ব্যস্ততার জীবনে ভিটামিনের অভাব হওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। আসলে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট আর প্রোটিনের চাহিদা নিয়ে সতর্ক থাকলেও, ভিটামিনের প্রতি আমাদের অবহেলার শেষ নেই। একইসঙ্গে সব ধরনের ভিটামিন নিয়ে রয়েছে সচেতনতার অভাব। এই যেমন ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতি হলে ঠিক কী সমস্যা হতে পারে তা ঠাওর করতে পারেন না অনেকেই!

ভিটামিন বি ১২ শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। ডিএনএ থেকে শুরু করে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা নেয় এই ভিটামিন। ভারতীয়দের মধ্যে এই ভিটামিনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। যা থেকে হানা দেয় বড় সড় অসুখ। ভিটামিন বি১২ শরীরের স্নায়ু, রক্ত ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অনেক সময় এই ভিটামিনের ঘাটতি হয়ে গেলে আমরা তা টের পাই না। চিকিৎসকদের মতে, রক্ত পরীক্ষার আগেই আমাদের পায়ের আঙুল নীরবে জানাতে শুরু করে যে শরীরে বি১২-এর অভাব তৈরি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বি১২-এর ঘাটতি মূলত স্নায়ুকে প্রভাবিত করে। তাই শরীরের যে অংশে স্নায়ু সবচেয়ে সংবেদনশীল যেমন পায়ের আঙুল—সেখানেই প্রথম অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে। তাহলে ঠিক কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন জেনে নিন। 

১. ঝিনঝিনে অনুভূতি বা অবশ লাগাঃ হঠাৎ করে পায়ের আঙুল অসাড় হয়ে যাওয়া বা সুচ ফোটার মতো অনুভূতি বি১২ ঘাটতির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল হয়ে গেলে এই ধরনের ইলেকট্রিক শকের মতো অনুভূতি হয়।

২. ভারসাম্য হারানো বা হাঁটতে কষ্টঃ দীর্ঘদিন বি১২ কম থাকলে স্নায়ুর ক্ষতি হয়। ফলে হাঁটার সময় ভারসাম্য রাখতে সমস্যা, হোঁচট খাওয়া বা অস্থির লাগা-এসব দেখা দিতে পারে।

৩. পায়ের আঙুল ঠান্ডা হয়ে যাওয়াঃ শরীরে রক্তপ্রবাহ কমে গেলে আঙুল ঠান্ডা হয়ে যায়। বি১২ ঘাটতিতে লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়ায় রক্ত সঠিকভাবে পায়ে পৌঁছায় না।

৪. শক্তি কমে যাওয়া ও দুর্বলতাঃ পায়ের আঙুলে ব্যথা বা দুর্বলতা অনুভব করলে সতর্ক হন। শরীরে অক্সিজেন পরিবহন কমে গেলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫. ত্বকের রং বদলে যাওয়াঃ আঙুলের ত্বক ফিকে বা হলদেটে হয়ে গেলে তা বি১২-এর ঘাটতির ইঙ্গিত হতে পারে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে? মূলত যারা নিরামিষভোজীরা, দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টাসিড বা মেটফর্মিন সেবন করেন, প্রবীণ মানুষেরা, পাচনতন্ত্রের রোগে ভুক্তভোগীদের ঝুঁকি বেশি থাকে। 

কী করবেন? এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে স্বাভাবিক বি১২-এর স্তর ফিরিয়ে আনা যায়।