আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভোটার তালিকার বিশেষভাবে নিবিড় সংশোধন বা স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চে এই বিষয়ে একাধিক রিট পিটিশন শুনানি হয়। এই পিটিশনগুলির মাধ্যমে SIR প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এবং এর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে।
পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (PUCL) এবং সাতটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট অভিষেক মনু সিংভি। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদকে ভিত্তি করে এই বিশাল কাঠামোগত প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, যার কোনও আইনি অনুমোদন নেই। তাঁর বক্তব্য, “এটি হচ্ছে একযোগে করা একটি ব্যাপক পদক্ষেপ, যাকে নির্বাচন কমিশন নাকি ৩২৪ অনুচ্ছেদের আওতায় করছে। কিন্তু ৩২৪ কোনওভাবেই তাকে আইন প্রণয়ন বা এভাবে জনগণকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা দেয় না।”
এক্ষেত্রে সিংভির যুক্তির প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনার যুক্তি ধরে এগোলে দেখা যায় নির্বাচন কমিশনের SIR করার কোনও ক্ষমতাই নেই। এটা নিয়মিত সংশোধন নয়। কিন্তু যদি কোনও বিশেষ সংশোধন করা হয়, তবে সেটির যুক্তি অবশ্যই দেখাতে হবে।”
এদিনের শুনানিতে সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিবালও গুরুতর প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “একজন বুথ লেভেল অফিসার (BLO) কি বিচার করতে পারবেন কেউ মানসিকভাবে অসামর্থ্য কি না? এই সিদ্ধান্ত নেওয়া স্কুলশিক্ষক বা অন্য BLO-র কাজ নয়। এই প্রক্রিয়া আইনগতভাবে যুক্তিসঙ্গত নয়।”
বিচারপতি বাগচি মন্তব্য করেন, বেঞ্চকে এখন পরীক্ষা করতে হবে নির্বাচন কমিশনের জারি করা এই নোটিশ সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে অনুমোদিত কি না, নাকি তা আইনবহির্ভূত (ultra vires)।
সিংভি আরও যুক্তি দেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার অধিকার ব্যবহার করে কোনওভাবেই আইন প্রণয়নমূলক কাজ করতে পারে না। “সংবিধানের অধীনে নির্বাচন কমিশন কোনওভাবেই সংসদের তৃতীয় কক্ষ নয়,”— মন্তব্য করেন তিনি।
শুনানিতে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন—“যদি সংসদ বলে কারও মৌলিক অধিকার বাতিল করতে হবে, তবে কি তা সম্ভব?” এর জবাবে সিংভি বলেন, “অবশ্যই না। সংসদও নির্দিষ্ট সীমার বাইরে যেতে পারে না। বহু বছর ধরে নিয়মিত সংশোধন হয়েছে, কিন্তু এখন আচমকা এত বিশাল শ্রেণিবিন্যাস করে নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।”
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রথমবার বিহারে SIR নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। পরে মামলার বিচারাধীন থাকতেই ২৭ অক্টোবর কমিশন এই প্রক্রিয়া তামিলনাডু, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায়ও চালু করে। ইতিমধ্যেই এই তিন রাজ্য থেকেও পৃথক পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে—
২ ডিসেম্বর শুনানি হবে কেরালা SIR মামলায়
৪ ডিসেম্বর তামিলনাডু মামলায়
৯ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ মামলায়
এদিকে বিহারের SIR প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, কারণ সুপ্রিম কোর্ট সে ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দেয়নি। বিজেপি-নেতৃত্বাধীন বিরোধী শক্তির পাশাপাশি সিপিএম, সিপিআই এবং ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের নেতা পি.কে. কুঙ্খালিকুট্টিও এই প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন।
বর্তমানে আদালতের পর্যবেক্ষণ ও পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে চার রাজ্যের রাজনৈতিক দল, ভোটাররা এবং প্রশাসন।
