আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফুটবল কোচ না হলে তিনি হয়তো মনোবিজ্ঞানী হয়ে যেতেন। তিনি কিবু ভিকুনাডায়মন্ড হারবার ফুটবল দলের রিমোট কন্ট্রোল তাঁরই হাতে। স্পেনীয় কোচকে নিয়ে আজ হইচই, পত্রপত্রিকায় এত লেখালেখি, তার একটাই কারণ...। কিবুর হাতে হাতে পড়ে ডায়মন্ড হারবার 'হীরকদ্যুতি' ছড়াচ্ছে

ডুরান্ড কাপ জেতার গন্ধ পাচ্ছে কিবুর দল। স্বপ্ন দেখছে গোটা বাংলা। কিবু ভিকুনা নিশ্চয় খুশি। শূন্য থেকে শুরু করেছিল ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব। আর একটা বাধা টপকালেই ডুরান্ড কাপ ঘরে তুলবেন স্বপ্নের সওদাগর কিবু ভিকুনা

আমার বেশ মনে পড়ছে ২০১৯ সালের ডুরান্ড কাপ ফাইনালের কথা। মরশুমের প্রথম টুর্নামেন্টকিবু ভিকুনা তখন মোহনবাগান কোচ। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে কিবুর সবুজ-মেরুন ব্রিগেড পরাস্ত হল গোকুলামের কাছে। 'গেল গেল' রব উঠেছিল সেদিন। সেই কিবুর হাত ধরেই পরে বাগানে এসেছিল আই লিগ। স্পেনীয় কোচকে বলতে শুনেছিলাম, ''গো ব্যাক ধ্বনি উঠলেও দর্শন আমি বদলাবো না'' দর্শন বদলাননি পেপ গুয়ার্ডিওলা-দিয়েগো সিমিওনের ভক্ত।

আরও পড়ুন: একদিনের ক্রিকেটে রোহিতের উত্তরসূরি শ্রেয়স? মুখ খুললেন বোর্ড সচিব, কী জানালেন?

তিনি আবার প্রাক্তন স্প্যানিশ কোচ জুলেন লোপেতেগির বন্ধু। পাঁচ বছর আগে সেভিয়াকে ইউরোপা লিগ জিতিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন লোপেতেগি। বন্ধুর চোখে জল দেখে এই প্রতিবেদককে কিবু বলেছিলেন, ''আবেগ নিয়েই তো আমাদের জীবন।’’

জীবনে কখনও উঁকি দেয় মেঘ আবার কখনও ঝলমল করে রোদ। কোচেদের জীবনই তো ট্র্যাপিজের দড়িতে হাঁটার মতো। ভারসাম্য হারালেই পড়ে যেতে হবে। সেই কিবুই বলেন, ''কোচ হওয়া সহজ কাজ নয়। বাইরে থেকে মানুষ কোচের রেজাল্টটাই দেখেন। রেজাল্ট দিয়ে বিচার করা হয় কোচকে। কিন্তু রেজাল্ট পাওয়ার জন্য যে ঘাম ঝরানো হয়, সেটা মানুষের নজরে আসে না। আমি নীরবে, নিভ্তে সেই কাজটাই করে চলেছি।''

May be an image of 5 people, people playing soccer, people playing football and text

নীরবে-নিভৃতেই বটে। তাঁকে নিয়ে ঢক্কানিনাদ নেই আমাদের মধ্যে। দুই প্রধানের কোচরা আলোর বৃত্তে থাকেন। তাঁদের কথাই ভক্তরা শুনতে চান। ডার্বির আগে দুই প্রান্ত থেকেই ভেসে আসে বিস্ফোরক সব বাক্যবন্ধনী

ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের কোচ কিবু ভিকুনাকে ম্যাচের আগে প্রতিটি সাংবাদিক বৈঠকে বেশি করে উত্তর দিতে হয় প্রতিপক্ষ নিয়ে। নিজের দল নিয়ে শুনতে হয় কম প্রশ্ন। ইস্ট-মোহনের বিরুদ্ধে নামার আগে তো কথাই নেই। কিবু বলতেন, ''আমরাও সম্মান প্রত্যাশা করি। রেসপেক্ট..রেসপেক্ট।''

মোহনবাগানের হেডস্যর থাকার সময়েও বড় ম্যাচের আগে তাঁর মুখ থেকে শোনা যায়নি বিতর্কিত মন্তব্য। ছিল না আসর গরম করা বক্তব্য। প্রতিপক্ষকে সম্মান করতেন। প্রতিদানে সম্মান ফিরেও পেয়েছেন। এবারের ডুরান্ড কাপে প্রথমে জামশেদপুর, পরে ইস্টবেঙ্গলের দৌড় থামিয়ে দিয়ে কিবু আদায় করে নিয়েছেন রেসপেক্ট। ফাইনালে নামার আগে নিশ্চয় আর প্রতিপক্ষকে নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হবে না তাঁকে। ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবকে নিয়েই জানতে চাইবে গোটা দেশ

খেলতে খেলতেই কোচিংয়ে এসেছিলেন। সেই কারণে তাঁর মগজাস্ত্র এত শাণিত। কিবুর বয়স তখন ২৬। মরশুমের মাঝামাঝি সময়ে ব্যর্থতার নৈতিক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কোচ পদত্যাগ করেছিলেন। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন কিবু। খেলার সঙ্গে চলছিল পড়াশোনাও। কোচ তাঁকে বলেন, ''আমি পদত্যাগ করছি। তোমাকেই এ বার দায়িত্ব নিতে হবে। খেলার পাশাপাশি এ বার থেকে কোচিংও করাবে তুমি।'' সেই শুরু। খেলা ছেড়ে কোচিং শুরু করেন। তার পর দেশে বিদেশের একাধিক ক্লাব ঘুরে স্পেনীয় কোচ এখন ডায়মন্ড হারবারের মায়েস্ত্রো। 

May be an image of 3 people, people playing football, people playing soccer and text

কিবুর জন্যই বহুদূর থেকে ছুটে আসা যায়কিবুর জন্যই সমর্থক হওয়া যায় ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের। মন প্রাণ সঁপে দেওয়া যায় সুভদ্র মানুষটিকেডুরান্ড জয়ের সামনে দাঁড়িয়েও তিনি একইরকম শান্ত। টেনশন নেই। নেই দুঃশ্চিন্তার বালাই। তিনি হতে চান আরও ভাল কোচ। আরও ভাল মানুষ। তাঁকে দেখে, তাঁর কথা শুনে মনে হয়, একটাই তো হৃদয় কিবু ভিকুনা, আর কতবার জিতে নেবেন। 

আরও পড়ুন:  'ডায়মন্ড রিং'য়ের ছটায় স্মৃতিতে জাগল বাংলার আরেক ক্লাবের লড়াই, বিপ্লব ঘটিয়েছিল কুড়ি বছর আগের শিল্ডে ...