কয়েক দশক আগেও সমাজের বিশ্বাস ছিল, সাত পাকে বাঁধা পড়লে দুটো মানুষ একে অন্যের কাছে বাঁধা পড়ে যায় আজীবনের মতো। সম্পর্ক যে খাতেই বয়ে যাক, পছন্দ যতই পাল্টাক, সে বাঁধন ছেঁড়ার কথা ভাবতে পারতেন না স্বামী-স্ত্রী কেউই। দাম্পত্যের বাইরে পুরুষ-নারীর বন্ধুত্ব দেখা হতো খারাপ চোখেই। সময় বদলেছে। পাল্টেছে সম্পর্কের সমীকরণ। তার হাত ধরে যেমন প্রেমের ধরন পাল্টেছে, তেমনই বদলে গিয়েছে বিয়ের চেনা সংজ্ঞাও। স্রেফ বিয়ে হয়েছে বলেই যে সব জটিলতা, তিক্ততা মেনে নিয়ে একসঙ্গে জীবন কাটাতেই হবে, তেমনটা আর নয়৷ একইভাবে বিয়ের বাইরে অন্য সম্পর্কগুলোকেও গ্রহণ্যযোগ্যতার খাতায় লিখতে শিখেছে আজকের প্রজন্ম। আর সেই সূত্রেই বাড়ছে 'ওপেন ম্যারেজ'-এর চল। কিন্তু কী এই ওপেন ম্যারেজ? কেমন সেই সম্পর্কের চলন? তা নিয়েই কথা বললেন আইনজীবী রম্যানি ঘোষাল।

খোলা হাওয়ার টান

ওপেন ম্যারেজ। কেমন এই বিয়ের গতিপ্রকৃতি? রম্যানির কথায়, "আজ কাল ‘ওপেন ম্যারেজ’ কথাটা খুব শুনছি আমার কাছে আসা নতুন দম্পতিদের মুখ থেকে। প্রথমেই যেটা বুঝলাম, তা হল এতে স্বামী বা স্ত্রী বিবাহিত সম্পর্কে থাকলেও দু'জন দু'জনের সম্মতিতে অন্য কোনও সম্পর্কে জড়াতেই পারে। তা সে যৌনই হোক বা মানসিক। বেশ অন্য রকম একটা ব্যাপার আধুনিকতায় মোড়া। যদিও ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, এটা খুব নতুন কিছু নয়। পরকীয়া সম্পর্ককেই একটু নতুন ভাবে ভাবা।

লোকে কী বলবে?

বন্ধনহীন বিয়ে। এক সম্পর্কে থেকে অন্য সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়া কি মেনে নিচ্ছে সমাজ? রম্যানি বলছেন, "বিয়ে কী? দুটো মানুষের সামাজিক বন্ধন যাতে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকে। Bertrand Russell তাঁর Mariage And Morals গ্রন্থে লিখেছিলেন- “Marraiage customs have always be a bend of three factors which maybe loosly called instincictive, economic and religius respectevly’। সেভাবে ভাবলে মানুষ তার দীর্ঘ বিবাহিত জীনে তার সঙ্গীর দ্বারা সারা জীবন বাঁধা থাকবে, তা এই যুগে কেন সব যুগেই অসম্ভব। সেই পুরনো যুগ থেকেই মানুষ কখনও একমুখী ছিল না। বহুমুখীই ছিল। কিন্তু সংসারকে ধরে রাখার জন্য সমাজ বিয়েকে একমুখী রাখার বহু প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে। প্রথমে মেয়েদের উপরেই জোর করে সব নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া হত। এবং বলতে খারাপ লাগে, একজন বাচ্চা মেয়ে বিধবা হলে তাকে সমাজ সব অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার জন্য নানাভাবে অত্যাচার করলেও সমাজসিদ্ধ কোনও সম্পর্কে জড়াতে দিত না। এখন আধুনিকতার যুগে মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। বিবাহিত জীবনে থেকে তারা যদি স্ত্রী বা স্বামী থাকলেও পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে মন বা শরীর অন্য কারও থেকে ভরিয়ে এক ছাদের তলায় টিকে থাকতে পারে, ভালই তো।"

আইন, মন, এবং...

রম্যানি অবশ্য মনে করেন, ওপেন ম্যারেজ-এর মধ্যেও কিছু অসুবিধা আছে। তাঁর মতে, "যদিও আইন স্বামী বা স্ত্রীর ব্যক্তিগত জায়গায় নাক গলায় না, তবু ব্যক্তিগত সম্পর্কের দরুণ কোনও সন্তান জন্মালে তার দায়িত্ব কে নেবে? আর যদি মনের কথা বলি, তাহলে তো আরও সমস্যা। সত্যি কি মন এত উদার হতে পারে যে মুক্ত ভাবে তার জীবনসঙ্গী অন্য কারও সঙ্গে মানসিক ও শারীরিকভাবে যুক্ত আছে জেনেও অপরপক্ষ ঈর্ষা বা রাগ করবে না? অধিকারবোধ ফলাবে না? সারাজীবন এক ছাদের তলায় থেকে যেতে পারবে? নাকি এই বিষয়টাও কোনওভাবে ওপরে ওঠার সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে যাবে?

সোজা কথায়, শুধু সামাজিক কারণে একসঙ্গে থাকা যাবে কি না, সময় এর উত্তর দেবে। যুগের চাহিদায় নতুন নতুন কনসেপ্ট আসে, আর আমি বিশ্বাস করি সবগুলোর মধ্যেই ভালোবাসা পাওয়ার চাহিদাটা কমন। একটা বারান্দা যদি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ককে ভাল রাখতে সাহায্য করে মন্দ কী?"