আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাড়ি বাড়ি গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার চালান ভরত ঝা। বহু কষ্টে পরিবারকে ধরে রাখা এই মানুষটির সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল একদিন তাঁর ছেলে ক্রিকেট মাঠে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে। দারিদ্র্য তাঁদের নিত্যসঙ্গী, তবু স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি আর্থিক অস্বচ্ছলতা। সেই সংগ্রামের পথেই গড়ে উঠছে এক নতুন ভবিষ্যৎ — সেই ভবিষ্যতের নাম দেব ঝা।

শান্তিনিকেতন থানার কালীসায়র এলাকার ছেলে দেব বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। ছোট থেকেই ক্রিকেটে তাঁর ঝোঁক। ১২ বছর বয়সে ব্যাট হাতে তুলে নিয়েই ঠিক করে নেন, একদিন দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামতেই হবে। সেই স্বপ্ন বুকে নিয়ে বোলপুরের ইয়ং টাউন ক্লাবের কোচিং সেন্টারে শুরু হয় তাঁর ক্রিকেট যাত্রা। এরপর কার্যত ক্রিকেটই হয়ে ওঠে তাঁর ধ্যানজ্ঞান। প্রশিক্ষক অরিজিৎ রায় শুধুমাত্র কোচ নন, দেবের জীবনে তিনি অভিভাবকের মতো।

অভাবের দিনগুলোতেও পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি, কখনও দেবকে বুঝতে দেননি অর্থাভাবের কষ্ট। আর দেবের পথচলায় সঙ্গী শুধু অনুশাসন, মনোযোগ ও কঠোর পরিশ্রম।

স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, এরপর জেলা পর্যায়, স্কুল লেভেল, ধাপে ধাপে এগিয়েছেন দেব। প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করেই এখন জাতীয় পর্যায়ে পা রেখেছেন বোলপুরের এই প্রতিভাবান তরুণ। এবছর হরিয়ানায় আয়োজিত অনূর্ধ্ব ১৯ স্কুল গেমস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিজের রাজ্য বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি।  সংসারের টানাপোড়েন, ভবিষ্যতের আশঙ্কা, সবকিছুকে জেদ, মনোযোগ আর শ্রম দিয়ে অতিক্রম করে প্রমাণ করেছেন, সুযোগের অপেক্ষা করে নয়, সুযোগ তৈরি করাই লড়াইয়ের আসল স্বার্থকতা।

এ প্রসঙ্গে দেবের কোচ অরিজিৎবাবু বলেন, খবর শুনে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে বোলপুর থেকে একজন এই স্তরে সুযোগ পেয়েছিল। আবার নিজের ক্লাব ও ক্যাম্পের ছাত্রকে একই জায়গায় পৌঁছতে দেখে তিনি গর্বিত। অরিজিৎবাবুর বিশ্বাস, দেবের এই সাফল্য অন্য ক্রিকেটারদেরও উজ্জীবিত করবে। তিনি দেবকে শুধু একটাই বার্তা দিয়েছেন, সুযোগ সবসময় আসে না, তাই যখন সুযোগ মিলেছে সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে।

তবে যাঁকে নিয়ে এত উচ্ছ্বাস, সেই দেব কিন্তু সংযত এবং বাস্তববাদী। তিনি বলেন, এই সুযোগ পাওয়ার পিছনে ইয়ং টাউন ক্লাব ও কোচ অরিজিৎ রায়ের ভূমিকা অপরিসীম। ‌তাঁরা সাহস না জোগালে এটা সম্ভবই ছিল না। ‌ বিশেষত কোচ আমাকে ব্যাট, বল কিনে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন,তাঁর জন্য স্যারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এখন এই সুযোগকে কাজে লাগানোই আমার একমাত্র লক্ষ্য। অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে বাংলার হয়ে খেলছি যখন, প্রথম লক্ষ্য থাকবে দলের হয়ে প্রচুর রান করা ও দলকে জেতানো। আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে প্রতিযোগিতা শুরু। এখন পুরোদমে প্র্যাকটিস চলছে।

দেবের সাফল্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে চারদিকে। কোচ, প্রতিবেশী থেকে স্কুল ও এলাকাবাসী, সবাই গর্বিত বোলপুরের এই তরুণ প্রতিভাকে দেখে। এখন শুধু অপেক্ষা সেই দিনের, যেদিন জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের হয়ে খেলবে দেব ঝা। স্বপ্ন হয়তো একটু দূরেই, তবে হাত বাড়ালেই ধরা দেবে। কারণ লক্ষ্য যখন স্থির, তখন সাফল্যের পথ নিজেই তৈরি হয়ে যায়।