আজকাল ওয়েবডেস্ক: অ্যাশেজ চলাকালীন ইংল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ উঠল। জানা যাচ্ছে, অ্যাশেজ চলাকালীন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় টেস্টের মাঝের বিরতিতে অস্ট্রেলিয়ায় নুসা সফরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। সফরের সময় ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস ও তাঁর দলের খেলোয়াড়দের অতিরিক্ত মদ্যপানের অভিযোগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড।

অ্যাডিলেডে তৃতীয় টেস্টে ৮২ রানে হারের পর অস্ট্রেলিয়ায় টানা চতুর্থবার অ্যাশেজ সিরিজ হারতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। উল্লেখ্য, তৃতীয় টেস্টের আগে ইংল্যান্ড দল চার দিনের জন্য নুসায় বিশ্রামে গিয়েছিল।

সেই সফর নিয়েই শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার একাধিক বিশেষজ্ঞ সমালোচনা করেছিলেন। পরে বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করা হয়, ওই সফরে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানে জড়িয়েছিলেন, যা নিয়ে হারের পর প্রশ্ন উঠেছে।

এই অভিযোগ প্রসঙ্গে ইংল্যান্ড দলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রব কি জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি স্পষ্ট করেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের জন্য অতিরিক্ত মদ্যপান কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে একই সঙ্গে জানান, প্রাথমিকভাবে তিনি যা শুনেছেন, তাতে খেলোয়াড়দের আচরণ মোটের ওপর ঠিকঠাকই ছিল। ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রব কি বলেন, ‘যদি কেউ বলে যে আমাদের খেলোয়াড়রা বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করেছে, তাহলে অবশ্যই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের জন্য অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা আমি কোনও অবস্থাতেই আশা করি না। তা না হলে সেটি বড় ব্যর্থতা হবে। তবে এখনও পর্যন্ত যা শুনেছি, তাতে তারা খুব ভাল আচরণই করেছে।’

তিনি আরও বলেন, দলের সংস্কৃতিতে সীমিত পরিসরে অ্যালকোহল পান করার বিরোধী নন তিনি। কিন্তু ব্যাচেলর পার্টির মতো আচরণ, মদ খেয়ে উল্লাস করার মতো পরিস্থিতি কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

তাঁর কথায়, ‘যদি ব্যাপারটা এমন জায়গায় যায় যে তারা অতিরিক্ত মদ্যপান করছে এবং বিষয়টি ‘স্ট্যাগ ডু’-এর মতো হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমি নিজে মদ্যপান করি না। আমার মনে হয়, কোনও পরিস্থিতিতেই মদ্যপানের সংস্কৃতি কারওরই উপকারে আসে না।’

নুসা সফর নিয়ে তিনি যোগ করেন, ‘যদি এই সফরের উদ্দেশ্য হয় ফোন থেকে দূরে থাকা, একটু বিশ্রাম নেওয়া, সৈকতে যাওয়া, একসঙ্গে লাঞ্চ বা ডিনার করা, তাহলে আমার কোনও আপত্তি নেই। এখনও পর্যন্ত যা শুনেছি, তারা কেউই নির্ধারিত সময়ের পর ঘরের বাইরে যায়নি। শুধু মাঝে মধ্যে এক-আধটা পানীয় নিয়েছে। সেটা আমার কাছে সমস্যা নয়। তবে যদি এর বাইরে কিছু হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই সেটা উদ্বেগের বিষয়।’

রব কি আরও জানান, সিরিজ শুরুর আগেই জ্যাকব বেথেল ও হ্যারি ব্রুককে সতর্ক করা হয়েছিল। নিউজিল্যান্ড সফরে ইংল্যান্ডের তৃতীয় ওয়ানডের আগের রাতে একটি বারে তাঁদের মদ্যপানের ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে তাঁদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়।

কি বলেন, ওই ঘটনাটি অস্ট্রেলিয়ায় খেলোয়াড়দের ওপর কোন মাত্রার নজরদারি থাকবে, সে বিষয়ে একটি ‘ওয়েক-আপ কল’ ছিল। তিনি বলেন, ‘ডিনারের সময় এক গ্লাস ওয়াইন নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তার বেশি হলে সেটা আমার কাছে একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। আনুষ্ঠানিক কোনও শাস্তি দেওয়া হয়নি, তবে সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল।’

এদিকে অ্যাডিলেডে হারের ফলে অস্ট্রেলিয়ায় ইংল্যান্ডের টেস্ট সিরিজ হারার ধারা এখন টানা চার সিরিজে পৌঁছেছে। ২০১১ সালে অ্যান্ড্রু স্ট্রসের নেতৃত্বে ৩-১ ব্যবধানে অ্যাশেজ ধরে রাখার পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আর কোনও টেস্ট জিততে পারেনি ইংল্যান্ড।

এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১৮টি টেস্ট খেললেও ১৬টিতে হেরেছে ইংল্যান্ড। দুটি টেস্ট বৃষ্টির কারণে ড্র হয়েছে। সিরিজে এখনও দুটি ম্যাচ বাকি।

সেই ম্যাচগুলোতে সম্মান বাঁচানোর পাশাপাশি দীর্ঘদিনের অস্ট্রেলিয়া খরা কাটাতে মরিয়া থাকবে বেন স্টোকসের দল। তা না হলে অ্যাশেজ ইতিহাসে চতুর্থবারের মতো ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জার মুখে পড়তে হতে পারে বেন স্টোকসদের।