গোপাল সাহা
হাসপাতালের বর্জ্য রিসাইকেল নিয়ে পূর্বেই রাজ্যজুড়ে প্রবল ঝড় উঠেছিল। রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল এই বর্জ্য রিসাইকেল নিয়ে। আর সেই নিয়ে রাজ্য সরকার যথেষ্ট সচেতনতার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং মানুষকে সচেতন করেছে বারবার। তারপরেও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে খাস কলকাতায় ব্যস্ত রাস্তার ধারে প্রকাশ্য দিবালোকে রমরমিয়ে চলছে এক ভয়ঙ্কর চক্র।
শিয়ালদহ সংলগ্ন ট্যাংরার মুন্সিবাজার এলাকায় প্রকাশ্যে বাছাই করা হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসা ব্যবহার করা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ। যেগুলি বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য হিসেবে ধ্বংস হওয়ার কথা, সেই সিরিঞ্জই এখানে খোলা আকাশের নীচে পরিষ্কার করা হচ্ছে! আরও উদ্বেগের বিষয়, সুরক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থা ছাড়াই খালি হাতে সিরিঞ্জগুলি পরিষ্কার করছেন মহিলারা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কয়েকজন শ্রমিক রাস্তায় বসে, খোলা হাতে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ধুচ্ছেন, খুলছেন, আলাদা করছেন। কোথা থেকে আসে এই সিরিঞ্জ? আবার পরিষ্কারের পর কোথায়ই বা যায় এগুলি? শ্রমিকেরা নিজেরাও জানেন না এগুলি কীভাবে পুনরায় ব্যবহার হয় বা কোথায় যায়। মাত্র ৩০০ টাকার দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন তারা। আর মাত্র সামান্য ক’টা টাকার মূল্যের বিনিময়ে রমরমিয়ে চলছে ভয়ঙ্কর এক ধ্বংসলীলা।
কর্মরত এক মহিলা অকপটে বলেন, “এই আয়ে আমাদের চারজনের পেট চলে। কোথায় যায়, কী হয়, জেনে লাভ কী?”
সংক্রমণের ভয়? “কোনও ভয় লাগে না!”
এই কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, এই বিষয়ে বোঝাতে গেলে শ্রমিকদের জবাব, “কোনও ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার ভয় লাগে না আমাদের।”

কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। ব্যবহৃত সিরিঞ্জে রক্তের মাধ্যমে ছড়াতে পারে বিপজ্জনক জীবাণু। চিকিৎসকদের মতে, এ ধরনের বর্জ্য রিসাইকেলিং এর ফলে সেপ্টিসেমিয়া, হেপাটাইটিস বি/সি, এইচআইভি ছাড়াও আরও নানা প্রকার ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রশ্ন, এই বর্জ্য বাইরে এল কীভাবে? স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট সংস্থা। সেগুলি নিয়ম অনুযায়ী মাঝারি তাপমাত্রায় পুড়িয়ে বা মাটির নীচে পুঁতে ফেলার কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, “এই ধরনের বর্জ্য বাইরে বেরনোর প্রশ্নই নেই। কীভাবে ঘটেছে খতিয়ে দেখা হবে। সংগ্রহকারী সংস্থাকে জবাবদিহি করতে হবে।”
সবার চোখের সামনে, রাস্তায় বসেই সিরিঞ্জ খোলা ও ধোয়ার মতো চরম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ চলছে। এলাকাবাসীর আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, এভাবে রিসাইকেল হওয়া সিরিঞ্জ কি ফের বাজারে ঢুকছে? ব্যবহার হচ্ছে কোথাও? আতঙ্কে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের মুখে।
শহরের কয়েকটি বড় বড় হাসপাতালের বাইরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অব্যবস্থাপনা শহরের জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম বিপজ্জনক।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, “রিসাইকেল করা সিরিঞ্জ পুনর্ব্যবহার হলে রোগীর রক্তে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে মারাত্মক সংক্রমণ। এটি জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের শামিল।”
