আজকাল ওয়েবডেস্ক: সামনেই নবান্নের মরশুম। তাই ধান কাটার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন লাভপুরের বিপ্রটিকুরির দুই কৃষক রামধন মন্ডল ও গোবিন্দ ঘোষ। কিন্তু সোমবার সকালে মাঠে পৌঁছতেই চোখের সামনে যেন মৃত্যুর দূত। বিশাল আকৃতির একটি চন্দ্রবোড়া সাপ ফোঁসফোঁস শব্দে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। দুই কৃষকের কথায়, সাপটি এতটাই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ছিল যে কাছে গেলেই যেন ছোবল মারার জন্য প্রস্তুত। স্বাভাবিকভাবেই দুজনেরই হাড়হিম হয়ে যাওয়ার অবস্থা।


লাভপুর, নানুরের স্থানীয় কৃষকরা জানাচ্ছেন, ধান কাটার মরশুম শুরুর মুখে এই সাপ আতঙ্ক পরিস্থিতিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। সাম্প্রতিককালে শান্তিনিকেতনের মকরমপুরে এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে চন্দ্রবোড়ার কামড়ে। লাভপুর ও নানুরের আরও কয়েকজন কৃষকও সাপের ছোবলে প্রাণ হারিয়েছেন। তাই ক্ষেতে নামলেই প্রাণহানির আশঙ্কা প্রবল। 

শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটি সুভাষপল্লী এলাকায় সোমবার সকালে তিন থেকে চারটি পূর্ণবয়স্ক রাসেল ভাইপার দেখা যায় ঝোঁপঝাড়ে। আগের দিনও একটি সাপ দেখা মিলেছিল। বনদপ্তরকে খবর দেওয়া হলেও কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলত, আতঙ্কিত স্থানীয়রা বিষধর সাপটিকে মেরে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন।


প্রসঙ্গত, চন্দ্রবোড়া সাপ ইংরেজিতে রাসেল ভাইপার নামে পরিচিত। এটি কেবল হিমোটক্সিক বিষই বহন করে না, বরং এর বিষের মধ্যে নিউরোটক্সিক, মায়োটক্সিক এবং নেফ্রোটক্সিক উপাদানও থাকে। এর ফলে কামড়ে দ্রুত চিকিৎসা না হলে মৃত্যু অনিবার্য। কারণ সাপের বিষ শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা নষ্ট করে, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ঘটায়, পেশীর পচন ধরায় এবং কিডনি বিকল হয়ে মানুষের জীবন বিপন্ন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ার কামড়ের ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে বাঁচানো খুব কঠিন। রাসেল ভাইপার মূলত শীতের সময় প্রজননের জন্য অত্যন্ত সক্রিয় থাকে। ধান ক্ষেত, জলা ও শুকনো জমি—সব জায়গাতেই এদের পাওয়া যায়। সরাসরি ডিম দেয় না; পেটের মধ্যেই ডিম নিষিক্ত হয় এবং সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮টি বাচ্চা জন্ম দেয়, কখনও ৭৫টি পর্যন্ত।

এই সাপের বিষের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে তৈরি অ্যান্টি-ভেনাম পূর্ববাংলা-সহ অন্যান্য রাজ্যে কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে ।


নানুরের চাষী নূর মোহাম্মদ বলেন, ধান কাটতে যাওয়াও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ফোঁসফোঁস শব্দই এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। আর এই সাপ এতটাই আক্রমণাত্মক যে ভুলবশত কাছে গেলেই তেড়ে কামড়াতে আসে। বর্তমানে লাভপুর, নানুর থেকে শান্তিনিকেতন—সব অঞ্চলে চন্দ্রবোড়া আতঙ্ক চূড়ান্ত পর্যায়ে। প্রাণ বাঁচিয়ে মাঠের ধান বাঁচানো এখনই বড় চ্যালেঞ্জ। বনদপ্তর ও প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন সাধারণ মানুষ। এ প্রসঙ্গে বোলপুর বনদপ্তরের রেঞ্জ অফিসার জ্যোতিষ বর্মন বলেন, বিভিন্ন জায়গায় চন্দ্রবোড়া সাপ উদ্ধারের খবর পাচ্ছি। যতটা সম্ভব দ্রুত উদ্ধার ও নজরদারির কাজ চলছে। পাশাপাশি, কৃষকদের সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই যে সবাই নিজের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুক। মাঠে যাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করুক। প্রয়োজনে স্থানীয় বনদপ্তরকে অবিলম্বে জানাতে হবে যাতে ক্ষতি কমানো যায়।