‘ধুরন্ধর’ এই বছরের বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলির মধ্যে একটি। রণবীর সিং অভিনীত এই সিনেমাটি পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অভিযানের সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। গুপ্তচরবৃত্তির থ্রিলার এই সিনেমাটি ৫ ডিসেম্বর হলে মুক্তি পাবে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ধুরন্ধর’ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল অথবা সাহসী সেনা কর্মকর্তা মেজর মোহিত শর্মার ঝুঁকিপূর্ণ মিশন দ্বারা অনুপ্রাণিত।
2
10
ছবির চার মিনিটের ট্রেলার দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। আদিত্য ধর পরিচালিত এই ছবির ট্রেলার দেখেই শিউরে উঠছেন দর্শক। রণবীর সিং, সঞ্জয় দত্ত, অক্ষয় খান্না, আর মাধবন, অর্জুন রামপাল এবং সারা অর্জুন ছবিতে তাঁদের অভিনয়ের মাধ্যমে চরিত্রগুলিকে আরও জীবন্ত করে তুলেছেন। ২৮০ কোটি টাকার বাজেটে তৈরি হয়েছে ‘ধুরন্ধর’।
3
10
‘ধুরন্ধর’ ছবিতে রণবীরের চরিত্র নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা নানা তত্ত্ব খাঁড়া করেছেন। ভক্তদের অনুমান, তিনি মেজর মোহিত শর্মার ভূমিকায় অভিনয় করছেন। যিনি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে গোপন অভিযানের জন্য পরিচিত একজন অত্যন্ত সম্মানিত ভারতীয় সেনা আধিকারিক। মেজর শর্মা সীমান্তের ওপারে ‘ইকবাল’ নামে গোপনে কাজ করতেন এবং বেশ কয়েকটি সাহসী অভিযান পরিচালনা করেছেন। যদিও ছবির নির্মাতার এই বিষয়ে এখনও কিছুই খোলসা করেননি।
4
10
১৯৭৮ সালের ১৩ জানুয়ারি হরিয়ানার রোহতকে শ্রী রাজেন্দ্র শর্মা এবং শ্রীমতি সুশীলা শর্মাজির ঘরে জন্মগ্রহণকারী মেজর শর্মা উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে বড় হয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে গাজিয়াবাদের একটি বেসরকারি স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি বা এনডিএ-র পরীক্ষা দেন মোহিত। এর পাশাপাশি, মহারাষ্ট্রের শেগাঁওয়ের শ্রী সন্ত গজানন মহারাজ কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভর্তি হন। কলেজে পড়ার সময়ই এনডিএ-তে যোগদানের ডাক পান।
5
10
ছেলেকে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য পাঠাতে রাজি না হওয়ায়, মেজরের বাবা-মা তাকে এ বিষয়ে কিছু বলেননি, আশা করেছিলেন যে মোহিত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মোহিত তাঁর স্বপ্ন পূরণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছিলেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার এবং প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পূরণ করার পর, তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন।
6
10
অ্যাকাডেমিতে তিনি হাস্যরস ছাড়াও একজন সেনা অফিসারের মতো গুণাবলী এবং সহসৈন্যদের আগলে রাখার ক্ষমতা এবং দক্ষতার জন্যও পরিচিত ছিলেন। এনডিএ মেয়াদকালে, তিনি ইন্ডিয়া স্কোয়াড্রন (ইনজুন)-এর সদস্য ছিলেন এবং তিনি সেরা ক্যাডেটদের একজন ছিলেন। খেলাধুলোতেও যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন তিনি।
7
10
১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি (আইএমএ) থেকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। তাঁকে পঞ্চম ব্যাটালিয়ন দ্য মাদ্রাজে লেফটেন্যান্ট হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তাঁর প্রথম পোস্টিং ছিল হায়দরাবাদে। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৮ আরআর (রাষ্ট্রীয় রাইফেলস)-এর গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ২০০২ সালে বিদ্রোহ দমন অভিযানের অংশ হিসেবে তিনি তাঁর প্রথম বীরত্বপূর্ণ পদক সিওএএসএম (সেনাবাহিনী প্রধান প্রশংসা পদক) লাভ করেন। ২০০৩ সালের জুন মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এলিট ফোর্স ১ প্যারা (এসএফ) -এ যোগদান করেন।
8
10
২০০৪ সালের একটি অভিযানে মোহিত একজন জঙ্গি সেজে হিজবুল মুজাহিদিনের মিশে যান। সেখানে তিনি ছদ্মনাম নিয়েছিলেন ইফতিকার ভাট। প্রায় দু’সপ্তাহ জঙ্গিদের দলে মিশে থেকে তিনি নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। এরপরে সকল জঙ্গিকে নিকেশ করে ভারতে ফিরে আসেন। তাঁকে তাঁর বীরত্বের জন্য পুরস্কৃত করে সেনা। ২০০৫ সালের ১১ ডিসেম্বর মোহিতকে মেজর হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
9
10
২০০৮ সালে কাশ্মীরে চলে যান মোহিত। অনেকের ধারণা সেই সময়ই পাকিস্তানে ঢুকে ‘ইকবাল’ ছদ্মনামে বেশ কিছু গোপন অভিযান পরিচালনা করেন তিনি। ২০০৯ সালের ২১ মার্চ জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা সেক্টরের হাফরুদা বনে জঙ্গিদের সঙ্গে ভারতীয় সেনার সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় মোহিতের। তবে মৃত্যুর আগে চার জঙ্গিকে নিকেশ করেছিলেন তিনি। দুই সতীর্থকেও উদ্ধার করেছিলেন।
10
10
২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি সাধারণ প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন তাঁকে মরণোত্তর অশোক চক্রে ভূষিত করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। এছাড়াও আরও নানা সেনাপদক পেয়েছেন তিনি।