প্রতিপক্ষ থেকে সমর্থক, সবাই যে তোতা-কাহিনিতে ডুবে।
আরও পড়ুন: আর্জেন্টিনার জার্সিতে খেলতে চান না মেসি, প্রকাশ্যে এল বিস্ফোরক তথ্য
