আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ তিনি ক্রিস গেইল। ইউনিভার্সাল বস। মজাদার চরিত্র। সেই গেইলই নাকি চলে গিয়েছিলেন অবসাদে। তা–ও আবার আইপিএল খেলতে এসে। কেরিয়ারের সেই কঠিন সময়ের কথা এত দিনে জানিয়েছেন গেইল। তিনি এ–ও জানিয়েছেন, আইপিএলে তাঁর করা ১৭৫ রানের রেকর্ড ভাঙতে পারে বৈভব সূর্যবংশী। শুভঙ্কর মিশ্রের এক পডকাস্টে নিজের দেশের ক্রিকেট নিয়েও মুখ খুলেছেন ‘ইউনিভার্স বস’।


আইপিএল কেরিয়ারের শেষ তিন বছর পাঞ্জাব কিংসে খেলেছিলেন তিনি। ২০২১ সালে শেষ। তার পর আর আইপিএলে দেখা যায়নি তাঁকে। পাঞ্জাবের হয়ে শেষ বছরটা খুব খারাপ কেটেছিল তাঁর। গেইল জানিয়েছেন, প্রীতি জ়িন্টার দল তাঁকে অসম্মান করেছিল। কেরিয়ারে কোনও দিন এতটা খারাপ অভিজ্ঞতা তাঁর হয়নি। গেইল বলেন, ‘‌আমার আইপিএল কেরিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছে। সেটা পাঞ্জাবের জন্য। ওরা আমাকে অসম্মান করেছে। আমার মতো সিনিয়র এক জনকে বাচ্চা ছেলের মতো দেখত। ওরা আমার সঙ্গে কথাই বলত না। খেলার সুযোগ পেতাম না। জীবনে প্রথম বার অবসাদে চলে গিয়েছিলাম। ওই সময় টাকার কোনও গুরুত্ব আমার কাছে ছিল না। মানসিক শান্তি চাইছিলাম।’‌ ২০২১ সালে কোভিডের মাঝে আইপিএল হয়েছিল। ফলে ক্রিকেটারদের অনেক সতর্কতা নিতে হত। খেলা বাদে বাকি সময় হোটেলেই কাটাতে হত। ফলে মানসিক ভাবে একটা চাপ ছিলই। গেইল বলেন, ‘‌ওই সময় জৈবদুর্গের মধ্যে থাকতে হত। বেরোতে পারতাম না। মাথার মধ্যে অনেক কিছু চলত। ভিতরে ভিতরে ভেঙে পড়েছিলাম। মুম্বইয়ের সঙ্গে শেষ ম্যাচের পর আর থাকতে চাইছিলাম না। অনিলকে (তৎকালীন পাঞ্জাব কোচ অনিল কুম্বলে) ডেকে বলেছিলাম, আমি এখান থেকে বেরাতে চাই। ওর সঙ্গে কথা বলার সময় কেঁদে ফেলেছিলাম। তখন লোকেশ রাহুল অধিনায়ক ছিল। ও আমাকে থাকতে বলেছিল। কিন্তু আমি ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম।’‌ 


আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ৬৬ বলে ১৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন গেইল। এখনও পর্যন্ত সেটা আইপিএলে এক ইনিংসে সর্বাধিক রান। গেইলের মতে, সেই রেকর্ড যে কোনও দিন ভেঙে যেতে পারে। তাঁর মুখে উঠে এসেছে ১৪ বছরের বৈভবের নাম। গেইল বলেন, ‘‌ওই রেকর্ড যে কোনও দিন ভাঙতে পারে। এখন দুর্দান্ত সব ব্যাটার। ১৪ বছরের একটা ছেলে এসেছে। বৈভব। কী অসাধারণ ব্যাট করে। কোনও ভয় নেই। ওর বয়সে তো আমি হাইস্কুলে ছিলাম। অনূর্ধ্ব–১৪ খেলতাম।’‌ বৈভবের পাশাপাশি আরও চার জনের নাম করেছেন গেল। তাঁর মতে, এই চার জনেরও ক্ষমতা রয়েছে সেই রেকর্ড ভাঙার। তাঁরা হলেন, নিকোলাস পুরান, শুভমান গিল, যশস্বী জয়সওয়াল ও অভিষেক শর্মা।


আরও অনেক কিছু নিয়ে কথা বলেছেন গেইল। সেই তালিকায় যেমন নিজের দেশের ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালবাসার কথা রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিরাট কোহলি ও এবি ডিভিলিয়ার্সের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ।


আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন দীর্ঘ দিন। কিন্তু এখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি গায়ে খেলতে ভালবাসেন। 


২০১১ সালের আইপিএলের নিলামে প্রথমে দল পাননি গেইল। পরে ডার্ক ন্যানেস চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু গেইলকে পরিবর্ত হিসাবে নেয়। তবে তার নেপথ্যে রয়েছে এক মজার ঘটনা। গেইল বলেন, ‘‌আমাকে যখন আরসিবি ফোন করে তখন আমি জামাইকার এক পানশালায় বসে। সেই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে টালমাটাল অবস্থা। কিছু দিন আগে বিশ্বকাপে দলের ফল খারাপ হয়েছে। পরের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে আমাকে নেওয়া হয়নি। আমার হালকা চোটও ছিল। তাই ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েছিলাম। রিহ্যাব করছিলাম।’‌ সেই সময় আরসিবির মালিক বিজয় মালিয়া ও তৎকালীন অধিনায়ক অনিল কুম্বলের ফোন পেয়েছিলেন গেইল। তিনি বলেন, ‘‌সেই সময় ক্রিকেট খেলছিলাম না। মালিয়া ও অনিল ফোন করে জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কি খেলার জন্য ফিট?’ আমি হ্যাঁ বললাম। তখন ওরা বলল, ‘কাল দূতাবাসে যাবে।’ পরের দিন শনিবার ছিল। বললাম, দূতাবাস বন্ধ থাকবে। ওরা বলল, ‘সেই চিন্তা করতে হবে না।’ দূতাবাসে গেলাম। ভিসা পেয়ে গেলাম। ভারতে চলে এলাম।’‌


প্রথম ম্যাচে ইডেন গার্ডেন্সে পুরনো দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে শতরান করেছিলেন গেইল। পর পর দুই মরশুমে কমলা টুপি পেয়েছিলেন। সেই দু’বছর খেলা উপভোগ করেছিলেন গেইল। তিনি বলেন, ‘‌যখন যোগ দিয়েছিলাম, আরসিবি পয়েন্ট তালিকায় সকলের শেষে ছিল। তাই আমার উপর চাপ ছিল না। মজা করে খেলেছিলাম। ফাইনালে উঠেছিলাম। চেন্নাইয়ের কাছে হেরেছিলাম। কিন্তু খুব মজা করেছিলাম সে বার। পরের বছরও উপভোগ করেছি।’‌


২০১২ সালের বিশ্বকাপ জিতে বেশি আনন্দ পেয়েছিলেন গেইল। সে বারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তাঁরা। সেই বিশ্বকাপ জেতার নেপথ্যে আরও একটা কাহিনি রয়েছে। গেইল বলেন, ‘‌সেই সময় বোর্ডের সঙ্গে গন্ডগোল চলছিল। তাই আমরা ক্রিকেটারেরা একটা দল হয়ে খেলেছিলাম। সকলকে জবাব দেওয়ার ছিল। সে বারই প্রথম গ্যাংনাম স্টাইলে নেচেছিলাম। তার আগে কেউ জানত না। আমিই ওই নাচ বিখ্যাত করেছি।’‌


প্রথম ব্যাটার হিসাবে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই শতরানের রেকর্ড রয়েছে গেইলের। তিনি জানেন, কোনও রেকর্ডই অক্ষত থাকে না। কিন্তু এই রেকর্ড ক্রিকেটে অক্ষত থেকে যাবে। কারণ, তিনি প্রথম। সেই নজির কেউ ভাঙতে পারবে না।


গেইল জানিয়েছেন, আরসিবি তাঁকে আমন্ত্রণ করেছিল। কিন্তু যে হেতু দু’টি দলই তাঁর পুরনো দল তাই বেঙ্গালুরুর জার্সি পরার পাশাপাশি পাঞ্জাবের পাগড়িও পরে নিয়েছিলেন তিনি। তবে সেটা অনেকে ভাল ভাবে নেননি। 


দু’জনের সঙ্গেই খুব ভাল সম্পর্ক রয়েছে গেইলের। খেলা ছাড়ার পরেও সেটা থেকে গিয়েছে। তবে বিরাটের দুই ফরম্যাট থেকে অবসর মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে তাঁর। 


সরফরাজ খানের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন গেল। তাঁর মতে, ভারতের টেস্ট দলে খেলা উচিত সরফরাজের। 
ধোনি নিজেও জানেন না কত দিন আইপিএলে খেলবেন। তবে গেইলের মনে হয়, ধোনি যত দিন চাইবেন তত দিনই তাঁর খেলা উচিত।